Advertisement
E-Paper

কমিশনের নির্দেশ, তবু বেলাগাম দুষ্কৃতী-রাজ

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরেও দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি যেমন কমেনি, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়নি পুলিশও। ফলে তাণ্ডব চালিয়েও পুলিশের ‘নজর’ এড়িয়ে ছাড়া থাকে অভিযুক্তেরা। উদাহরণ: হাওড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৫
জখম ছবি ধাড়া ও শ্রীকান্ত ধাড়া। হাসপাতালের শয্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

জখম ছবি ধাড়া ও শ্রীকান্ত ধাড়া। হাসপাতালের শয্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরেও দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি যেমন কমেনি, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়নি পুলিশও। ফলে তাণ্ডব চালিয়েও পুলিশের ‘নজর’ এড়িয়ে ছাড়া থাকে অভিযুক্তেরা। উদাহরণ: হাওড়া।

শিবপুর এলাকার মালিবাগানে এক যুবক বাড়ির পাশে চোলাই মদ বিক্রির প্রতিবাদ করায় ১০-১২ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর পরিজনদের বেধড়ক মারধর করে। গত ১৪ তারিখ ওই ঘটনার পরে রাতেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিল ওই পরিবার। কিন্তু অভিযোগ, এক সপ্তাহ কেটে গেলেও বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত নামে এক জন ছাড়া আর কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতারই করেনি পুলিশ। আর অভিযুক্তেরা ধরা না পড়ায় ঘটনার পর থেকেই পাড়া ছাড়া ওই পরিবার।

এখানেই প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশন যখন পুলিশ ও প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া হতে বলেছে এবং নির্বাচনের সময়ে গোলমাল পাকাতে পারে এমন সব দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে নির্দেশ দিয়েছে, তখন এই ঘটনায় পুলিশ কেন বাকি দুষ্কৃতীদের ধরতে ব্যর্থ হল?

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহের যুক্তি, ‘‘বিভিন্ন মামলায় প্রতিদিনই ধড়পাকড় চলছে। এই নির্দিষ্ট ঘটনাটিতেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই ধরা পড়বে দুষ্কৃতীরা।’’

ঘটনার সূত্রপাত চোলাই মদ বিক্রি নিয়ে। হাওড়ার ওই এলাকায় চোলাই মদ বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় চোলাই মদ বিক্রি ও অশালীন কাজকর্ম নিয়ে পুলিশের কাছে বারংবার অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। মাঝে মাঝে ধরপাকড় চললেও পরদিনই আদালত থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসে ফের অবাধে চোলাই বিক্রি করত দুষ্কৃতীরা।

ভোটের ঘণ্টা বাজতেই এই চোলাই মদের ঠেকগুলির উপরে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। প্রতিদিন নির্বাচন সদনে রিপোর্ট পাঠিয়ে রাজ্যকে বলতে হচ্ছে কত সংখ্যক ঠেকে অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে চোলাই মদ। এই যখন অবস্থা, তখন হাওড়ার ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, রিপোর্ট যাচ্ছে রিপোর্টের মতোই, ঠেকগুলিতে এখনও চলছে মদ বিক্রি ও তৈরির রমরমা। যা নিয়ে মালিবাগানের বাসিন্দা সুশান্ত ধাড়া নামে ওই যুবকের সঙ্গে গোলমাল চরমে ওঠে চোলাই বিক্রেতাদের। ওই যুবকের অভিযোগ, পাড়ার অনেকে প্রতিবাদ করলেও চোলাই বিক্রেতারা তাঁকেই টার্গেট করে। কয়েক বার হুমকিও দেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ১৪ তারিখ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই সশস্ত্র দুষ্কৃতীদলটি সুশান্তবাবুর বাড়িতে হামলা চালায়। সুশান্তবাবু জানান, দুষ্কৃতীরা প্রথমে তাঁর দাদা সাগর ধাড়াকে আক্রমণ করে। দাদাকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও লাঠি, রড দিয়ে মারধর করে। এর পরে তাঁর বাবা শ্রীকান্ত ধাড়া ও মা ছবি ধাড়া দুষ্কৃতীদের সামনে এসে রুখে দাঁড়ালে প্রাণ বাঁচাতে দুই ভাই গলির ভিতরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছেলেদের না পেয়ে দুষ্কৃতীরা শ্রীকান্তবাবু ও ছবিদেবীকে মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে সিমেন্টের চাঙড় দিয়ে তাঁদের মাথা-সহ শরীরের নানা জায়াগায় আঘাত করে। এলাকার লোকজন তাঁদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই রাতেই সাগরবাবু শিবপুর থানায় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। সুশান্তবাবু সুস্থ হয়ে ছাড়া পেলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর বাবা-মা।

সুশান্তবাবুর অভিযোগ, পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও খুন হয়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কাতেই বাড়ি ফিরতে পারছেন না তিনি এবং তাঁর দাদা। তিনি বলেন, ‘‘চোলাই মদ বিক্রির প্রতিবাদ করায় আমাকে ও আমার পরিবারকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল ওরা। লুকিয়ে না পড়লে খুন হয়ে যেতাম।’’

assembly election 2016 west bengal election commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy