Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দুই আসনে হেরেও থামেনি চড়াম-চড়াম

বলেছিলেন, ১১-০। হয়েছে ৯-২। তাঁর দাবিমতো অন্তত ৫০ হাজারের ব্যবধানে নয়, দলীয় প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ২৮০ ভোটে— এমন নজিরও হয়েছে জেলায়। ‘মর্যাদার লড়াই’য়ে গিয়েছে নানুর।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

বলেছিলেন, ১১-০। হয়েছে ৯-২। তাঁর দাবিমতো অন্তত ৫০ হাজারের ব্যবধানে নয়, দলীয় প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ২৮০ ভোটে— এমন নজিরও হয়েছে জেলায়। ‘মর্যাদার লড়াই’য়ে গিয়েছে নানুর। ‘দশ আনন’ নিয়ে বীরভূমে দাপিয়েও তাই তাঁর নৈতিক হার হয়েছে, এমন দাবিতে সরব বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধী-বাণ ফুঁয়ে ওড়াচ্ছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ‘কেষ্টদা’র (অনুব্রতর ডাক-নাম) বাড়ির সামনে বৃহস্পতিবার অনেক ক্ষণই ঢাক বেজেছে, ‘চড়াম চড়াম’ বোলে।

বোলপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রতর বাড়িতে এ দিন সকাল থেকে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা লেগেই ছিল। বেলা ১১টা নাগাদ যখন নীল পাঞ্জাবি-সাদা পাজামা পরে বেরোলেন, ‘দাদা’র চোখেমুখে যেন ‘কেমন বসা-বসা’। রাতে কি ঘুম হয়নি? জবাব না দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘাড়ে চেপে অনুব্রত উঠে পড়লেন কালো এসইউভিতে। গাড়ি চলল বোলপুরের পারুলডাঙায় গণনাকেন্দ্রের দিকে। ভিডিওগ্রাফার, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে পিছনে ছুটলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী ঘোষ।

গণনাকেন্দ্রের সামনে গাড়ি থেকে নেমে কর্মীদের কাছে ভোটের খবর নিলেন অনুব্রত। নানুরে দল পিছিয়ে আছে শুনতেই মুখভার হল ‘কেষ্টদা’র। সেখানে আর না থেকে সোজা গাড়িতে উঠলেন। বোলপুর-রামপুরহাট রাস্তায় গাড়ি ছুটল প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে। পথে বাতাসপুর, পরিহারপুর-সহ একাধিক দলীয় কার্যালয়ের সামনে অল্পক্ষণের জন্য গাড়ি থামে। সবুজ আবির ও ঢাকের বোলে কর্মীরা রীতিমতো অভিবাদন জানান জেলা সভাপতিকে।

অনুব্রতর মুখে প্রথম হাসি দেখা গেল দুপুরে রামপুরহাটে পৌঁছে। মহকুমায় দলের পক্ষে ভাল ফলের খবর আসতেই ফিরলেন পরিচিত ভঙ্গিতে। চেয়ার টেনে বসে চুমুক দিলেন লাল চা-য়। সঙ্গে সুগার-ফ্রি বিস্কুট। রামপুরহাট মহকুমার চার আসনের তিনটি—রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই এসেছে তৃণমূলের পকেটে। ‘চোনা’ বলতে মুরারই। সেখানে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ২৮০। হাঁসন জিতেছে জোট। ভোটের আগে বিরোধী এজেন্ট, ভোটারদের ‘ভ্যানিশ’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েও জেলার সব আসন জেতা গেল না? অনুব্রত চুপ।

বেলা ১টা ৩০ নাগাদ অনুব্রতর কনভয় ছুটল সিউড়ির দিকে। পৌঁছতেই ঘিরে ধরলেন কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের সম্মতি দিলেন ঢাক বাজাতে। বিকেলের আগেই জেলায় ন’টি আসনে জেতা নিশ্চিত জেনে সিউড়ির পার্টি অফিস থেকে বেরনোর আগে কর্মীদের আবদারে হাত দিলেন ঢাকের কাঠিতেও। তবে একটু বাদেই ‘কেষ্ট’দা বলেন, ‘‘আর চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজানোর প্রয়োজন নেই। ওদের (বিরোধী জোটের) শ্রাদ্ধ হল। মৃতদের বাড়িতে ঢাক-ঢোল বাজে না। খোল-করতাল বাজে। এ বার সেটাই বাজবে।’’

সন্ধ্যার একটু আগে অনুব্রতর কনভয় বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছতেই ফের বাজল ঢাক ও কাঁসর। সবুজ আবির খেলে শুরু হল মিষ্টিমুখ। ভিতরে ঢুকতেই এক কোণে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখলেন নানুরে হেরে যাওয়া তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরাকে। ‘কেষ্টদা’র সান্ত্বনা, ‘‘মন খারাপ করিস না। যদি বেঁচে থাকি, পাঁচ বছর পরে তুই ফের বিধায়ক হবি।’’ বাইরে তখন ঢাক বাজছে। ‘চড়াম-চড়াম’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE