Advertisement
E-Paper

ফাঁকা বুথেই চড়ছে ভোটের হার

বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ভোট দিতে এসেছিলেন কেশিয়াড়ি বিধানসভার বাসিন্দা থাকমণি খিলা।। লালুয়া পঞ্চায়েতের সুন্দরাড় হাইস্কুলের ১০৯নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তাদের সামনেই বৃদ্ধাকে ঠেলাগাড়ি থেকে নামিয়ে বুথের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৯
ভোট দেবেন কোনখানে। ভোটারদের নকল ইভিএমে সেটাই দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। সোমবার কেশিয়াড়ির নছিপুরে। — রামপ্রসাদ সাউ।

ভোট দেবেন কোনখানে। ভোটারদের নকল ইভিএমে সেটাই দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। সোমবার কেশিয়াড়ির নছিপুরে। — রামপ্রসাদ সাউ।

বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ভোট দিতে এসেছিলেন কেশিয়াড়ি বিধানসভার বাসিন্দা থাকমণি খিলা।। লালুয়া পঞ্চায়েতের সুন্দরাড় হাইস্কুলের ১০৯নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তাদের সামনেই বৃদ্ধাকে ঠেলাগাড়ি থেকে নামিয়ে বুথের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। ওই যুবকই ইভিএমের বোতাম টিপে ভোটটা দিলেন। তারপর বৃদ্ধাকে বললেন, ‘‘ভোট হয়ে গিয়েছে। ঠেলায় উঠে পড়ো।’’

খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওই যুবক হলেন তৃণমূলকর্মী হরিপদ ঘোষ। গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে দেখে কিছুটা থমকালেন তিনি। তারপর সাফাই দিলেন, ‘‘আমার দিদিমা চোখে ভাল দেখতে পান না। তাই আমি ভোটটা দিয়ে দিয়েছি।’’ আপনি চোখে দেখতে পান না? এ বার বৃদ্ধার জবাব, ‘‘এই তো আপনাদের দেখছি।’’

কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ ভোট দিতে অক্ষম হলে প্রিসাইডিং অফিসারকে আলাদা ফর্ম পূরণ করতে হয়। ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অসিতকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, “আমি জল খেতে গিয়েছিলাম। তাই ফর্ম পূরণ করা হয়নি।’’ এ সব নিয়ে কথা বলছি দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট রঞ্জিত গিরি, “সব দলের এজেন্টের সম্মতিতেই ওই বৃদ্ধার ভোটটা হরিপদ ভোট দিয়েছে।’’ এ বার ঘাড় নাড়লেন সিপিএম এজেন্ট অশোক দাস ও বিজেপির এজেন্ট জগন্নাথ বসু। দু’জনেরই বক্তব্য, “ওই যুবক এর আগেও বিধুবালা দাসের ভোট দিয়ে গিয়েছে। আমরা বারণ করছি। কিন্তু প্রিসাইডিং অফিসার অনুমতি দিলে আর কী করার আছে!”

কেশিয়াড়ি জুড়েই বারবার এমন টুকরো টুকরো দৃশ্য চোখে পড়ল। প্রথম ঘণ্টায় বুথে বুথে কিছুটা ভিড় নজরে এলেও ৯টার পরই সব শুনশান। অথচ রোদের তাপ যত বেড়েছে ভোটদানের হারও বেড়েছে লাফিয়ে। যেমন, সাড়ে দশটা নাগাদ বাঘাস্তি পঞ্চায়েতের কুলবনি হাইস্কুলের ৬৯ নম্বর বুথ ছিল পুরো ফাঁকা। অথচ ততক্ষণে প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। আবার নছিপুরের পিরোট হাইস্কুলের ফাঁকা বুথেও বেলা ১২টায় ভোটদানের হার ৫৪ শতাংশ। আর লালুয়া পঞ্চায়েতের পাঁচিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাঁকা বুথে বেলা সাড়ে তিনটেয় পড়ে গিয়েছিল প্রায় ৮৩% ভোট।

অর্থাৎ, ভূতের খেলা দেখা গেল দ্বিতীয় দফার ভোটেও। আর সেই ভূত তাড়ানোর ওঝা যাঁরা, সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের খুব সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে পেলাম না। পথেঘাটে কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ফ্লাইং স্কোয়াড দেখিনি। উল্টে নছিপুরে মোটরবাইক বাহিনী দেখলাম। তাদের পিছনে থাকা সেক্টর অফিসের গাড়িও কিছু করল না। আর বুথে-বুথে সিআরপি, বিএসএফ নয়, ওড়িশা সশস্ত্র পুলিশ ও রেল সুরক্ষা বাহিনী থাকলেও তারই মাঝে ছাপ্পা চলেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ছাপ্পার হচ্ছে শুনে গেলাম দাঁতনের আলিকষা পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩৮ নম্বর বুথে। দেখলাম, বুথ চত্বরেই জওয়ানদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে কয়েকজন যুবক। আর কোনও ভোটার নেই। বন্ধ ভোট প্রক্রিয়া। ক্যামেরা দেখে সকলে শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। যুবকেরা বললেন, ‘‘আমরা ভোটার।’’ প্রিসাইডিং অফিসার সুশান্তকুমার সাহু হেসে বললেন, ‘‘খাওয়াদাওয়া চলছে তো। তাই ভোট বন্ধ রেখেছি।’’ সুশান্তবাবুই জানালেন, বেলা সাড়ে ১২টায় ওই বুথেই ভোট পড়েছে প্রায় ৭৫শতাংশ।

দিনভর কোথাও তেমন বড় অশান্তি, মারধর চোখে পড়ল না। তবে বুথে বুথে এমন ভুতুড়ে কারবার দেখে মনে হল অবাধ-সুষ্ঠু ভোত নেহাতই কথার কথা!

Assembly Election 2016 Fake Votes Midnapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy