Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ভোট মিটতেই ‘চড়াম-চড়াম’

বোমা গুলির লড়াই

ভোট পরবর্তী সংঘর্ষের খবরে আবারও শিরোনামে পাড়ুই!রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত তৃণমূল বনাম জোট এবং বিজেপি-র দফায় দফায় বোমাবাজি, গুলি, মার-পাল্টা মারে জখম হয়েছেন অন্তত ছ’জন। এক জনের কনুইয়ে গুলি লেগেছে। বাকিরা বোমার আঘাতে এবং মারধরে জখম হয়েছেন। আহতেরা প্রত্যেকেই এলাকায় সিপিএম এবং বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত। বহু বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে।

পাড়ুইয়ের ঘটনায় আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিউড়ি হাসপাতালে। ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাড়ুইয়ের ঘটনায় আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিউড়ি হাসপাতালে। ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

ভোট পরবর্তী সংঘর্ষের খবরে আবারও শিরোনামে পাড়ুই!

রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত তৃণমূল বনাম জোট এবং বিজেপি-র দফায় দফায় বোমাবাজি, গুলি, মার-পাল্টা মারে জখম হয়েছেন অন্তত ছ’জন। এক জনের কনুইয়ে গুলি লেগেছে। বাকিরা বোমার আঘাতে এবং মারধরে জখম হয়েছেন। আহতেরা প্রত্যেকেই এলাকায় সিপিএম এবং বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত। বহু বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে।

সোমবার এলাকায় গিয়ে জানা গেল, রাত জুড়ে হামলা চলেছে গ্রামে। শেষ রাতে কোলের ছেলে আবদুল্লাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পাড়ুইয়ের গোরাপাড়ার নাজমন্নিসা বিবি। ঘুম ভাঙে বাইরের কোলাহলে। বোমের আওয়াজে। ছেলেকে কোলে নিয়েই নীচে নামেন। নাজমন্নিসার কথায়, ‘‘দেখি আমার বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে গোটা কয়েক লোক। চলে হামলা। কোল থেকে ছেলেকে নিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। আমার বুকে-পিঠে মারতে থাকে। ভাঙচুর করে বাড়ির ছাদ, বৈঠকখানার চেয়ার, হাড়ি, কড়াইও। ওঁদের একটাই কথা, কেন সিপিএমকে ভোট দিয়েছিস।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোট মিটতেই গোরাপাড়া গ্রামে গণ্ডগোল শুরু হয়। পুলিশের খাতায় গোরাপাড়া শান্ত এলাকা বলেই পরিচিত। সেই এলাকারই ছ’জন ভর্তি সিউড়ি হাসপাতালে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশও দু’জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামে চলছে আধাসেনা ও র‌্যাফের টহলদারি। ঘটনাস্থলে ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

গ্রামের একাধিক যুবকের কথায়, সোমবার ভোট শেষ হতেই গ্রামের সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। দলে ভারি ছিল তৃণমূলের লোকজন। হঠাৎ শোনা যায় বোমার আওয়াজ। আঁধারের মধ্যে চলে মারামারিও। লাঠি-সোটা নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপর হামলা চালায়। প্রতিরোধ করে অন্য পক্ষ। রাতেই রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়। খবর যায় পুলিশেও। কিন্তু, লড়াই থামলেও ভোরে ফের বোমা-গুলির আওয়াজ ভেসে আসে বলেন জানান ওই যুবকেরা। ভোটে সিপিএমের বুথ এজেন্ট আবদুল কাসেম মোল্লার কথায়, ‘‘ভোরে আমাদের সমর্থক একটি ছেলে মাঠে গিয়েছিল। সেই সময় তাঁকে একা পেয়ে গুলি চালায় তৃণমূলের ছেলেরা।’’ ফের শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। পর পর বোম ও গুলি চলে বলে অভিযোগ কাসেমের। তাতে শেখ সইফুদ্দিন বাঁ হাতে চোট পায়। বোমের আঘাতে আহত হন আরও পাঁচ জন। এঁরা হলেন, আনিসুর মোল্লা, বাপি মোল্লা, শেখ হোসেন, বাবর আলি এবং গোলাম মোল্লা।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, গ্রামে আতঙ্কের ছাপ। কেউ বলছেন, আমাদের বাড়িতে আসুন। দেখুন কী ভাবে বোমা ছুড়েছে! কেউ বলছেন, আমার ছেলের গায়ে বোমা লেগেছে। এক মহিলার কথায়, ‘‘ভোটের ফলের আগেই এই হাল হলে, হার-জিতের পর কী হবে?’’

আহত সইফুদ্দিনের দাদার কথায়, ‘‘এ বার আমরা সিপিএমের হয়ে ভোট করেছি। এটাই অপরাধ। তার জন্যে কাল রাত থেকে আমাদের উপর চড়াও হয়েছে ওরা।’’ মহম্মদ তোসিমুদ্দিন জানালেন, রবিবার রাত থেকে তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ঘরের মেয়েদের উপরেও আক্রমণ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে বোমা ছুড়ছে। বোমার আঘাত লেগেছে তোসিমুদ্দিনেরও।

তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ জাফারুল ইসলাম হামলার দায় সিপিএমের উপরে চাপিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “হার নিশ্চিত বুঝেই হামলা চালিয়েছে সিপিএম। হজরতপুর, আমলাডিহিতে কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করেছে ওরা।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মনসা হাঁসদা। তিনি বলেন, “ইলামবাজারের ছোটচক গ্রামে তৃণমূলের ফতোয়া না মেনে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছেন। প্রতিরোধ হচ্ছে বুঝেই হামলা করছে তৃণমূল।’’ একই অভিযোগ বিজেপি-র প্রার্থী তথা জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 tmc bombs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE