Advertisement
১৯ মে ২০২৪

তিন ভাগ সবুজ, এক ভাগ লাল

সবুজের দাপটে মাঝে কিছুটা ভাগ বসিয়েছিল লাল। শুধু সবুজে চিঁড়ে ভিজবে না। তাই ডাক পড়েছিল লালেরও। কিন্তু টানা দেড় মাসের যুদ্ধ শেষে ফল প্রকাশের প্রাক্‌-মুহূর্তে পাল্লা ভারী সেই সবুজেরই। অন্তত বড়বাজারে আবিরের পাইকারি বাজারের রং সেটাই জানান দিচ্ছে।

সবার রঙে। বুধবার, বড়বাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সবার রঙে। বুধবার, বড়বাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

সবুজের দাপটে মাঝে কিছুটা ভাগ বসিয়েছিল লাল। শুধু সবুজে চিঁড়ে ভিজবে না। তাই ডাক পড়েছিল লালেরও। কিন্তু টানা দেড় মাসের যুদ্ধ শেষে ফল প্রকাশের প্রাক্‌-মুহূর্তে পাল্লা ভারী সেই সবুজেরই। অন্তত বড়বাজারে আবিরের পাইকারি বাজারের রং সেটাই জানান দিচ্ছে।

ছবিটা পাল্টে গিয়েছে ভোট-পরবর্তী সমীক্ষার সৌজন্যেই। মাঝে যাঁরা লাল-লাল করে হাঁকডাক শুরু করেছিলেন, তাঁরা ফের মিইয়ে গিয়েছেন। বরং ভোটযন্ত্র খোলার প্রাক্-মুহূর্তে খানিকটা অভাবনীয় ভাবে সবুজেরই বরাত আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের দলের কর্মীদের ফোন আসছে কাছের-দূরের জেলা থেকে। তবু লালকেও একেবারে বাতিল করতে পারছেন না বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে ভোটের ফল নিয়ে রাজ্যবাসীর ঘেঁটে ঘ-দশারই যেন প্রতিফলন দেখছে বড়বাজার।

বুধবার বিকেলে সেটাই বলছিলেন বড়বাজারের আবির কারবারি সমীরণ পাল, হনুমান দাস ভাইয়ারা। তখনও পরপর ফোন আসছে বর্ধমান, হুগলি, রানাঘাট থেকে। জনৈক আবির বিক্রেতা মুচকি হাসলেন, ‘‘কমিশনের গুঁতো খেয়ে পুলিশ ভোটে সক্রিয় ছিল তো! তাই কেউ কেউ আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এগজিট পোল-এর খবর পেয়ে এখন জেগে উঠেছেন।’’ তবে মালদহের ক’জন এসে সবুজ আবির চাইতে কিছুটা সংশয় বড়বাজারের বোর্নফিল্ড সরণির লাগোয়া গলিতে। আবিরের দোকানের কর্মচারীরা পরে বললেন, ‘‘ওরা কংগ্রেস, বুঝলেন? জোট জিতলেও কোথাও কোথাও কিন্তু সবুজ আবিরই খেলা হবে।’’

সব মিলিয়ে পাঁচ বছর আগের অপ্রস্তুত দশা এ বারও ভোলেনি বড়বাজার। সে বার বামফ্রন্টের বিদায় নিশ্চিত বলে নানা ভাবে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিললেও ৩৪ বছরের অভ্যাস বদলানোর স্পর্ধা দেখাতে পারেননি পাইকারি আবির বিক্রেতারা। বেশি মাত্রায় লাল আবিরই মজুত ছিল। শেষ মুহূর্তে কোনও মতে জোড়াতালি দিয়েও সবুজ আবিরের জোগান কুলোনো যায়নি। পাঁচ বছর আগের বিধানসভা ভোটের শিক্ষা এবং তার পরে এ রাজ্যের বিভিন্ন ভোটের গতিপ্রকৃতি মেনে চলেই এ বারের বিধানসভা ভোটের জন্য তৈরি হচ্ছিল বড়বাজার। অতি বড় আশাবাদীও তখন বামেদের উদ্‌যাপনের রং লাল আবিরকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু মাস দেড়েক আগে দফায় দফায় বিধানসভা ভোট শুরুর পরেই বড়বাজারও নিজেকে পাল্টাতে শুরু করে। তৃণমূল-বিরোধী জোটের পক্ষে উৎসাহের আঁচও এসে পড়তে শুরু আবির মহল্লায়।

আবির ব্যবসায়ী সমীরণবাবু বলছিলেন, ‘‘৩০০ বস্তার মধ্যে আগে লালের জন্য বড়জোর টেন পার্সেন্ট ধরেছিলাম। মানে, সাকুল্যে ৩০টা বস্তা। তার পরে ভোটের হাল দেখে মনে হতে শুরু করে, বিরোধী ভোটের হারও নেহাত কম নয়।’’ আবির বাজারের নয়া সমীকরণে, তখন বাড়তি লাল আবির বরাত দেওয়া হতে থাকে। প্রতি ৩০০ বস্তায় ১০০ বস্তা লাল আবির রাখার সিদ্ধান্ত নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। মাঝে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরাও চুপসে গিয়েছিলেন। এগজিট পোল-এর ভবিষ্যৎদ্বাণী নিয়ে সংশয় থাকলেও শেষবেলায় কিন্তু সবুজ আবিরের চাহিদা ফের মালুম হচ্ছে। আবির ব্যবসায়ী বাবুলাল ম্যানটের হিসেব, ‘‘এ বার হাজার কেজি সবুজ আবির বিক্রি করেছি। লাল আবির মোটে ১০০ কেজি।’’

রং নিয়ে জল্পনার আবহেই সমীরণবাবুর দোকানে হাজির ভবানীপুরের এক ক্রেতা। পাঁচ কেজি করে তিন বস্তা লাল আবির নিয়ে গেলেন তিনি। বলে গেলেন, জোটপ্রার্থী দীপা দাসমুন্সি জিতলে তাঁর কপালে একটু লাল আবিরই দেবেন বাম সমর্থকেরা।

লাল-সবুজের যুদ্ধে অঘটনের রঙের প্রতি আমবাঙালির বিশ্বাস ফিকে হয়নি এখনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Gulal TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE