Advertisement
E-Paper

লাল-সবুজ ভুলে প্রচারে রংমিলান্তি

দুয়ারে নির্বাচন এলে প্রার্থীরা তাই ওঁত পেতে থাকেন এক আধটা নির্ভেজাল ছুটি কিংবা সপ্তাহান্তে রোববারের জন্য। যেখানে সাতসকালেই রোদ্দুরের আঁচ এড়িয়ে মাটির কাছাকাছি নেমে ‘হেঁ হেঁ...ভাল আছেন তো’ গোছের আন্তরিকতা নিয়ে প্রার্থীরা হাজিরা দেন সটান ভোট-বাজারে।

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
রঙ খেলায় মেতেছেন বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডান দিকে, প্রচারে বেরিয়ে আবির খেললেন কৃষ্ণনগর উত্তরের কংগ্রেস প্রার্থী অসীম সাহা। — গৌতম প্রামাণিক, সুদীপ ভট্টাচার্য

রঙ খেলায় মেতেছেন বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডান দিকে, প্রচারে বেরিয়ে আবির খেললেন কৃষ্ণনগর উত্তরের কংগ্রেস প্রার্থী অসীম সাহা। — গৌতম প্রামাণিক, সুদীপ ভট্টাচার্য

চৈতি-ভোটে রোদ্দুর বড় বালাই।

দুয়ারে নির্বাচন এলে প্রার্থীরা তাই ওঁত পেতে থাকেন এক আধটা নির্ভেজাল ছুটি কিংবা সপ্তাহান্তে রোববারের জন্য। যেখানে সাতসকালেই রোদ্দুরের আঁচ এড়িয়ে মাটির কাছাকাছি নেমে ‘হেঁ হেঁ...ভাল আছেন তো’ গোছের আন্তরিকতা নিয়ে প্রার্থীরা হাজিরা দেন সটান ভোট-বাজারে।

রোববারের সেই সকালের মতোই এ বারের নির্বাচনে তাঁদের উপরি পাওনা দোল ও হোলি। যে সকালে লাল-গেরুয়া-সবুজের তোয়াক্কা না করে তাঁরা সটান বাড়িয়ে দিলেন গাল-মাথা— ‘মাখান না, কী আছে, বসন্তোৎসব তো...।’

রোদ্দুরের মতোই দোলের আড়ালে মিলেমিশে এক হয়ে গেল প্রার্থী আর ভোটারের দূরত্বও। বুধবার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থী সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। নেতা-কর্মীদের কথায়, ‘‘জনসংযোগ বাড়াতে ভোটের মুখে এমন উৎসব পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো। এই দিনটিকে কেউ হাতছাড়া করে নাকি!’’

ফলে কেউ সটান চলে গেলেন উৎসব প্রাঙ্গণে। কেউ মিশে গেলেন পরিক্রমায়। রবিঠাকুরের গানে কচিকাঁচাদের সঙ্গে পা-ও মেলালেন কেউ কেউ। এ দিন গায়ে নীল রঙের পাঞ্জাবি চাপিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রানাঘাটের (দক্ষিণ) তৃণমূল প্রার্থী আবিররঞ্জন বিশ্বাস। হিজুলির বরেন্দ্রনগরে প্রভাতফেরি, গাংনাপুরে দেবগ্রামে বসন্ত উৎসবে পথ পরিক্রমা সেরে সোজা আঁইশমালী, কুপার্স। রং
কিংবা আবিরে না করেননি একবারও। তিনি নিজে অবশ্য গাংনাপুরে ভেষজ আবির কিনেছিলেন। নাহ্, অন্য রং থাকলেও লাল ছিল না। কিন্তু বেলাশেষে যখন তিনি বাড়ি
ফিরলেন, গায়ে-মুখে লাল-সবুজ একাকার। আপনার নাকি লালে অ্যালার্জি রয়েছে? ‘‘কী যে বলেন মশাই! উৎসবের আবার আলাদা কোনও রং হয় নাকি?’’ হাসছেন আবিরবাবু।

শান্তিপুরের রাষ্ট্রীয় উদ্যানে আয়োজিত বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে। সেখান থেকে এলাকার বেশ কিছু অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন। রং মেখেছেন। মাখিয়েছেন। বেলার দিকে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সৌমেন মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাষ্ট্রীয় উদ্যানে গিয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্যও। বেরিয়ে আসার সময় সৌমেনবাবুর মাথায় গেরুয়া আবির। নীল আবির লেপ্টে রয়েছে অরিন্দমবাবুর মাথায়। দুধসাদা পাঞ্জাবি পরে প্রচারে বেরিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের (উত্তর) কংগ্রেস প্রার্থী অসীম সাহা। যখন বাড়ি ফিরলেন পাঞ্জাবি ও মুখে লাল-সবুজ মিলেমিশে একাকার।

নবদ্বীপের সিপিএম প্রার্থী সুমিত বিশ্বাস প্রায় সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছেন মায়াপুরে। পথচলতি মানুষ তাঁকে রাঙিয়ে দিয়েছে রংবেরঙের আবীরে। সবুজ-গেরুয়ায় মাখামাখি? সুমিতবাবু বলছেন, ‘‘দোল আমাদের কাছে মিলন উৎসব। সব রং মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে তবেই তো উৎসব সার্থক।’’ ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বুধ ও বৃহস্পতিবার দিনভর ব্যস্ত থাকলেন নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ সেতুতে প্রসাদ বিতরণে। তাঁর কথায়, ‘‘সবাইকে বলে দিয়েছি, দোলের এই দু’দিন এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রচার পরে হবে।’’ যা শুনে তৃণমূলেরই কিছু লোকজন বলছেন, ‘‘এটাও কিন্তু নন্দদার বড় জনসংযোগ।’’

এ দিন শক্তিপুর এলাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় দোল উৎসবে মেতেছিলেন রেজিনগরের নির্দল প্রার্থী হুমায়ুন কবীরও। বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী ও তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই বুধবারটা কাটালেন এক্কেবারে উৎসবের মেজাজে। ধোপদুরস্ত সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে মনোজবাবু বাড়ি থেকে বেরোতেই দেখেন পাড়ার কচিকাঁচারা বালতিতে রঙ গুলে পিচকারি হাতে তৈরি। মনোজবাবু হাসতে হাসতে তাঁদের দিকে দু-পা এগিয়ে যেতেই পিচকারির রঙে সাদা পাঞ্জাবি টকটকে লাল। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘বহরমপুরের জোট প্রার্থী আমি। লাল রঙে আপত্তি থাকবে কেন?’’ সুজাতাদেবীও এ দিন মহিলাদের সঙ্গে আবির খেলেছেন। তবে তাঁকে দেখা গিয়েছে সবুজ শাড়ি ও সবুজ আবিরেই। অন্য রং কি একেবারেই না-পসন্দ? সুজাতাদেবী বলছেন, ‘‘না, না, তা কেন? সবুজ প্রকৃতির রং। আমারও প্রিয়। তবে অন্য রঙেও আপত্তি নেই।’’

মেলাল, ভোট মেলাল!

(সহ প্রতিবেদন— দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়)

join campaign colours
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy