একদিকে বিরোধী জোটের ধাক্কা, অন্য দিকে নারদ হুল!
‘নিরাপদ’ হুগলি জেলাও এখন আর নিরাপদ ঠেকছে না রাজ্যের শাসক দলের কাছে!
চলতি সপ্তাহে সোমবার পাণ্ডুয়া দিয়ে জেলায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের শনিবার তিনি জেলায় প্রচারে আসছেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে সে দিন মমতা আরামবাগ-সহ চার কেন্দ্রে প্রচার করবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘দিদি’ ওই দিন দুপুর ২টোয় খানাকুল থেকে প্রচার শুরু করবেন। তার পরে আরামবাগ, চণ্ডীতলা হয়ে চাঁপদানিতে প্রচার শেষ করবেন।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে ভোটের ময়দানে শাসক দলের কাছে হুগলি অন্যতম ‘নিরাপদ’ জেলা হিসেবেই এতদিন চিহ্নিত হয়ে এসেছে। বিগত ভোটগুলির পরিসংখ্যানই তৃণমূলকে সেই নিশ্চয়তা জুগিয়েছে। ঘাসফুলের দাপটে এক সময়ের ‘বাম দুর্গ’ হুগলিতে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু এ বার বিরোধী জোটের হাওয়া এবং নারদ-কাণ্ড নিয়ে যে শোরগোল পড়েছে, তাতে দলনেত্রী হুগলির ১৮টি আসনেই জয় নিয়ে আর নিশ্চিত হতে পারছেন না বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব স্বীকার করেছেন। তাই তিনি প্রচারে জোর বাড়াচ্ছেন।
হুগলিতে ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টিতে জিতেছিল বামেরা। গোঘাট এবং পাণ্ডুয়া। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল পিছিয়েছিল শুধু গোঘাটে। তার পরে দু’বছর কেটে গিয়েছে। সারদা থেকে নারদ, উড়ালপুল বিপর্যয় থেকে সিন্ডিকেট— একের পর এক ঘটনায় বিদ্ধ হয়েছে শাসক দল। তা ছাড়া এই দু’বছরে তারা এমন কিছু করে দেখাতে পারেনি, যাতে ভোটের ময়দানে ফয়দা তোলা যায়— এই বলে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। তাই বিরুদ্ধ-প্রচার ঠেকাতে দলনেত্রী মরিয়া বলে জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই মনে করছেন।
শনিবারের সভার জন্য মমতা হুগলির সেই সব আসনকেই বেছেছেন, যেখানে কিছুটা হলেও সমস্যায় রয়েছে তাঁর দল। পাণ্ডুয়া-বলাগড়ের জন্য তিনি ইতিমধ্যেই প্রচার সেরে ফেলেছেন। নারদ নিয়ে খানাকুলে তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে কিছুদিন ধরেই সরব বিরোধীরা। এই গ্রামীণ বিধানসভা এলাকায় সাধারণ মানুষের ফিসফিসানিও থেমে নেই। তা ছাড়া, দলেরই একাংশ ঘোরতর বিরোধী ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে। বিরুদ্ধ পরিস্থিতি বুঝে তাঁরাও এখন সক্রিয়। ইকবালের বিরুদ্ধে বিরোধী জোটও প্রচারের মাত্রা চড়িয়েছে। যদিও ইকবাল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই আবহেই মমতা প্রচারের জন্য খানাকুলকে বেছেছেন বলে মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
হুগলিতে প্রার্থী নিয়ে মমতার দুশ্চিন্তা অবশ্য শুধু খানাকুলেই থেমে নেই। ঠারেঠোরে জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই মানছেন, চণ্ডীতলাকেও প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে আকচা-আকচি চরমে। প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ, সভা কিছুই ঠেকানো যায়নি। বিধায়কের কাজকর্ম নিয়ে রয়েছে প্রশ্নও। আর তা অক্সিজেন জোগাচ্ছে বিরোধীদের। বিষয়টি অজানা নয় দলনেত্রীর। একই কথা প্রযোজ্য চাঁপদানির প্রার্থী মুজফ্ফর খানকে নিয়েও। কিন্তু এখানে মমতার মাথাব্যথা বেশি জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানকে নিয়ে।
সারদা থেকে নারদ— প্রতিটি ঘটনাতেই মান্নান তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে বেআব্রু করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। তার উপরে তৃণমূলের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ তলে তলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ওই কেন্দ্রের মধ্যে বৈদ্যবাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন মজবুত। সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায় নিজে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন মান্নানের প্রচারে। ফলে, এ বার চাঁপদানি তৃণমূলের পক্ষে কঠিন ঠাঁই। দলের জেলা নেতাদের কাছে মমতার কড়া বার্তা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে যে— ‘কোনও ভাবেই চাঁপদানিতে মান্নানকে জিততে দেওয়া যাবে না’। তুলনায় মমতা কিছুটা চিন্তামুক্ত আরামবাগ কেন্দ্র নিয়ে।
মমতা প্রচারের পালে হাওয়া তুলতে চাইলেও বিরোধীরা বলছেন, এ সব করেও তিনি শেষরক্ষা করতে পারবেন না। ওই চারের বাইরেও অনেক আসন তৃণমূলকে ভোগাবে। সিঙ্গুর-তারকেশ্বর-চন্দননগরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, উত্তরপাড়ায় বিদায়ী বিধায়ক অনুপ ঘোষালের কাজকর্ম— পাল্টে দিতে পারে অনেক হিসেব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy