Advertisement
E-Paper

নির্দল হয়েই দাঁড়াতে হবে, আর্জি কর্মীদের

জোটের বাধায় আগাম ঘোষণা করেও কংগ্রেস প্রার্থী করেনি তাঁকে। আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বামেদের। রবিবার ধুলিয়ানে সেই কংগ্রেস নেতা বিড়ি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের বাড়িতে দুপুর থেকেই ধর্নায় বসলেন প্রায় হাজার খানেক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৪
খলিলুরকে ঘিরে ধর্না। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

খলিলুরকে ঘিরে ধর্না। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

জোটের বাধায় আগাম ঘোষণা করেও কংগ্রেস প্রার্থী করেনি তাঁকে। আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বামেদের। রবিবার ধুলিয়ানে সেই কংগ্রেস নেতা বিড়ি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের বাড়িতে দুপুর থেকেই ধর্নায় বসলেন প্রায় হাজার খানেক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক। দাবি একটাই— কংগ্রেস টিকিট না দিক, নির্দল হয়েই সমশেরগঞ্জ থেকে লড়তে হবে তাঁকে।

৫৮ বছর বয়সি খলিলুর অবশ্য এই প্রস্তাবে রাজি নন। তাঁর পরিবারেরও বক্তব্য, বেঙ্গালুরু থেকে বাইপাস সার্জারি করে সবে শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন খলিলুর। তিনি অসুস্থ। তবু নাছোড় নেতারা। তাঁদের দাবিতে শেষমেশ দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনা হয় খলিলুরকে। মিনিট ১৫ কথা বলে ভেবে দেখার জন্য এক দিন সময় চেয়ে নেন তিনি। তাঁর এই আশ্বাসের পর দুপুর ৩টে থেকে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে চলা ধর্না তুলে নেন কংগ্রেস কর্মীরা।

তাঁদের অভিযোগ, গত ২৭ ডিসেম্বর অধীর চৌধুরী নিজে ধুলিয়ানে এক সভায় বলে যান, সামসেরগঞ্জে দলের অভিভাবক হিসেবে আজ থেকে কাজ করবেন খলিলুর রহমান (যদিও সরাসরি সামশেরগঞ্জ বিধানসভা আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি)। তিনিই দলের প্রতিনিধি। তাঁর সঙ্গে থেকে কংগ্রেস কর্মীরা লড়াই করবে সামশেরগঞ্জে।

সে দিনের এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে এআইসিসির সর্বভারতীয় সম্পাদক ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বলেছিলেন কংগ্রেসে এ ভাবে অগ্রিম কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা যায় না। কিন্তু জেলা কংগ্রেস ইতিমধ্যেই প্রার্থী হিসেবে যে ক’জনের নাম ঠিক করেছে, সমশেরগঞ্জে খলিলুর রহমান তাঁর অন্যতম। তাঁকে প্রার্থী করে তখন থেকেই ভোটের প্রচারে কর্মীদের নেমে পড়ার জন্যই অধীরবাবু ওই দিন একথা ঘোষণা করেছেন।

সে দিনের দুই নেতার ওই ঘোষণা সত্ত্বেও আজ তার নড়চড় হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। এ দিনের ধর্ণায় হাজির কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য আনারুল হক বলেন, “ দু মাস আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিজে প্রকাশ্য সভা করে ধুলিয়ানে ঘোষণা করে যান কংগ্রেসের অভিভাবক হিসেবে সামশেরগঞ্জে কাজ করবেন খলিলুর রহমান। তাকে সামশেরগঞ্জ থেকে দল যে মনোনয়ন দেবে জানিয়ে যান তাও । কিন্তু এখন জোটের দোহাই দিয়ে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। কংগ্রেসের কর্মীরা এটা মেনে নিতে পারছেন না।”

পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুজিত প্রসাদ বলছেন, “নেতারা বলছেন এটা মানুষের জোট, মানুষের স্বার্থে জোট। তাহলে সামশেরগঞ্জের আপামর সাধারণ মানুষ চান খলিলুর রহমানকে। দল মনোনয়ন না দিলে নির্দলীয় হিসেবে তিনি দাঁড়ান এটাই চাই আমরা।”

কংগ্রেসের ব্লক সম্পাদক সইদুল শেখের কথায়, “বহু আশা করেছিলেন এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা। পাড়ায় পাড়ায় প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জোটের জটে আমরা আশাহত।” চাচন্ড পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, “আমার অঞ্চলে ১৯টি বুথ। প্রতিটি বুথে সভা করে পরিকল্পনা করে সবে দেওয়াল ঘেরা শেষ করেছি। তার পরই শুনলাম খলিলুর রহমানকে প্রার্থী করা হচ্ছে না। এটা মেনে নিতে পারছে না দলের কোনও কর্মী। তাই সকলেই এসেছেন তার বাড়ির সামনের এই ধর্ণায়। ”

ধর্ণায় সামিল ছিলেন ধুলিয়ান পুরসভার দুই কাউন্সিলর হাসেন সেখ এবং আনোয়ার হোসেনও। তাঁদের কথা, “খলিলুর রহমানকে ধুলিয়ানের কংগ্রেস কর্মীরা তাঁকে অভিভাবকের মতো মনে করেন। তিনি অসুস্থ। তবু আমরা এসেছি। তাঁকে যে ভাবেই হোক নির্বাচনে দাঁড়াতেই হবে।”

বাড়ির সামনে এ দিনের ধর্ণায় তার অসুস্থতার কথা চিন্তা করেই মাইক আনা হয়নি। কর্মীদের দাবি ছিল কর্মীদের সামনে এসে নির্বাচনে দাঁড়াবার আশ্বাস দিতে হবে তাঁকে। একের পর এক কর্মীরা বক্তব্য রেখেছেন খালি গলায়। এ দিন খলিলুর ছিলেন বাড়ির দোতলায়। শেষ পর্যন্ত খলিলুর তাঁদের কথা রেখে ছেলে ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নীচে নেমে আসেন।

তার জন্য এত মানুষের ভালবাসা দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, “মানুষ যে এ ভাবে আমার জন্য চিন্তা করেছেন, দোয়া করে সুস্থতা কামনা করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা নেই।” নির্বাচনে দাঁড়াবার ব্যাপারেও প্রথমে আপত্তি করেন তিনি। কিন্তু হাজারও সমর্থকের চিৎকারে চাপা পড়ে যায় তাঁর আপত্তি। শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন,“ আমি একদিন সময় চাইছি । আমি কংগ্রেসের পদস্থ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।” তাতেও আপত্তি তোলেন বহু কর্মী, সমর্থক। তাদের মতে, নেতারা জোটের কথা বলে তাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে আপত্তি করবেন। কাজেই তাকে এখনই রাজি হয়ে বলতে হবে দল মনোনয়ন না দিলে নির্দলীয় হিসেবে দাঁড়াবেন তিনি। মানুষের জোটের প্রার্থী হবেন তিনি।

তিনি সকলের কথা শোনার পর বলেন, “আমি আপনাদের দাবিকে সম্মান জানিয়েই বলছি সোমবার আসুন। আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাব।” অসুস্থ খলিলুরের মুখের দিকে চেয়ে আর কথা বাড়াননি কেউ।

indepedently contest aassembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy