Advertisement
১০ মে ২০২৪

জয়ের আবহেই গৃহযুদ্ধ তৃণমূলে, অফিস দখল

ভোটের আগেই বিরোধীদের জন্য চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজিয়ে বিনোদনের ঘোষণা করেছিলেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ভোটের ফলের পরে সেই ঢাকের কাঠি যে নিজেদের পিঠেই বাজবে, তা অনুমান করতে পারেননি শাসক দলের কর্মীরা।

বিজয়ের সাজ। শুক্রবার কাঁকুড়গাছিতে ছবিটি তুলেছেন সুমন বল্লভ।

বিজয়ের সাজ। শুক্রবার কাঁকুড়গাছিতে ছবিটি তুলেছেন সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:৩৮
Share: Save:

ভোটের আগেই বিরোধীদের জন্য চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজিয়ে বিনোদনের ঘোষণা করেছিলেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ভোটের ফলের পরে সেই ঢাকের কাঠি যে নিজেদের পিঠেই বাজবে, তা অনুমান করতে পারেননি শাসক দলের কর্মীরা।

অভিযোগ উঠেছে, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা এলাকায় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অনুগামীদের উপরে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি, দলীয় অফিসও দখল করা হয়েছে। অভিযোগের তির নিউ টাউনে জয়ী প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের দিকে।

যদিও এই প্রসঙ্গে সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘কাকলিদি আর আমি একসঙ্গেই আজ কালীঘাটে দলনেত্রীর বাড়িতে ছিলাম। এই ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এলাকায় শান্তি রয়েছে। এ সব সংবাদমাধ্যমের বানানো খবর।’’ সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁকে মোবাইলে ফোন করা হলে এক বারও সাড়া মেলেনি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোটের ফল ঘোষণার পরেই রাজারহাট, সল্টলেকের একাধিক জায়গায় দফায় দফায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে শুলংগুড়িতে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অনুগামী বলে পরিচিত জ্যাংরা হাতিয়ারা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের দিলীপ ঘোষকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সব্যসাচী বাহিনীর বিরুদ্ধে।

দিলীপবাবুর দাবি, এ দিন সকালে চায়ের দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক যুবক তাঁকে মারধর করে। তাতে তাঁর চশমা ভেঙে যায়। চশমা সারিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিলেন। তার কিছু পরেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিবু গায়েনের নেতৃত্বে একটি বিজয় মিছিল তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। মিছিল থেকে ২০-২৫ জন যুবক বাড়িতে ঢুকে ইনভারটার ভেঙে দেয়, দু’টি ঘরের জানলার কাচ এবং ঘরের তালা ভেঙে দেয়। কোনও মতে ঘরের একটি অংশে লুকিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন বলে দাবি তাঁর।

দিলীপবাবুর অভিযোগ, নির্বাচনের কাজে তাঁকে নেয়নি ওঁরা। ফলে তাঁর কাজ করার পায় ছিল না। এলাকায় দলের ফল খারাপ হওয়ায় ওঁদের মনে হয়েছে যে, তিনি অন্তর্ঘাত করেছেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘‘এত বছর ধরে দল করছি। তার পুরস্কার পেলাম আজ। বাড়ি ভাঙুচর করেছে। প্রাণে মারার হুমকিও দিয়ে গিয়েছে।’’ যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূল নেতা শিবু গায়েনের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই লোকটা একটা প্রতারক। পাওনাদারেরা মেরেছে। এর মধ্যে আমাদের দলের কেউ নেই।’’

তবে শুধু দিলীপবাবুই নন, বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকলি অনুগামী আরও এক মহিলা কর্মী কাজল দাস এবং তাঁর দলবলের উপরে চড়াও হয় সব্যসাচীর অনুগামীরা বলে অভিযোগ। যাত্রাগাছিতে কাকলি অনুগামীদের একটি দলীয় অফিস দখলেরও অভিযোগ উঠেছে। রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের অনুগামীদের মধ্যে বিবাদের অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে একাধিক বার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, ভোটে শাসক দলের বিপুল জয়ের পরেও সেই বিবাদ বন্ধ হওয়া তো দূর অস্ত্, বরং দু’পক্ষের মধ্যে আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রাজারহাট-নিউ টাউনে ভোটের আশানুরূপ ফল না হওয়ার কারণেই গোলমাল হয় বলে দাবি বাসিন্দাদের। যদিও ভোটের অঙ্কে সব্যসাচীবাবুর জয়ের ব্যবধান এ বার বেড়েছে। তবে ভোটের আগে তিনি যে দাবি করেছিলেন, তত ভোটও পাননি। সব্যসাচীবাবুর অনুগামীদের একাংশের দাবি, সিপিএম, রাজ্য পুলিশের একাংশ ও দলের একাংশ গোপনে হাত মিলিয়েছিল। ফলে একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ফল বেরোলে যে এর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে, সে আশঙ্কা এলাকার অনেকের মধ্যেই ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE