Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কাজল-ই কাঁটা, বোঝালেন বক্সী

বছর পাঁচেক বন্ধ থাকা দু’টি দলীয় কার্যালয় খুলে আগে চমকে দিয়েছিল সিপিএম। এলাকায় বামেদের সাম্প্রতিক বিশাল মিছিল কপালে ভাঁজ ফেলেছিল তৃণমূলের। সেই ভাঁজ চওড়া হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) ছেড়ে গোটা ছাত্র সংসদের এসএফআইয়ে যোগ দেওয়ায়।

নানুরে প্রচার সভায় তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সী ও অনুব্রত মণ্ডল।  — সোমনাথ মুস্তাফি।

নানুরে প্রচার সভায় তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সী ও অনুব্রত মণ্ডল। — সোমনাথ মুস্তাফি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

বছর পাঁচেক বন্ধ থাকা দু’টি দলীয় কার্যালয় খুলে আগে চমকে দিয়েছিল সিপিএম। এলাকায় বামেদের সাম্প্রতিক বিশাল মিছিল কপালে ভাঁজ ফেলেছিল তৃণমূলের। সেই ভাঁজ চওড়া হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) ছেড়ে গোটা ছাত্র সংসদের এসএফআইয়ে যোগ দেওয়ায়।

ভোটের মুখে বিরোধী শক্তির ক্রমাগত উত্থান দেখে সক্রিয় হল তৃণমূল নেতৃত্ব। একের পর এক ‘অস্বস্তিকর’ ঘটনার কেন্দ্রস্থল নানুরে বুধবার জনসভা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সী। তিনি আগাগোড়া সমালোচনা করে গেলেন বাম-কংগ্রেসের গাঁটছড়াকে। সেই প্রসঙ্গেই সরাসরি নাম না করলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখের নাম।

নানুরে জোটের একের পর এক সফল কর্মসূচির পিছনে এই কাজলেরই ‘হস্তক্ষেপ’ দেখছেন তৃণমূলের কিছু নেতা। এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘সুব্রতবাবু এই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতার নাম নিলেন না ঠিকই। কিন্তু কৌশলে বুঝিয়ে দিলেন লক্ষ্য আসলে কে!’’

এ দিন নানুরের খুজুটিপাড়ায় গদাধর হাজরার সমর্থনে সভায় এসে মশকরা করে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘চাষি অনেক কষ্টে ধান ফলিয়ে খামারে শুকিয়ে গোলায় তোলে। দু’একটি কাক সেখান থেকে কিছু ধান খেতে খেতে মনে করে গোলাটাই শেষ করে দেব। চাষিরা কাকগুলিকে তাড়িয়ে দেয়। এখানেও কেউ কেউ ওই কাকের মতোই ভাবছেন আমাদের ক্ষতি করে দেব। কিন্তু কিছুই হবে না...।’’

সুব্রতবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কাজলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁর এক অনুগামীর কটাক্ষ, ‘‘সুব্রতবাবু একটু ভুল বলেছেন। গোলায় ওঠার পরে কাকের আর ধান খাওয়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু ইঁদুরে গর্ত করে তলায় তলায় সেই ধান নামিয়ে নেয়। চাষি টেরও পায় না। দরকারের সময় (পড়ুন ভোট) ধান বের করতে গিয়ে চাষিই বরং দেখেন গোলা ফাঁকা! বেশিরভাগই ধানই তো গর্ত করে নামিয়ে দিয়েছে ইঁদুর!’’

দলের শক্ত ঘাঁটির একের পর এক ইট ধসে পড়তে দেখে তৃণমূল শিবির যে বিব্রত সে ইঙ্গিত মিলেছে এলাকার বিদায়ী বিদায়ক তথা প্রার্থী গদাধরের বক্তব্যে। তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে নানুরের খুজুটিপাড়ায়। গদাধরের কাছে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন ছিল— সে কারণেই কি দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সবা খুজুটপাড়ায় করা হল? দৃশ্যত ক্ষুব্ধ গদাধরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা কোথায় সভা করব না করব, তা কি সংবাদমাধ্যম ঠিক করে দেবে?’’ যা শুনে জেলা সিপিএমের এক নেতা বলছেন, ‘‘ওই ক্ষোভ বুঝিয়ে দিচ্ছে নানুরে স্বস্তিতে নেই তৃণমূল।’’

এ দিনের সভায় গদাধর ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ প্রমুখ। তৃণমূল নেতাদের দাবি সভায় লোক হয়েছিল ১০ হাজারের বেশি। তবে পুলিশের হিসাবে হাজার পাঁচেকের কাছাকাছি লোক হয়েছিল। আর বিরোধীদের দাবি, মেরেকেটে লোক হয়েছিল হাজার তিনেক!

নানুরে পরে দুবরাজপুরের লোবার পলাশডাঙায় সভা করেন সুব্রতবাবু। সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে সভা শুরুর কারণে অনেকেই বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি দেরিতে আসার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই দলীয় প্রার্থী নরেশচন্দ্র বাউরির সমর্থনে সভা করতে এসেছি।’’ সভায় রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন তৃণমূলের অন্যতম এই শীর্ষনেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Subrata Bakshi Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE