Advertisement
E-Paper

‘চাষ’ করতে বাস বদলে জুড়ি নেই রাজার

যেখানে বাস, সেখানেই চাষ। এই তত্ত্বেই বিশ্বাসী হালিশহরের রাজা! গঙ্গাপাড়ের এই ছোট্ট মফস্সলে না হলে রাজা দত্তের দু’টি বাড়ি, তিনটি ভাড়া-বাড়ি! একটি বাড়ি রয়েছে রামপ্রসাদের ভিটের কাছে। অন্যটি গোদাবরী মাঠ সংলগ্ন। তবে, বেনামে।

বিতান ভট্টাচার্য ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:১৮
রাজা দত্ত

রাজা দত্ত

যেখানে বাস, সেখানেই চাষ। এই তত্ত্বেই বিশ্বাসী হালিশহরের রাজা!

গঙ্গাপাড়ের এই ছোট্ট মফস্সলে না হলে রাজা দত্তের দু’টি বাড়ি, তিনটি ভাড়া-বাড়ি!

একটি বাড়ি রয়েছে রামপ্রসাদের ভিটের কাছে। অন্যটি গোদাবরী মাঠ সংলগ্ন। তবে, বেনামে। ভাড়া-বাড়ি বকুলতলায়, তেঁতুলতলায় এবং বারেন্দ্র গলিতে।

রাজা এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। তাতে নাকি কাজের অসুবিধা! দাবি তার এক শাগরেদের। তার কথায়, ‘‘দাদা এক-একটি এলাকাকে ‘টার্গেট’ করে। সেখানকার কোনও একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওই এলাকায় পুকুর-ভরাট করে আবাসন নির্মাণের ব্যবসা করে দাদা।’’

হালিশহরের বর্তমান উপ-পুরপ্রধান রাজা দত্ত যখন দিনমজুরি করত, তখন থাকত রামপ্রসাদের ভিটের কাছে। সেটাই তার পৈতৃক বাড়ি। রাজ্যে পালাবদলের পরে এলাকায় যখন রাজার প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ছে, তখন সেখান থেকেই ‘কারবার’ চালাত। পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়া হয়। ওই এলাকায় একের পর এক পুকুর-ভরাট হয়েছে সেই সময়ে।

বছর খানেকের মধ্যে রাজা ঠিকানা বদলায়। বালি-খাদানের জন্য গঙ্গার তীর বরাবর ‘রাজ্যপাট’ ছড়াতে থাকায় রাজার দ্বিতীয় ঠিকানা হয় গোদাবরী মাঠ। এখানেও গড়ে ওঠে রাজ-অট্টালিকা। এখানেও শুরু হয় পুকুর-ভরাট এবং পুরনো বাড়ি ‘দখল’ নেওয়া। এর পরে রাজা ঠাঁই নেয় বকুলতলায়। ভাড়া-বাড়িতে।

দ্রুত পাল্টে যায় এখানকার ‘জল-ছবি’ও। অথচ, তখনও রাজা উপ-পুরপ্রধান হয়নি।

বকুলতলার পর তেঁতুলতলা। এখানেই রাজার নিহত অনুচর বান্টির বাড়ি। এই এলাকা দখলে বান্টিকেই রাজা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগায় বলে অভিযোগ। বছরখানেক পর ফের ডেরা বদল। এ বার বারেন্দ্র গলি। এটাই এখন রাজার সর্বশেষ ঠিকানা। ভোটের আগের রাতে এই এলাকারই সমাজপতি-বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজার দলবলের বিরুদ্ধে।

মাত্র পাঁচ বছরে রাজা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছে, তা হালিশহরের বাসিন্দা মাত্রই জানেন। অথচ, গত বছর তৃণমূলের টিকিটে পুরভোটে দাঁড়ানোর সময়ে প্রশাসনের কাছে পেশ করা হলফনামায় রাজা ওরফে দেবাশিস যে সম্পত্তি দেখিয়েছে, তা জেনে তাজ্জব শহরবাসী। ওই হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, রাজার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ মাত্র ৯২৭২। আর ২৬৫০ টাকা দামের একটি মোবাইল। ব্যাঙ্কে কিছুই নেই!

বিরোধীদের অভিযোগ, ‘রায়বাহাদুর’রা সঙ্গে থাকাতেই সব সম্পত্তি বেনামে করেও ছাড় পেয়ে গিয়েছে রাজা। মিথ্যা হলফনামা দাখিল করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। আর সেই সুযোগেই অবাধে বেআইনি কাজ করে চলেছে সে। নানা এলাকায় পুরনো বাড়ি দখলের জন্যেও রাজার বিরুদ্ধে একাধিকবার দলবল পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে, সাহস করে কেউ থানা পর্যন্ত যাননি।

কী ভাবে পুরনো বাড়ি ‘দখল’ হয়?

রাজারই ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধরা যাক, তেতুঁলতলায় তিন শরিকের বাড়ি-সহ একটি ২৫ কাঠার জমি রয়েছে। তিন জনের মধ্যে দুই শরিক বাইরে থাকেন। তাঁরা চাইলেও সেই বাড়িতে থাকা এক শরিক জমি বিক্রি করতে চান না। অন্য দুই শরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজা তাঁদের বিশাল টাকার প্রলোভন দেখায়। শুরু করিয়ে দেয় শরিকি গণ্ডগোল। কোনও এক রাতে রাজার দলবল গররাজি শরিককে গিয়ে কড়কে দিয়ে আসে। তারপর কাজ হাসিল করতে আর অসুবিধা হয় না। আসল খেলাটা শুরু হয় এখান থেকেই। জমি বিক্রির জন্য দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। তারপরেই নানা বাহানায় রাজা জমির দাম কমাতে থাকে। তখন আর শরিকদের পালানোর পথ খোলা নেই। সামান্য কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজা আর জমি কেনার নাম করে না। ততদিনে সেই গররাজি শরিকও ভিটেছাড়া হয়ে যান। এখন বাকি দুই শরিক চান, যে কোনও দামে জমি বিক্রি করে রাজার ‘খপ্পর’ থেকে নিষ্কৃতি পেতে।

ভোটের পর থেকেই রাজার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন অনেকে। মুখ বন্ধ রাখার জন্য রাজার দলবল চেষ্টার কসুর করছে না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে রাজা যাতে রায়বাড়ির ধারে-কাছে না যায়, সেই নির্দেশ পেয়েছে তার চ্যালারা।

জনৈক সাবির আলিও রাজার সম্পর্কে আনন্দবাজারকে আরও খবর দিতে ফোন করেছিলেন। শুক্রবার সকালে কাঁচরাপাড়ার বাগের খালের ধারে ধরমবীর কলোনি এলাকা থেকে বস্তাবন্দি একটি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাচক্রে, খুন হওয়া ওই যুবকের নামও সাবির আলি (৩১)। বাড়ি কাঁচরাপড়ার হিউলিট রোডে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরনোর পরে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এই খুন নিয়ে পুলিশ অন্ধকারে।

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy