Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
buddhadeb bhattacharya

শনিবারও ‘ব্রিগেডে’ ছিলেন বুদ্ধদেব, রবিবারের মঞ্চ তাঁর নামই উচ্চারণ করল না

ব্রিগেড সমাবেশের আগের দিন পর্যন্তও ঘোরতর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব। ২৪ ঘণ্টা পর আক্ষরিক অর্থেই যেন মিলিয়ে গেল তাঁর ছায়া।

২০১৫ সালে শেষবার ব্রিগেডের সমাবেশে বক্তৃতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর।

২০১৫ সালে শেষবার ব্রিগেডের সমাবেশে বক্তৃতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:২৬
Share: Save:

ব্রিগেড সমাবেশ শুরুর প্রাকমুহূর্ত পর্যন্ত ঘুরে ফিরে এসেছিল তাঁর কথা। বাস্তবে বা নেটমাধ্যমে বার বারই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর সমাবেশে আক্ষরিক অর্থেই যেন মিলিয়ে গেল তাঁর ছায়া। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা। আবার বামেদের ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ এই স্লোগানের অন্যতম প্রবক্তাও বটে।

রবিবার কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-কে সঙ্গী করে গড়ে ওঠা বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে দানা বেঁধেছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কণ্ঠে উঠে এসেছে জোট সরকার ক্ষমতায় এলে রাজ্যের সরকারি, আধা সরকারি ক্ষেত্রে সব শূন্যপদে নিয়োগের আশ্বাস। আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘ভাইপো’র প্রসঙ্গ এনে চিটফান্ডে জড়িতদের সম্পত্তি নিলামের মতো হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। আবার উঠেছে রাজ্যে শিল্পস্থাপনের কথাও। ঘটনাচক্রে, ২০০৬ সালে ২৩৫টি আসনে জিতে ফিরে আসার পর, রাজ্যে বাম সরকারের শিল্পায়নের প্রধান কান্ডারি ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই। কিন্তু রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে সেই বুদ্ধদেবের কথা অনুচ্চারিতই থেকে গেল। বাম নেতাদের বক্তব্যেও উঠে এল না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ।

অথচ শনিবার পর্যন্তও বামকর্মী, সমর্থকদের কাছে ঘোরতর ভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব। ওই দিন রাতে তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান নিজের ‘যন্ত্রণা’র কথা। লেখেন, ‘ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি, বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসেও গিয়েছেন। বড় সমাবেশ হবে। এ রকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন, আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে চলছি আমি। মাঠে-ময়দানে মিটিং চলছে, আর আমি গৃহবন্দি, যা কোনও দিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।’

২০১৫-র ডিসেম্বরে ব্রিগেডের মাঠে শেষবার ভাষণ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ জুড়ে তখন গেরুয়ার আধিপত্য। কিন্তু বাংলার মাটিতে পদ্ম ফোটা বাকি তখনও। কিন্তু সেই সময়েই রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আভাস পেয়েছিলেন তিনি। দলীয় কর্মী, সমর্থকদের হুঁশিয়ারির সুরেই বলেছিলেন, ‘‘সামনে বড় লড়াই। তৈরি হও। শুধু লড়লে হবে না। জিততে হবে।’’ দিন কয়েক আগে সেই স্মৃতি টেনে এনে বাম কর্মী, সমর্থকদের আবেগে ঘা দিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তার সঙ্গেই কেউ কেউ জুড়ে দিয়েছিলেন, ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেডের সমাবেশস্থলে অক্সিজেনের নল নাকে নিয়েই বুদ্ধদেবের ক্ষণিক উপস্থিতির কথা। ব্রিগেডের মঞ্চে অনুপস্থিত থেকেও সে দিন ‘আগ্রাসী’ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি। ২০২১-এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ফের ‘বড় লড়াই’-এর মুখোমুখি বামেরা। কিন্তু ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে পাম অ্যাভিনিউ-র দূরত্ব যেন কিছুতেই ঘুচল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE