Advertisement
E-Paper

হারের দিনই নেই লকেট, প্রথম বারে বাজিমাত ছয় প্রার্থীর

বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা ইস্তক নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঘাঁটি গেড়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০৬

বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা ইস্তক নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে ঘাঁটি গেড়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন!

প্রচারে বেরিয়ে গাঁ-ঘরে তিনি মাটির দাওয়ায় বসে মুড়ি খেয়েছেন। সাইকেল চেপে এলাকায় এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিজেকে ঘরের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়েছেন। তবু জনতা শেষ পর্যন্ত তাঁর পক্ষে রায় দিল না। ময়ূরেশ্বরে জোট প্রার্থী অরূপ বাগকে হারিয়ে ৩৮৭৭০ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের নবাগত প্রার্থী অভিজিৎ রায়!

জেলায় এ বার নির্বাচনে দু’জন সেলিব্রেটি প্রার্থীই ছিল বিজেপির। ময়ূরেশ্বরের প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও অন্য জন সিউড়ির প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়কে নিয়ে জেলা বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তেমন উত্তেজনা না থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খোঁজ পড়ে লকেটের। রটে যায় লকেট পাথাই গ্রামে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে রয়েছেন। বেলা অব্দি তাঁর জেলায় আসার কথা জানা গেলেও, দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘কোনও কারচুপির অভিযোগ করছি না। মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন, এবং শাসক দলকে দিয়েছেন। এই পরাজয় মেনে নিচ্ছি। তবে ভোটে নিয়ে আমার তেমন ধারণা ছিল না। কিছুটা সঞ্চয় হল!’’

লকেটের কেন্দ্র ময়ূরেশ্বর চার দশকের বেশি দিন ধরে বামেদের দখলে ছিল। এ বার ছিনিয়ে নিল তৃণমূলের অভিজিৎ রায়।

বুথ ফেরত সমীক্ষার পর হাওয়ায় নানা কথা উড়লেও নিজের জয় নিয়ে আগেই সুনিশ্চিত করেছিলেন রামপুরহাট বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ দিন আশিসবাবু বলেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয়।’’ তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘আগামী দিনে রামপুরহাট বিধানসভায় প্রথম কাজ হবে পানীয় জলের সমস্যা দূর করা।’’ এই কেন্দ্রে নিজের হারের ব্যাখা দিতে গিয়ে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘মানুষের রায় মাথা পেতে নিতে হবে। হারের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’’

জেলায় শাসক দলের আরও যে দু’জন প্রার্থীর জয় এ বার নজর কেড়েছে, তাঁদের একজন লাভপুরের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম। মূলত সাংগঠনিক শক্তিই কাজে লাগিয়ে ভোটে এ বার বাজি মাৎ করেছেন মনিরুল। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ভোট করিয়েদের দলে এনে কাজে লাগিয়েছেন। দলের অন্দরের খবর, মনিরুল যে জিতবেন— সে নিয়ে কোনও টেনশন ছিল না। তবে এ বার নতুন মুখ যারা, তাঁদের নিয়ে কিছুটা হলেও চাপা টেনশন ছিলই। কিন্তু, প্রথমবারের বাজিমাত করেছেন অভিজিতের মতো শাসকদলের নরেশচন্দ্র বাউরি ও অশোক চট্টোপাধ্যায়।

নরেশচন্দ্র বাউরি দলের যুব সভাপতি এবং বোলপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান।

তবে, বিধানসভার টিকিট জুটেছিল এবারই। প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন দুবরাজপুর বিধানসভার তিনি। শুধু বড় ব্যবধানে জিতলেনই না ইতিহাস গড়লেন দুবরাজপুর বিধানসভায় ৩৯ বছর ধরে শিকড় গেড়ে থাকা বামদূর্গে আঘাত হেনে। যাঁকে হারালেন ফব-র সেই বিজয় বাগদি যিনি ৬ বারের বিধায়ক। পেশায় শিক্ষক নরেশ বলছেন, ‘‘বামেরা ঘাঁটি গেড়ে ছিল ঠিকই কিন্তু সে ভূমিকা একজন বিধায়কের থাকে এলাকায় তা ছিল না। সেই খামতি সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন মানুষের কাছে তুলে ধরেছি।’’ প্রথমবারেই বাজিমাত করে খুশি অশোকবাবুও।

রামপুরহাটের চিকিৎসক অশোকবাবুকে যখন সিউড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে দলের টিকিট দেওয়ার কথা চূড়ান্ত করা হয়, তখন বহিরাগত তকমা সেঁটে বিরোধিতা হয়েছিল দলের অন্দরেই। সঙ্গে ছিল গতবারের সাসপেন্ডে়ড বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের কাঁটাও। কিন্তু সে সবকে পিছনে ফেলে প্রথম লড়াইয়েই বাজিমাত করলেন অশোক। ৩০ হাজেরেরও বেশি ভোটে হারালেন বন্ধু চিকিৎসক তথা পোড় খাওয়া সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোমকে। খুশি কলকাতা থেকে নলহাটিতে উড়ে এসে জয়ী হয়ে মইনউদ্দিন শামস। এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম জয় পেল তৃণমূল। দলের একাংশের দাবি, এক্ষেত্রে একক কৃতীত্ব মইনউদ্দিন শামসেরই প্রাপ্য। মইনউদ্দিন অবশ্য বলছেন, ‘‘নলহাটিতে দু’বারের বিধায়ক কোনও উন্নয়ন করেনি। তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে মানুষ।’’ পরাজিত প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছে এই জয়। ব্যাখ্যা কী দেব!’’ পরাজয়ের কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না এ বার জেলার বিরোধী শিবিরের অন্য কয়কেজন প্রার্থীও। তাঁদের একজন ফব বিজয় বাগদি।

গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল সুনামিতেও নিজের আসনটি ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন ফব-র বিজয়।

রাজনগর বিধানসভা থেকে টানা পাঁচবার এবং দুবরাজপুর বিধানসভা থেকে ১ বার জয়ী সেই বিজয়-রথই থামিয়ে দিলেন তৃণমূলের নরেশচন্দ্র বাউড়ি। এমন ফল একেবারেই প্রত্যাশা করেননি বিজয়। তিনি বলছেন, ‘‘এতবার জয়ী হয়েছি কিন্তু এবার কেন মানুষ এমন করলেন সত্যিই বুঝতে পারছি না!’’ সদুত্তর নেই সিউড়ির সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমেরও।

হেরে গেলেন বিজেপির দুধকুমার মণ্ডলও। নিন্দুকেরা বলছে, নিজের নাক কেটে যাত্রাভঙ্গ করলেন দুধকুমার। রামপুরহাটে না গিয়ে ময়ূরেশ্বরেই তিনি অনেক বেশি সুবিধে করতে পারতেন।

তবে জেলায় এ বার শাসকদলকে যে আসনটি সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটি নানুর।

বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা কাজল শেখ ও জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কোঁদল নতুন নয়। সর্বজন বিদিত। সিপিএম জিতলেও এই আসনটিতে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হার হল কাজল শেখের কাছেই। গদাধরকে অবশ্য অনুব্রত এ দিন আশ্বাস দেন, পাঁচ বছর পরে ফের তাঁকে ফের জিতিয়ে আনার। ২০১১ সালের নির্বাচনে সিপিএমের শ্যামলী প্রধানকে ৫৮৬৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম বিধানসভায় পা রে‌খেছিলেন গদাধর হাজরা। তার পরেই, বাম দুর্গ হিসেবে খ্যাত নানুরে সিপিএম কার্যত গর্তে সেঁধিয়ে যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা জেলা পরিষদের একটি আসন ছাড়া কোনও প্রার্থী দিতে পারেননি। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রেই প্রায় ৬১ হাজার ব্যবধানে এগিয়েছিলেন তৃণমূলের অনুপম হাজরা। তাই এই বারের নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে গদাধর হাজরার জয় ছিল একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু ফল হল ঠিক উল্টো। কেউ বলছেন, এলাকার দাপুটে নেতা কাজল শেখই সিপিএমের পক্ষে ভোট করিয়ে তাঁকে হারিয়েছেন।

জেলায় শাসকদলের অন্য যে কেন্দ্রটিতে হার হয়েছে, সেটি হাঁসন। প্রার্থী ছিলেন পাঁচ বারের কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল। সেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাওয়াটাই এলাকার মানুষ ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেনি। এবারই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে তাঁকে হারিয়েছেন মিলটন রসিদ। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষ যেভাবে ভোট ভিক্ষা দিয়েছে, তার মর্যাদা রাখাটাই আমার এখন মূল দায়িত্ব।’’

Assembly election 2016 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy