Advertisement
E-Paper

লালমাটিতে গেরুয়া ঝড় তুলে দিয়েছেন ‘দিদি’, কঠিন চ্যালেঞ্জে অনুব্রত

কলকাতা থেকে অনেক বার ফোন ঘোরানোর পর ধরা গেল তাঁকে। নিজে এখন ফোন তেমন ধরছেন না। ব্যক্তিগত সহায়কের কাছেই থাকছে ফোনটা। ফোন যত বারই রিসিভড হচ্ছে, তত বারই হইচই-এর আওয়াজ ভেসে আসছে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৫
ময়ূরেশ্বরে ভোটপ্রচারে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়।

ময়ূরেশ্বরে ভোটপ্রচারে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়।

কলকাতা থেকে অনেক বার ফোন ঘোরানোর পর ধরা গেল তাঁকে। নিজে এখন ফোন তেমন ধরছেন না। ব্যক্তিগত সহায়কের কাছেই থাকছে ফোনটা। ফোন যত বারই রিসিভড হচ্ছে, তত বারই হইচই-এর আওয়াজ ভেসে আসছে। কখনও স্লোগান, কখনও ঢাক-ঢোল-তাসা, কখনও কর্মী-সমর্থকদের সমবেত কথাবার্তা। তার মধ্যেই বছর তিরিশের যুবক জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘দিদি’ এখন কোথায় এবং কতটা ব্যস্ত।

এই ‘দিদি’ হলেন ময়ূরেশ্বরের ‘দিদি’। বিধানসভায় প্রবেশের জন্য তিনি যে রাস্তা বেছে নিয়েছেন, কলকাতা থেকে সুদূর বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ঘুরে তা কলকাতায় ফিরছে। লকেট চট্টোপাধ্যায় ময়ূরেশ্বর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন মসৃণ ভাবেই। সেখান থেকে বিধানসভা ভবন পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তাটা এখন তৈরি করছেন তিনি। দিন-রাত এক করে ব্যস্ত সেই কাজেই।

বিজেপি যে ক’জন হাই-প্রোফাইল প্রার্থীকে এ বারের নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়েছে, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দ মতো কেন্দ্র বেছে নিয়ে লড়তে নেমেছেন। লকেটের সামনেও সে সুযোগ ছিল। এমন কোনও আসন তিনি বেছে নিতেই পারতেন, যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তা না করে ময়ূরেশ্বরে কেন? প্রথমত, ময়ূরেশ্বরে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের চেয়ে বেশ অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বিজেপি। দ্বিতীয়ত, অনুব্রত মণ্ডলের মতো নেতার খাসতালুকে পড়ে ময়ূরেশ্বর। জীবনে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে এমন একটা আসন থেকে লড়তে যাওয়া কি জেনেশুনে আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সামিল নয়? প্রশ্নটা করা হয়েছিল কলকাতা থেকেই। ফোনে। লকেট একটু হেসে বলেছিলেন, ‘‘ঘুরে যান না এক বার ময়ূরেশ্বর। তা হলেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে, আগুনে ঝাঁপ দিয়েছি কি না।’’

বেলা ১১টা নাগাদ ময়ূরেশ্বর সদরে পৌঁছে জানা গেল, অনেক সকালেই লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল চলে গিয়েছে ভিতরের দিকে। ফোনে যোগাযোগ করে জানা গেল, ব্রাহ্মণবহড়ার দিকে ঢুকছে বিজেপি প্রার্থীর মিছিল। আরও ৫-৭ কিলোমিটার পেরিয়ে ব্রাহ্মণবহড়ার মোড় দূর থেকেই দেখা গেল। বিজেপির অসংখ্য ঝান্ডা আর ট্যাবলোর মতো করে সাজানো গাড়ির ভিড়ে কেমন গেরুয়া রং ধরে নিয়েছে মোড়টা। ট্যাবলোর মাথায় লাগানো মাইক থেকে ঘোষণা হচ্ছে, বিজেপির প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় পৌঁছে গিয়েছেন ব্রাহ্মণবহড়াতে। সেই ঘোষণা শুনেই গ্রাম থেকে বানের জলের মতো লোকজন বেরিয়ে আসছেন বড় রাস্তার দিকে।

মিনিট পাঁচেকেই মিছিলের বহর দ্বিগুণ হয়ে উঠল। হালকা সোনালি রঙের টয়োটা থেকে নেমে পড়লেন লকেট। পরনে গেরুয়া শাড়ি, সোনালি পাড়। বুকে পদ্মফুলের ব্যাজ সাঁটা। মাথার পিছনে সবুজ পাতা সমেত এক থোকা সাদা ফুল গোঁজা। ভিড়ের বহর দেখেই চওড়া হয়ে গেল হাসি। তুমুল বাদ্য-বাজন আর জয়ধ্বনির মধ্যে গ্রামের ভিতর দিকে হাঁটা শুরু। দু’ধারে ভিড় করে গ্রামের মানুষ, বিশেষত মহিলারা। অভ্যস্ত রাজনীতিকের মতোই জোড়-হাত উঠছে নামছে বার বার। রাস্তার দু’ধার থেকে জবাবও আসছে প্রতিনমস্কারে। গ্রামের ভিতর মিছিল আর একটু ঢুকতেই প্রার্থীকে ঘিরে উৎসাহের আরও জোয়ার। মহিলারা ছুটে এসে হাত মেলাচ্ছেন, কেউ আশীর্বাদ করছেন মাথায় হাত দিয়ে, কেউ আবার টিভি বা সিনেমার পর্দায় দেখা মানুষটাকে সামনে পেয়ে বুকে জাড়িয়ে ধরছেন। লকেট চট্টোপাধ্যায় এই পুরোটাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন গত কয়েক সপ্তাহে। মিছিলের দাপটে লাল মাটির রাস্তায় ধুলোর ঝড় উঠছে। সঙ্গে চড়া রোদ। ভ্রূক্ষেপ নেই টলিউড গ্ল্যামারের। এক গাল হাসি নিয়ে হই হই করে পৌঁছে যাচ্ছেন এক দরজা থেকে আর এক দরজায়। একটা গ্রাম শেষ হতেই, গাড়িতে উঠে পরের গ্রাম। লোকালয়ের সীমা শুরু হতেই আবার হাঁটা শুরু।

সাড়ে ১২টা নাগাদ শেষ হল সকালের প্রচার। ব্রাহ্মণবহড়া, সিঙারি, ময়ূরেশ্বর সদর ঘুরে কনভয় রওনা দিল পাথাইয়ের দিকে। সেখানেই অস্থায়ী ঠিকানা ময়ূরেশ্বরের দিদির। যে বাড়িতে থাকছেন, সেটি আর এক অভিনেতার। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি। সে বাড়িতে এখন কেউই থাকেন না। বন্ধু লকেট ময়ূরেশ্বর থেকে ভোটে দাঁড়ানোয় তাঁকে আপাতত সেই বাড়ির চাবি হস্তান্তর করে দিয়েছেন খরাজ। দুপুরে সেখানে ফিরেই স্নান-খাওয়া। রোদটা পড়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিয়েই আবার সাড়ে চারটে থেকে ঝোড়ো প্রচার।

জিতছেন কি না, সে জবাব ইভিএম-ই দেবে। কিন্তু ময়ূরেশ্বরের ৯০ শতাংশ গ্রামেই দেওয়াল লিখনে, পোস্টারে, ব্যানারে, ঝান্ডায়, কাটআউটে লকেট চট্টোপাধ্যায় অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে। অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টদা’র জেলা থেকে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে চ্যালেঞ্জ জিতে ফেরা কি খুব সহজ হবে? আবার সেই মুচকি হাসি লকেটের। ছোট্ট জবাব, ‘‘দেখতে দেখতেই ১৯ মে চলে আসবে। ফলাফলেই দেখে নেবেন, কী সম্ভব, আর কী অসম্ভব।’’

১৭ এপ্রিল ভোট বীরভূমে। তার আগে ময়ূরেশ্বরের পথে পথে ঝড় তুলে দিতে বদ্ধপরিকর লকেট। এই পথই তো পৌঁছে দেবে বিধানসভায়।

আরও পড়ুন...
অন্নদাতা সিন্ডিকেটই, শাসকের পকেটে বছরে দেড়শো কোটি

locket chatterjee assembly election 2016 Mayureshwar ishandev chatterjee MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy