Advertisement
E-Paper

ভোট শেষেও দৌড়চ্ছেন মহুয়া

হাঁটতে হাঁটতে চল্লিশ। নাকি ছুটতে ছুটতে? চল্লিশ মানে চল্লিশটা দিন। এই প্রান্তিক জনপদে রোদচশমা-শাড়ি-স্নিকার্সের আধুনিকার দৌড় শুরু হয়েছিল ঠিক চল্লিশ দিন আগে। হিসেব বলছে, সাম্প্রতিক অতীতে সে দিনই প্রথম নদিয়ার করিমপুরে এসেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৩
ভোট-মাঠে মহুয়া। করিমপুরে কল্লোল প্রমাণিকের তোলা ছবি।

ভোট-মাঠে মহুয়া। করিমপুরে কল্লোল প্রমাণিকের তোলা ছবি।

হাঁটতে হাঁটতে চল্লিশ। নাকি ছুটতে ছুটতে?

চল্লিশ মানে চল্লিশটা দিন। এই প্রান্তিক জনপদে রোদচশমা-শাড়ি-স্নিকার্সের আধুনিকার দৌড় শুরু হয়েছিল ঠিক চল্লিশ দিন আগে। হিসেব বলছে, সাম্প্রতিক অতীতে সে দিনই প্রথম নদিয়ার করিমপুরে এসেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র।

তার পর থেকে করিমপুরই তাঁর ঘাঁটি। এ দিন ভোট ছিল সেখানেও। দেখা গেল, মহুয়া ছুটছেন।

গোটা বিধানসভা এলাকার ২৫৯টি বুথ পায়ে হেঁটে আগেই ঘোরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গত চল্লিশ দিনে ঠা ঠা রোদ্দুর মাথায় করেই তাঁকে এলাকা চষে ফেলতে দেখেছেন গ্রামবাসীরা। ‘মেমসাহেব’ তাই তাঁদের একেবারেই বিস্ময় উদ্রেক করেননি, এ কথা বললে ঘোরতর অন্যায় হবে।

দিদির বাঁধা পারিষদদের মতো তাঁর আশপাশে ঘুরঘুর করতে কার্যত দেখা যায় না মহুয়াকে। যা নিয়ে নেত্রীও নাকি ক্ষুব্ধ। তা সত্ত্বেও রাহুল গাঁধীর অন্যতম প্রাক্তন এই ‘আম আদমি কা সিপাহি’কে তিনি টিকিট দেওয়ায় চমকেছিলেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছিল, কঠিন আসন বলেই কি এখানে ঠেলে দেওয়া হল মহুয়াকে?

পিচ যে কঠিন, সেটা মহুয়া নিজেও টের পেয়েছেন গত চল্লিশ দিনে। দেখেছেন, মাঝেমধ্যে তাঁকে ভোগাচ্ছে তাঁরই অতীত। হয়তো প্রচারে বেরিয়েছেন। চিনতে পেরে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা বলেছেন, ‘‘দিদি, আপনাকে কত বার রাহুল গাঁধীর সভায় দেখেছি। সেই যে আপনি বলেছিলেন...।’’ শুনতে হয়েছে, ‘‘কিছু মনে করবেন না দিদি, আমরা তো কংগ্রেস করি। আর আমাদের জোট সিপিএমের সঙ্গে।’’

আর এক বাধা— ‘মেমসাহেব’ ইমেজ। রাহুলের টিমে যোগ দেওয়ার আগে জেপি মর্গ্যানে মোটা মাইনের চাকরি করতেন। পড়াশোনা আমেরিকায়। বাংলাটা খুব ঝরঝরে বলেন না। কাজেই প্রথম দিকে তাঁকে দেখে গ্রামের লোক বলেছে, ‘‘এ তো শহুরে মেয়ে গো। এই পাড়াগাঁয়ে কী করে কাজ করবে!’’

তার পরেও মহুয়া চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন। সকাল-দুপুর কর্মীদের নিয়ে ছুটেছেন চামনা থেকে চরমেঘনা, নাটনা থেকে ধোড়াদহ। বুথ ধরে ধরে সংগঠন মজবুত করেছেন। এ দিনও কাকভোর থেকে ছুটে বেড়িয়েছেন গোটা বিধানসভা কেন্দ্র। গণ্ডগোল দেখলে চোস্ত হিন্দিতে ডেকেছেন আধাসেনাকে। গ্রামের খুদের গাল টিপে বলেছেন, ‘‘রোদ্দুরে বেশি ঘুরিস না।’’ তার পর আবার দৌড়। পাল্লা দিতে গিয়ে কর্মীরা হিমশিম। দৌড় দেখে (অবশ্য আড়ালে) খোদ নেত্রীর সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়েছে তাঁর!

কী বলবেন? সতর্ক সিঙ্গলস নিলেন মহুয়া— ‘‘দেখুন, দৌড়ানোর অভ্যাস অনেক দিনের। লন্ডনে ম্যারাথন দৌড় শেষ করেছিলাম চার ঘণ্টা পঁচিশ মিনিটে। সেটাই কাজে লেগে গেল। অনেকে বলে, আমি নাকি স্টেরয়েড নিই। ভাবুন এক বার!’’

রাহুলের টিমের হয়ে আগে বাংলায় কাজ করেছেন। অনেকের মতে, দল বদল সত্ত্বেও ভোটে লড়তে নেমে নিচু তলার সংগঠন করার সেই পাঠই কাজে লেগে গেল মহুয়ার। আর কর্মীরাও উজ্জীবিত। তাঁরা বলেছেন, ‘‘চল্লিশ দিনে এলাকার সংগঠনের ভোলই বদলে দিয়েছেন দিদি। ওঁর জয় কেউ রুখতে পারবে না।’’ মহুয়াও বলছেন, ‘‘মানুষ ভোট দিয়েছেন উচ্ছ্বসিত হয়ে। জয় নিশ্চিত।’’

কংগ্রেস-সিপিএমের মতে, মহুয়া চেষ্টা করেছেন ঠিকই। কিন্তু জয় অত সহজ হবে না। করিমপুরের সিপিএম প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, ‘‘তৃণমূল বেশ কিছু এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছে। ব্যবধান হয়তো একটু কমতে পারে। কিন্তু আমিই জিতব।’’

ভোট শেষ। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। খবর এল, দলের এক কর্মী জখম হয়ে হাসপাতালে। ফের ছুটলেন মহুয়া। দৌড় শেষ হবে কবে? গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে মহুয়ার জবাব, ‘‘শেষ কীসের, দৌড় তো সবে শুরু!’’

Assembly Election 2016 Mahua Moitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy