Advertisement
E-Paper

নেত্রীর মুখে অপূর্ব, বনমালী

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পায়চারি করতে করতে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। একের পর এক তোপ দাগছেন সিপিএম, কংগ্রেসকে। ভিড়ও ভালই। কিন্তু হাততালি তেমন পড়ছে না। কিন্তু মমতার সভা মানেই তো হাততালির ঝড়। এই উলট-পুরাণ চোখ এড়ায়নি তৃণমূল নেত্রীরও। রবিবার মঙ্গলকোটের সভার শেষ প্রান্তে এসে থাকতে না পেরে তিনি বলেই ফেললেন, ‘‘হাততালিতে জোর নেই কেন?’’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৩
মঞ্চে ওঠার পথে দুই নেতা স্বপন দেবনাথ ও অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে কথাবার্তা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঞ্চে ওঠার পথে দুই নেতা স্বপন দেবনাথ ও অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে কথাবার্তা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পায়চারি করতে করতে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। একের পর এক তোপ দাগছেন সিপিএম, কংগ্রেসকে। ভিড়ও ভালই। কিন্তু হাততালি তেমন পড়ছে না।

কিন্তু মমতার সভা মানেই তো হাততালির ঝড়। এই উলট-পুরাণ চোখ এড়ায়নি তৃণমূল নেত্রীরও। রবিবার মঙ্গলকোটের সভার শেষ প্রান্তে এসে থাকতে না পেরে তিনি বলেই ফেললেন, ‘‘হাততালিতে জোর নেই কেন?’’ পরক্ষণেই জবাব না পেয়ে নিজেই উত্তর দেন, ‘‘গরম লেগেছে বলে।’’

এ দিন বেলা আড়াইটা নাগাদ মঙ্গলকোট কিসান মান্ডির কাছে একটি মাঠে প্রথম সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলকোটের প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ছাড়াও কেতুগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী শেখ সাহানেওয়াজ, আউশগ্রামের প্রার্থী অভেদানন্দ থান্ডার হাজির ছিলেন। মঞ্চে উঠেই শেখ সাহানেওয়াজের সঙ্গে ফিসফিসিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। তারপরে মঙ্গলকোটের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে একান্তে কথা হয়। আলাপ করেন মঙ্গলকোট পঞ্চায়ের সমিতির সভাপতি কুন্তলা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। এই মঙ্গলকোটেই গত বার মাত্র ১২৬ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন অপূর্ব চৌধুরী। এ বারেও প্রার্থী পদের জোরালো দাবিদার ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর বদলে প্রার্থী করা হয় সিদ্দিকুল্লাকে। গোড়ায় এ নিয়ে দলের একাংশ অসন্তোষ দেখা যায়। পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের কাছে ক্ষোভও জানান অনেকে। অপূর্ববাবুর মনে এ নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে বুঝতে পেরে তৃণমূল নেত্রী এ দিন সভায় বলেন, “গত বার জোর করে অচলকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল (অপূর্ববাবু দলের কাছে অচল নামেই পরিচিত)। এ বার তাঁকে প্রার্থী করা যায়নি, তবে অচলকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দেব।”

মঙ্গলকোটের পরে ভাতারেও প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ সামাল দিতে একই কৌশল নেন দলনেত্রী। দলের প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরাকে ভোটের পরে ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ দিন প্রার্থীর সমর্থনে সভায় হাজির ছিলেন জেলার দুই প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ নেতা স্বপন দেবনাথ ও মলয় ঘটক। তিনটে নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টার নামে। সেখান থেকে তাঁকে মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে যান বনমালীবাবু। মঞ্চে উঠেই বর্ধমানের দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর ভাতারের সভার দায়িত্ব বনমালীবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এমনকী, বনমালীবাবু ও দলে তাঁর বিরোধী মুখ বলে পরিচিত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীকে পাশাপাশি নিয়ে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেও দলের প্রার্থী তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় বনমালীবাবুর ক্ষোভের কথা বিলক্ষণ জানেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রার্থীর নাম জানা যেতে অসন্তোষ এতটাই ছড়িয়েছিল যে বনমালীবাবুর অনুগামীর কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়েও বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। বনমালীবাবুকে প্রার্থী করতে দেওয়া যাবে না বলে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীও প্রকাশ্যে সভা করেছিলেন। ফাঁকতালে ভাতারের এই দুই নেতার দ্বন্দ্বে আউশগ্রাম থেকে এসে দলের টিকিট পেয়ে যান জেলার যুব সভাপতি (গ্রামীণ) সুভাষ মণ্ডল। এমনকী বনমালীবাবু যে এখনও কার্যত ঘরেই বসে রয়েছেন, তাও অজানা নয় নেত্রীর। সে জন্য এ দিন তিনি বনমালীবাবুকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তৃণমূল নেত্রী বলেন, “বনমালীবাবু ভাতারের অভিভাবক। তাঁকে আমার দরকার। উনি দলের বহুদিনের সৈনিক। ক্ষমতায় আসার পরে বনমালীবাবুকে উপযুক্ত দায়িত্ব দেব।” ভোটের দিন নেতাদের দ্বন্দ্বে দলের ক্ষতি হতে পারে বুঝতে পেরেই মমতা বলেন, “সবাই মিলে সুভাষকে জেতাতে হবে।”

মঙ্গলকোটে প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে চোরাস্রোত যে বইছে সে কথা জানেন বলেই এখানে মুখ্যমন্ত্রী দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “ভুলে যান সিদ্দিকুল্লা প্রার্থী। মনে রাখুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী। আমার নাম মনে রেখে ভোট দিতে যান। দিদির মুখটা মনে রেখে ভোট কেন্দ্রে যান।”

অন্য সভার তুলনায় মুখ্যমন্ত্রীর সুর অনেকটাই নরম ছিল এ দিন। মঙ্গলকোট, ভাতার হোক বা রায়না— সব সভাতেই বিরোধীদের আক্রমণ ছাড়া দলের সংগঠনে জোর দিতে দেখা যায় তাঁকে। এমনকী, বীরভূমের জেলা সভাপতি তথা মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের তালুকে দাঁড়িয়েও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কে একটাও মন্তব্য করেননি। কয়েকশো মিটার দূরে নানুরে দলের এজেন্ট না থাকা, ঝামেলা নিয়েও কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। বিরোধী তো বটেই, দলের একাংশেও দাবি, “নতুনহাট থেকে একটু দূরেই বীরভূমের নানুর। সেখানে ভোট চলছে। এ অবস্থায় অনুব্রত মণ্ডলের হয়ে মুখ খুললে দল বিপাকে পড়তে বুঝতে পেরেই চুপ করে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী।”

assembly election 2016 Mamata Banerjee Mangalkot vote campaign no response
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy