কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শাসানি প্রার্থী পূর্ণেন্দু বসুর। অর্জুনপুরে। ছবি :সুমন বল্লভ।
সকালে ফোন ধরে তৃণমূলের পূর্ণেন্দু বসু বলেছিলেন, তিনি এলাকাতেই নেই।
দুপুরে ফোনে বলেন, মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথাই বলবেন না। বাইরে বেরোনোরও পরিকল্পনা নেই।
বিকেলে সাঙ্গোপাঙ্গ-সহ ময়দানে নেমে তিনিই কমিশনের চাপা ‘সন্ত্রাস’-এর কথা বললেন। তাঁর কথায়, ‘‘একের পর এক বুথ ঘুরে মনে হচ্ছে, এ যেন জরুরি অবস্থা।’’ কৈখালির হজ হাউসে একটি বুথে ঢোকার সময়ে পরিচয়পত্তাঁর চেয়ে তাঁর পথ আটকান কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান। বেরিয়ে পূর্ণেন্দুবাবুর ক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পুলিশকে অকেজো করে ওরা যা-খুশি-তাই করছে। এই জরুরি অবস্থা মানব না।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে তাকিয়ে আরও বলেন, ‘‘একটু হাসতেও কি পারেন না! তাও কি মানা?’’
ততক্ষণে সকাল থেকে গরম উপেক্ষা করে ভোট দিয়ে ফেলেছেন সাধারণ মানুষ। ভোট কেন্দ্রের ত্রিসীমানায় পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘অযাচিত’ কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি। এলাকার সিন্ডিকেটের যে চাঁইদের নাম এত দিন বাতাসে ভেসেছে, যারা শাসক দলের ভরসা হিসেবে আগে সব ভোটে ‘কাজ’ করেছে, তারা ঘেঁষতেই পারেনি। টেনশন বেড়েছে শাসকের।
তেঘরিয়া শিক্ষায়তন হাইস্কুলের সামনে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘুরছিলেন দেবু রায়। কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, স্থানীয় পুলিশের এক ‘চেনাশোনা’ অফিসারই তাঁকে কড়া গলায় কার্যত হটিয়ে দেন। তৃণমূলের কর্মী দেবুবাবু মনোকষ্ট নিয়ে বলেন, ‘‘এত দিনের চেনা অফিসার, কেমন ব্যবহারটা করল দেখলেন!’’ এই ধরনের খবর যত ছড়িয়েছে, ততই বাঁধ ভেঙেছে ধৈর্যের।
শান্তিময় নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে পূর্ণেন্দুবাবুর যখন বচসা চলছিল, তখন তাঁর সঙ্গী হলুদ উত্তরীয় গায়ে এক যুবক পিছন দিক দিয়ে গিয়ে পরপর বোতাম টিপে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কমিশন রিপোর্ট চেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে। পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘যুবকটি ওই বুথেরই ভোটার। এক বারই তিনি ভোট দিয়েছেন।’’
হাতে-গোনা কিছু এমন ঘটনা ছাড়া এ দিন পুলিশ ও বাহিনীর কড়া নজরদারির মাঝে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়েছেন মানুষ। যা দেখে জোট প্রার্থী, সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এটা ভাল লক্ষণ।’’ তবে ব্যতিক্রমও ছিল। বাগুইআটির মাঝেরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল দশটা নাগাদ সবুজ পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তিকে সোজা বুথের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। বুথের বাইরে ছিলেন শুধু লেকটাউন থানার এক অফিসার মনোজিৎ বৈরাগী। তিনি ওই ব্যক্তির পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেন না কেন? মনোজিৎবাবু বলেন, ‘‘আসলে বুঝতে পারিনি।’’
সবুজ পাঞ্জাবির ওই ব্যক্তি বেরোলে জানা যায়, তাঁর নাম আশুতোষ নন্দী। স্ত্রী আশা নন্দী স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। আশুবাবুর গলায় না আছে কার্ড, না বুকে ব্যাজ, না হাতে ভোটার কার্ড। কী করে ঢুকলেন? তাঁর উত্তর, ‘‘এই তো এসে ঢুকে পড়লাম।’’ কেন? জবাব, ‘‘বুথে কম আলোর অভিযোগ আসছিল। তাই প্রিসাইডিং অফিসারকে বলতে এসেছিলাম।’’
বুথে অবশ্য আলোর অভাব দেখা যায়নি। আশুবাবু কী করে ঢুকলেন, তাঁকে গ্রেফতারই বা করা হল না কেন? প্রিসাইডিং অফিসার সাধনকুমার ঘোষ শুধু বলেন, ‘‘আমিও বুঝতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy