Advertisement
E-Paper

নামেই ভ্রান্তিবিলাস, ভোটের ফাঁদে ডাক্তার

একটা যমজ চাকরই যা নেই! নইলে নামে নাম মিলে যাচ্ছে, ডাক্তারে ডাক্তার। বাড়িও কাছেপিঠে। ‘ভ্রান্তিবিলাস’ আটকায় কে? ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে এসে চল্লিশ ছুঁইছুঁই মা তাই আকুল গলায় বলছেন— ডাক্তারবাবু, এ বার ভোটটা আপনাকেই দেব। ছেলেটাকে আমার ভাল করে দেখে দিন।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৭
দুই হুমায়ুন কবীর। দু’জনেই চিকিৎসক। প্রার্থী শুধু বাঁ দিকের জন। —নিজস্ব চিত্র।

দুই হুমায়ুন কবীর। দু’জনেই চিকিৎসক। প্রার্থী শুধু বাঁ দিকের জন। —নিজস্ব চিত্র।

একটা যমজ চাকরই যা নেই!

নইলে নামে নাম মিলে যাচ্ছে, ডাক্তারে ডাক্তার। বাড়িও কাছেপিঠে।

‘ভ্রান্তিবিলাস’ আটকায় কে?

ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে এসে চল্লিশ ছুঁইছুঁই মা তাই আকুল গলায় বলছেন— ডাক্তারবাবু, এ বার ভোটটা আপনাকেই দেব। ছেলেটাকে আমার ভাল করে দেখে দিন।

শিশুর বুকে স্টেথো বসাতে গিয়ে থমকে যান ডাক্তার— কীসের ভোট?

—ও বাবা! আমাদের দেওয়ালে বড়-বড় করে আপনার নাম লিখেছে তো, আবার বলছেন কীসের ভোট!

এত দিন কত কঠিন-কঠিন ‘কেস’ সামলে এসেছেন। কিন্তু এ বার তো ‘কেস’ পুরো গড়বড়!

জন্মে কোনও দিন রাজনীতির ছায়া মাড়াননি। স্টেথো ধ্যান, স্টেথো জ্ঞান। ছোটবেলা থেকে ‘মার্কস’ বলতে বুঝে এসেছেন পরীক্ষার খাতা আর ঝান্ডা দেখলে দূর থেকে গড় করেছেন।

সেই তাঁর কাছেই দিন নেই রাত নেই, খালি ফোন আসছে—

‘‘এ সব কী শুনছি! শেষমেশ ভোটে দাঁড়িয়ে পড়লে?’’

‘‘বাধাই হো ভাই, বাধাই হো!’’

‘‘কী ভাই, ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো! ভোটে দাঁড়িয়ে গেলে, আর এক বার বললেও না!’’ —শিকাগো থেকে ফোন করে রাগ দেখাচ্ছে স্কুলের বন্ধু।

চেনা গলা গম্ভীর হয়ে বলছে— ‘‘তুমিও কি না শেষে হাওয়াই চটিতে পা গলালে!’’

ঠান্ডা ঘরে বসেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে শিশু বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন কবীরের। কিছুতেই কাউকে তিনি বুঝিয়ে উঠতে পারছেন না— এই হুমায়ুন সেই হুমায়ুন নয় রে বাবা, এই কবীরও সেই কবীর নয়। জোড়াফুল হাতে যে দাঁড়িয়েছে, সে অন্য লোক। ফেসবুকে গিয়ে দেখুনই না, তার কেমন বাবরি চুল আর ইয়া গোঁফ। আমার তো চাঁচা-পোঁছা!

গোলটা পেকেছে আসলে তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই। মুর্শিদাবাদের রানিনগর কেন্দ্রের প্রার্থী, লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন কবীরের নামে দেওয়াল থেকে ফ্লেক্স ছয়লাপ করে ফেলেছে তৃণমূল— ‘ডাক্তার হুমায়ুন কবীরকে ভোট দিন!’’

ব্যস! আর যায় কোথায়?

জনতা কি আর যাবতীয় হুমায়ুনের ঠিকুজি-কুষ্ঠি জেনে বসে আছে?

ডোমকলের জনতা ধরেই নিয়েছে, তাদের ডাক্তারবাবুই ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। হুমায়ুনের অল্প বয়সে দিব্যি নামডাক হয়েছে। বাচ্চাদের মায়েরা তাঁকে পছন্দই করেন। ডাক্তারবাবুকে খুশি করতে এখন কেউ গদগদ গলায় বলছেন— ‘‘দেখে নেবেন, দিদি কিন্তু এ বারও জিতছেন। আপনি এ বার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে যাবেন!’’

কেউ আবার ডাক্তারের কাছে

মুখ খুলতে না পেরে কম্পাউন্ডার আব্দুল হানিফের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছেন, তাঁরাও পাক্কা তৃণমূল। আউটডোরে নাম তোলাতে এসেও লোকে শুনিয়ে দিচ্ছে— ‘‘আরে, আমরা তৃণমূল করি গো! ডাক্তার ছাড়া কাউকে ভোট দেব না।’’ ভোটের সময়ে ডাক্তার রোগী দেখবেন কি না, জিতলে এখানে থাকবেন না কলকাতা চলে যাবেন— উড়ে আসছে এমন সব প্রশ্নও।

বাঁকা কথাও বাদ যাচ্ছে না।

ডোমকল হাসপাতাল চত্বরে পা রাখলেই কানে আসছে ফিসফাস। আউটডোরে লাইনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা সামনের জনকে বলছেন, ‘‘ডাক্তারের টাকার লোভ দেখেছ! এত মাইনেতেও পোষাচ্ছে না। মন্ত্রী হয়ে মোটা টাকা লুঠবে।’’ সঙ্গে-সঙ্গে পাশ থেকে টিপ্পনী— ‘‘ডাক্তারিতে আর কত টাকা? নেতা হলে বাড়ি এসে বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে যাবে। ‘নারদে’ দেখেছ না?’’

নাম-বিভ্রাটে কাত হয়ে দু’বার ফোন করে ফেলেছে স্বাস্থ্য ভবনও। হুমায়ুন বলেন, ‘‘এক দিন স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোনে বলল— ‘আপনি ডাক্তার হুমায়ুন কবীর?’ আমি ‘হ্যাঁ’ বলতেই ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল—‘আপনার কাজটা হয়ে গিয়েছে।’ মাথামুন্ডু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনটা কেটে দিল।’’ পরের বার অবশ্য ফোন আসতে ‘রং নাম্বার’ বলে তিনি নিজেই লাইন কেটে দেন।

যাঁর জন্য মাথার চুল খাড়া, তাঁকে কখনও দেখেছেন না কি?

‘‘না। উৎপাত শুরু হতে ফেসবুকে খুঁজে বের করে ছবি দেখেছি।’’

আর তিনি? দ্বিতীয় হুমায়ুন?

না, অচেনা কারও মুখ দেখাদেখির ধার-কাছ দিয়েও তিনি যাচ্ছেন না। বরং গোটা গল্পে বিরোধীদের ‘গভীর চক্রান্ত’ দেখতে পাচ্ছেন!

সে শেক্সপিয়র যতই ‘কমেডি অব এররস’ লিখে বিশুদ্ধ মজা করার চেষ্টা করুন বা বিদ্যাসাগর ‘ভ্রান্তিবিলাস’, রানিনগরের হুমায়ুন কোনও আমোদই পাচ্ছেন না।

প্রায় ‘আমাদের কোনও শাখা নাই’ ঢঙে তিনি দাগিয়ে দিচ্ছেন— ‘‘উনি তো শেখ হুমায়ুন কবীর, আর আমি স্রেফ হুমায়ুন কবীর।’’

এ কি কমেডি, না ট্র্যাজেডি?

assembly election 2016 Domkal name confusion doctor tmc candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy