Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
দ্বন্দ্ব মিটিয়ে জয়

বাড়ল ব্যবধান, দুর্গ ধরে রেখে স্বস্তিতে স্বপন

সমস্যার অন্ত ছিল না মাস কয়েক আগেও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জেরবার ছিলেন নেতৃত্ব। ভোট ঘোষণার পরে বাম-কংগ্রেস জোট সুর চড়াতে শুরু করায় মাথাব্যথা বেড়েছিল। কিন্তু সমস্ত আশঙ্কার মেঘ সরিয়ে জেলার গ্রামীণ এলাকায় গত বারের থেকেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে জিতেছে তারা।

জয়ের পরে স্বপন দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

জয়ের পরে স্বপন দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

সমস্যার অন্ত ছিল না মাস কয়েক আগেও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জেরবার ছিলেন নেতৃত্ব। ভোট ঘোষণার পরে বাম-কংগ্রেস জোট সুর চড়াতে শুরু করায় মাথাব্যথা বেড়েছিল। কিন্তু সমস্ত আশঙ্কার মেঘ সরিয়ে জেলার গ্রামীণ এলাকায় গত বারের থেকেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে জিতেছে তারা। সব থেকে বেশি ব্যবধানে জিতেছেন খোদ জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ। চাপ কাটিয়ে তাই এখন স্বস্তিতে তিনি।

Advertisement

২০১১ সালে বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে জিতেছিল তৃণমূল। পরে উপ-নির্বাচনে গলসি কেন্দ্রেও হাতে আসে তাদের। এ ছাড়া খণ্ডঘোষের সিপিএম বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ ও কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় যোগ দেন তৃণমূলে। ইতিমধ্যে নানা কেন্দ্রে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হয়েছে তৃণমূল। এক গোষ্ঠীর উপরে অন্য গোষ্ঠীর হামলা, মারধর, এমনকী খুনের অভিযোগও উঠেছে। দলীয় নেতৃত্ব বারবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধের বার্তা দিয়েছেন। তাতেও পুরোপুরি কাজ না হওয়ায় কোন্দল রুখতে নানা পক্ষের নেতাদের ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক হয়েছে থানায়-থানায়।

এ বার যে দুই কেন্দ্র তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে, সেই জামালপুর ও পূর্বস্থলী উত্তরে হারের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দলের অন্তর্কলহের কথাই। অন্য নানা কেন্দ্রে কোন্দলে রাশ টানা সম্ভব হল কী ভাবে? তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের মাস পাঁচেক আগে থেকে দলীয় নেতৃত্ব কোমর বেঁধে নামেন। দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস ও জেলা সভাপতি স্বপনবাবু দফায়-দফায় বৈঠক করেন। জেলার নেতাদের কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে বৈঠক করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে হুঁশিয়ারি দিয়ে দেওয়া হয়, ভোটে ফল খারাপ হলে তাঁদের উপরে দায় বর্তাবে।

তার পরেও কিছু এলাকা নিয়ে সংশয় থাকায় সেখানে সংগঠন দেখভালে স্থানীয় নেতৃত্বের মাথার উপরে বসানো হয় জেলাস্তরের কোনও নেতাকে। যেমন, বর্ধমান দক্ষিণ ও ভাতারের দায়িত্বে ছিলেন দেবু টুডু। দলের দ্বন্দ্বের আঁচ যাতে ভোটবাক্সে না পড়ে, সে জন্য তিনি দফায়-দফায় বৈঠক করেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তবে টিকিট না পাওয়ায় কিছু কেন্দ্রে কয়েক জন নেতার মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু ভোটের প্রচারে জেলায় এসে দলনেত্রী ওই নেতাদের নাম করে জানিয়ে যান, ভোটে টিকিট না দেওয়া হলেও অন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দেওয়া হবে তাঁদের। তাতে অনেকটা কাজ হয়েছে বলে মনে করছে জেলা তৃণমূলের একটি অংশ।

Advertisement

এর সঙ্গে প্রচারে গত পাঁচ বছরের উন্নয়নের খতিয়ানকে হাতিয়ার করাও কাজে দিয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। বন্যায় ক্ষতিপূরণের কত চেক বিলি হয়েছে, কত জন নানা রকম ভাতা পেয়েছেন, সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা কারা পেয়েছেন, এ সবের তালিকা নিয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রচার চালানো হয়েছে। স্বপনবাবুর নিজের কেন্দ্র পূর্বস্থলী দক্ষিণে লিফলেট ছড়িয়ে এ সব তথ্য জানানো হয়েছিল। তিনি জিতেছেন প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে। গত বার যেখানে জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ১৬ হাজার ভোটের।

স্বপনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি ৪০ হাজার ভোটে জিতব বলে আশা করেছিলাম। সে দিক থেকে ব্যবধান কিছুটা কম হয়েছে। এ বার ভোট দেওয়ার মাপকাঠি হিসেবে মানুষ উন্নয়নকে বেছে নিয়েছে। তাই আমরা বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছি।’’ তাঁর দাবি, সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই রায়না, মন্তেশ্বরের মতো দীর্ঘ দিন বামেদের হাতে থাকা আসনও এ বার তাঁদের দখলে এসেছে।

চাপ উধাও। স্বপনবাবু তাই এখন চওড়া হাসছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.