Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রশ্নবাণে মদনের বর্ম পুলিশি সাইরেন

এমন বিচিত্র অভ্যর্থনা কেউ কখনও দেখেছে কি না সন্দেহ! আগমনেও সাইরেন। প্রস্থানেও সাইরেন বাজল নাগাড়ে। কার জন্য সাইরেন?

আলিপুর আদালতের বাইরে মদন মিত্র। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

আলিপুর আদালতের বাইরে মদন মিত্র। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

এমন বিচিত্র অভ্যর্থনা কেউ কখনও দেখেছে কি না সন্দেহ! আগমনেও সাইরেন। প্রস্থানেও সাইরেন বাজল নাগাড়ে।

কার জন্য সাইরেন?

প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সারদা মামলায় অভিযুক্ত মদন মিত্রের জন্য।

বাজাল কে?

পুলিশ।

বাজানো হল কোথায়?

আদালতের আঙিনায়।

কেন সাইরেন?

রহস্য সেটাই।

আর রহস্য বলেই জল্পনাও বিস্তর। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে মদনবাবুর আগমন ও বিদায়ের দুই পর্বে পুলিশি সাইরেনের দু’রকম তাৎপর্য দেখছে আইনজীবীদের দু’টি শিবির। এক শিবিরের ব্যাখ্যা, শাসক দলের জেলবন্দি প্রার্থী মদনবাবু ভোটের মুখে সাংবাদিকদের সামনে যাতে বেফাঁস কিছু বলে না-ফেলেন, সাইরেনের শব্দ-আবরণ সেই জন্যই।

এই ব্যাখ্যা ধোপে টেকার যোগ্য নয় বলেই জানাচ্ছে অন্য শিবির। তারা বলছে, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে সঙ্গে নারদ নিউজের স্টিং বা হুলেও বিদ্ধ প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁকে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নবাণ থেকে রক্ষা করতেই পুলিশের এই সাইরেন-বর্ম।

সাইরেন না-হোক, সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষের মুখ বন্ধ করার জন্য অন্য রকম পথ নিচ্ছিল পুলিশ। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অনেকে ধরা না-পড়ায়, অনেকে ধরা পড়েও জামিন পেয়ে যাওয়ায় বিস্তর ক্ষোভ কুণালের। কারণ, তাঁর জামিন হয়নি। সুযোগ পেলেই সংবাদমাধ্যমের কাছে সেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তার জন্য তিনি মূলত বেছে নিচ্ছিলেন আদালতে হাজিরার দিনগুলোকেই। পরে সতর্ক হয়ে যায় পুলিশও। কয়েক বার তাঁকে চ্যাংদোলা করে সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরে পুলিশ অন্য পথ ধরে। আদালতে ঢোকা বা বেরোনোর সময় কুণাল যাতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে না-পারেন, বললেও তাঁর বচন যাতে সাংবাদিকদের কানে না-পৌঁছয়, সেই জন্য ভ্যানের গায়ে ধাঁইধপাধপ চাপড় আর ‘হুক্কা-হুয়া’ আওয়াজ করতে থাকে পুলিশ।

মঙ্গলবার মদনবাবুর ক্ষেত্রে পুলিশ তার থেকেও অভিনবতর উপায় বার করেছিল। অভিযোগ, নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনে শাসক দলের অন্য নেতানেত্রীদের সঙ্গে ছবি দেখা গিয়েছে মদনবাবুরও। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরে এ দিনই প্রথম তাঁকে আদালতে তোলা হয়। নারদের অভিযোগের ব্যাপারে প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমে যে মুখিয়ে থাকবে, সেটা আন্দাজ করেছিলেন পুলিশকর্তারা। সেই জন্য বেলা ১২টা থেকে দুই ডিসি-র নেতৃত্বে পুলিশ আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারকের এজলাস ঘিরে ফেলে।

আদালতের লক-আপের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। মদনবাবুকে নিয়ে গাড়ি সেখানে দাঁড়ানো মাত্র সাইরেন বাজাতে শুরু করে পুলিশ। সাইরেন যখন থামল, তত ক্ষণে ওই অভিযুক্ত আদালতের ভিতরে চলে গিয়েছেন। সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করার কোনও সুযোগই পাননি। কুণাল কাঠগড়ায় থাকাকালীন অনেক কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়ে। এ দিন এজলাসের ভিতরে মদনবাবুর সঙ্গে কেউ যাতে কথা বলতে না-পারেন, সেই জন্য তাঁর চেয়ারের চার পাশ ঘিরে রেখেছিলেন পুলিশকর্মীরা।

বেশ কিছু ক্ষণ পরে আবার বেজে ওঠে সাইরেন। তার মধ্যেই আদালত কক্ষ থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয় মদনবাবুকে। সাইরেনের কোলাহলের মধ্যে সংবাদমাধ্যম এ বারেও তাঁকে প্রশ্ন করার কোনও সুযোগ পায়নি।

ওই অভিযুক্তকে সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে রাখার এই চেষ্টা কেন?

সাইরেন-নাট্যের প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীদের একটি শিবিরের ব্যাখ্যা, কুণালের ক্ষেত্রে যে-কারণে ধাঁইধপাধপ বা হুক্কাহুয়া করা হচ্ছিল, মদনবাবুর ক্ষেত্রে সাইরেন বাজানোর উদ্দেশ্য তার থেকে আলাদা। সাংবাদিকদের কাছে কুণালের মুখ বন্ধ রাখতেই আওয়াজ করা হচ্ছিল। আর নারদ নিয়ে মদনবাবু যাতে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার না-হন, সেই জন্যই সাইরেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madan Mitra Police Protect
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE