Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিরোধই বদলে দিল বুথের চেহারা

ছবি এক: সকাল আটটা। চিড়বিড়ে রোদ এবং ভ্যাপসা গরমে বৌমাকে নিয়ে ঘাটালের ভাগীরথপুর বুথে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধা পদ্ম ঘোষ। বুথের কাছাকাছি যেতেই তৃণমূলের ক্যাম্প থেকে ঠাকুমা ঠাকুমা বলে এগিয়ে এলেন দলীয় কর্মীরা।

বিধি ভেঙে মহিলা ভোটারকে ভোট দিতে সাহায্য করছেন এক তৃণমূল কর্মী। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

বিধি ভেঙে মহিলা ভোটারকে ভোট দিতে সাহায্য করছেন এক তৃণমূল কর্মী। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল ও দাসপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

ছবি এক: সকাল আটটা। চিড়বিড়ে রোদ এবং ভ্যাপসা গরমে বৌমাকে নিয়ে ঘাটালের ভাগীরথপুর বুথে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধা পদ্ম ঘোষ। বুথের কাছাকাছি যেতেই তৃণমূলের ক্যাম্প থেকে ঠাকুমা ঠাকুমা বলে এগিয়ে এলেন দলীয় কর্মীরা। শুধু এটুকু দেখার অপেক্ষা। ভোটারদের আটকানো হচ্ছে বলে চেঁচামেচি জুড়ে দেয় জোট কর্মীরা। এমন ভাবে যে তাঁদের ধেয়ে আসবে বিরোধীরা ভাবতে পারেননি অনেক তৃণমূল কর্মীই। রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন তাঁরা। আর নিশ্চিন্তে বৌমাকে নিয়ে ভোট দিতে ঢুকলেন পদ্মদেবী।

ছবি দুই: দুপুর দেড়টা। দাসপুরের সাগরপুর বুথে স্ত্রীকে নিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কোটাল। ভোট দিতে ঢোকার আগে কানে এল জনা চারেক ছেলে বলছে, ‘‘দাদা, ভোট মিটে গেলেই আপনাদের সোনার দোকানের উপর যে সমস্যা চলছে-তা মিটে যাবে। ভোটটা অন্তত দেবেন!’ শাসক দলের ওই কর্মীদের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই সামনে চলে এলেন সিপিএম কর্মীরা। বললেন, ‘বুথে যান দাদা। যাঁকে খুশি ভোট দেবেন।’

বুথ দখলের আশঙ্কা ছিলই। তাই আগে-ভাগে সিপিএম তাদের কর্মীদের রীতিমতো প্রশিক্ষ‌ণ দিয়েছিল। হাতে মোবাইল নিয়ে প্রতিরোধে নেমেছিল বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থকরাও। প্রতিরোধ যে এতটা কড়া হবে তা বোধহয় ভাবতে পারেননি তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাও। তার জেরে ঘাটাল ও দাসপুর –দু’টি বিধানসভাতেই কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট মিটল শান্তিতেই। ঘাটাল বিধানসভার পাঁচ-সাতটি বুথে কমবেশি কিছু অভিযোগ উঠলেও তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি দাসপুর বিধানসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই তোলেনি সিপিএম। সিপিএমের দাসপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গুণধর বোস বলেন, “এত শান্তিতে ভোট কোনও বার হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি ছিল ভালই। আমরাও সতর্ক ছিলাম।”

এ দিন ঘাটালের মান্দারিয়া বুথে ইভিএম মেশিনে তৃণমূল প্রার্থীর প্রতীক চিহ্নের কাছে নীল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোট কর্মীরা সমস্ত দলের প্রতীকের সামনেই নীল কালির দাগ লাগিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় বহিনীর সামনেই বুথে ঢুকে ঘাটাল বিধানসভার জোট প্রার্থী কমল দোলই বলেন, “ওরা চেষ্টা করেছিল বুথ দখল করার। কিন্তু জোট কর্মী ও মানুষের শক্তির কাছে হার মেনে পিছু হটতে বাধ্য হয়।’’ যদিও ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলই বলেন, “ওরা চাইছিল, গণ্ডগোল করে প্রচারের আলোয় আসতে। আমাদের এসবের দরকার নেই। মানুষ তো আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016 Resistance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE