Advertisement
E-Paper

ভোটের তাপে বাড়তি জ্বালা দহন-আর্দ্রতার

স্বস্তিতে ভোট দেওয়া এ বার বোধ হয় বাংলার বরাতে নেই। রাজনৈতিক তাপ আর পারদের রক্তচক্ষু, অস্বস্তিটা দু’দিক থেকেই। আজ, সোমবারের ভোটে শাসক ও বিরোধী শিবিরের যুযুধান হুঙ্কারের উত্তাপ থাকছে ষোলো আনা। তার সঙ্গে সঙ্গত করতে তৈরি চাঁদিফাটা গরম, এবং আর্দ্রতাও!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৯

স্বস্তিতে ভোট দেওয়া এ বার বোধ হয় বাংলার বরাতে নেই। রাজনৈতিক তাপ আর পারদের রক্তচক্ষু, অস্বস্তিটা দু’দিক থেকেই। আজ, সোমবারের ভোটে শাসক ও বিরোধী শিবিরের যুযুধান হুঙ্কারের উত্তাপ থাকছে ষোলো আনা। তার সঙ্গে সঙ্গত করতে তৈরি চাঁদিফাটা গরম, এবং আর্দ্রতাও!

কলকাতার উত্তর শহরতলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় আজ নির্বাচনে প্রকৃতির মর্জি সম্পর্কে এমনই পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের। অর্থাৎ ভোটের উত্তাপের সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিও পোহাতে হবে মানুষজনকে। দহন এড়াতে সকাল সকাল ভোট দিয়ে আসার প্রেসক্রিপশনই দিচ্ছেন আবহবিদেরা। আর বলছেন, ছাতা-টুপি-জল নিতে যেন ভুল না-হয়।

কয়েক দিন ধরে রাজ্যের পশ্চিমি জেলাগুলিতে নাগাড়ে তাপপ্রবাহ চলছিল। রবিবার সেই তালিকায় ফের জুড়েছে কলকাতার নামও। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, এ দিন কলকাতার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা কিনা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই সেটা তাপপ্রবাহ।

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার তাপমাত্রাও এ দিন ৪০ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে। অর্থাৎ সেখানেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ছিল। আজ, সোমবার কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার বেশির ভাগ জায়গাতেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮-৩৯ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকতে পারে বলে জানান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের একাংশ। রবিবার মহানগরীর পারদ যেখানে ৪০.২ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, আজ সেটা কী ভাবে ডিগ্রি দুয়েক নামতে পারে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি জানান, অসম থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। সেই অক্ষরেখা কমবেশি জোলো হাওয়া ঢোকাবে দক্ষিণবঙ্গে। তার প্রভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে পারদ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও মাথাচাড়া দেবে অস্বস্তি।

দক্ষিণবঙ্গে এ বার গোড়া থেকেই গরমের চরিত্র বদলে গিয়েছে। গরমে ঘামের বদলে শুকনো হাওয়ারই দাপট দেখা যাচ্ছে বারবার। গাঙ্গেয় বঙ্গের অনেক বাসিন্দাই বলছেন, এ রাজ্যে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় ‘লু’ বা শুকনো গরম হাওয়ার দাপটের কথা শুনেছিলেন তাঁরা। তার স্বরূপটা ঠিক কেমন, সেটা এ বার হাড়ে হাড়ে মালুম হচ্ছে। আর পশ্চিমের ওই জেলাগুলি তো জ্বলেপুড়ে খাক হওয়ার জোগাড়! শনিবার বাঁকুড়ার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৪৬.৭ ডিগ্রিতে! হাওয়া অফিসের খবর, সাম্প্রতিক কালে এপ্রিলে ওই জেলায় পারদ কখনও এতটা ওঠেনি। এ দিন বাঁকুড়ার তাপমাত্রা কিছুটা নেমে হয় ৪৩.৮ ডিগ্রি। তবে তাপপ্রবাহ বহাল। বীরভূম, বর্ধমান এবং আসানসোলেও পারদ ছিল ৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি।

হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বারের শুকনো গরমের জন্য দায়ী বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়। আরও স্পষ্ট করে বললে উচ্চচাপ বলয়ের অস্থিরতা। গ্রীষ্মে মূলত ওই বলয়ই দক্ষিণবঙ্গে জোলো হাওয়া বা জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এ বার তাকে বাংলা উপকূল থেকে সরে যেতে হয়েছে। তার শূন্যস্থানের দখল নেওয়ার জন্য ঝাড়খণ্ড থেকে হুহু করে গরম হাওয়া ছুটে আসছে এ রাজ্যে। আবহবিদেরা বলেছিলেন, এই পরিস্থিতিতে নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে কপাল কিছুটা খুলতে পারত রাজ্যের। কারণ সেই অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে জোলো হাওয়া ঢোকার কথা। তাতে মহা-অস্বস্তিকর প্যাচপেচে ঘাম হতো ঠিকই। তবে সেই সঙ্গে আশা থাকত বৃষ্টিরও। কিন্তু এপ্রিলের গোড়া থেকে তেমন নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্তের দেখা মিলছিল না।

অবশেষে এপ্রিলের অন্তিম লগ্নে এসে অসম থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়ায় জোলো হাওয়া ঠেলে ঢুকতে শুরু করেছে বাংলায়। তা হলে কি এ বার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে?

‘‘এখনই তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই,’’ বলছেন গোকুলবাবু। তবে আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই জলীয় বাষ্প থিতু হলে সাময়িক স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।

কী ভাবে আসতে পারে স্বস্তি?

আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের ব্যাখ্যা, এই মুহূর্তে যে-তাপমাত্রা রয়েছে, তাতে পশ্চিমাঞ্চলের হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠছে। নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে জোলো হাওয়া সেখানে ছুটে যাওয়ায় ঠান্ডা ও গরম হাওয়ার মিলনে উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে পারে। বৈশাখের প্রচণ্ড দহনে প্রকৃতিরই যে-দূত ত্রাতার ভূমিকা নেয়, সেই কালবৈশাখী হাজির হতে পারে ওই উল্লম্ব মেঘ থেকেই। সেই ঝড়বৃষ্টি সাময়িক রাশ পরাতে পারে গরমের দাপটে। কিন্তু সবই সম্ভাবনার কথা। বজ্রগর্ভ মেঘ বা কালবৈশাখী হবে কি না, হলেও ঠিক কোথায় হবে, সেটা আগেভাগে নিশ্চিত করে বলা যায় না।

‘‘তার উপরে এ বার প্রকৃতির যা খামখেয়ালি মেজাজ, তাতে এমন পূর্বাভাস দেওয়া আরও কঠিন,’’ বলেন হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী।

assembly election 2016 hot weather
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy