Advertisement
E-Paper

নিজের ভোট নিজে দেবেন, অভয় নরেন্দ্রর

গত লোকসভায় বুথে এসে নিজের ভোটটা দিতে পারেননি অনেকেই। জানতে পেরেছিলেন, আগেই পড়ে গিয়েছে তাঁদের ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওই বুথে ঢুকে রিগিং করেছে শাসকদল। সোমবার সকালে বর্তমান হালহকিকতের খোঁজ নিতে আচমকাই ইলামবাজারের সেই আমখই গ্রামে পৌঁছে গেলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহান। এ বারের বিধানসভায় নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে উৎসাহ তো ছিলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০২:০২
দুয়ারে কমিশন। সোমবার সকালে আমখই গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র

দুয়ারে কমিশন। সোমবার সকালে আমখই গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র

গত লোকসভায় বুথে এসে নিজের ভোটটা দিতে পারেননি অনেকেই। জানতে পেরেছিলেন, আগেই পড়ে গিয়েছে তাঁদের ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ওই বুথে ঢুকে রিগিং করেছে শাসকদল।

সোমবার সকালে বর্তমান হালহকিকতের খোঁজ নিতে আচমকাই ইলামবাজারের সেই আমখই গ্রামে পৌঁছে গেলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহান। এ বারের বিধানসভায় নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে উৎসাহ তো ছিলই। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিক এবং ভোটের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সামনে মিলল প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাসও। প্রশাসনের কর্তাদের মিনিট পনেরোর ওই পরিদর্শনে অনেকটাই আস্থা ফিরে পেয়েছে চৌপাহাড়ি জঙ্গল ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রাম।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবারের বৈঠকের পরেই আমখই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পর্যবেক্ষক দল। বাঁকুড়া যাওয়ার আগে এ দিন সকাল ১১টা পনেরো নাগাদ ঝটিকা সফরে ওই গ্রামে পৌঁছয় কমিশনের ওই প্রতিনিধিদল। ঘটনাস্থল বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ইলামবাজার থানার চৌপাহাড়ি জঙ্গল এলাকার ১২৭ নম্বর বুথ মুর্গাবনির আমখই গ্রামে। শাল-সেগুনের জঙ্গলঘেরা আমখই গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গোটা সাতেক গাড়ি নিয়ে হাজির হয় চৌহানের দল। গ্রামের চাতালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। গ্রামের বাসিন্দা মাতাল মুর্মু, মঙ্গলা বাস্কি, শুকল মুর্মু, মনসা বাস্কিরা জানান, সরকারের বড় কর্তারা এসেছিলেন। তাঁরা হিন্দিতে কথা বলছিলেন। বাংলায় এক অফিসার তাঁদের সেগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ভোট দেওয়া নিয়ে কী সমস্যা রয়েছে, আমরা ভয় পাচ্ছি কিনা ওঁরা জানতে চাইলেন। ভোটের সময়ে আমরা ঠিকমতো নিরাপত্তা পাব বলেও জানালেন। সঙ্গে নিজের ফোন নম্বরও দিয়েছেন। আমাদের ভোট যেন আমরাই দিই, ওঁরা সে কথাও বলেছেন।’’ পাশাপাশি ভোট দিতে কোন সমস্যা হলে জওয়ান এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।

ঘটনা হল, গত বিধানসভা ভোটের পরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা এলাকায় পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি— কোথাও কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়ে কাউকে মনোনয়ই তুলতে দেয়নি। শুধুমাত্র জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সিপিএমের অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। সেই সময় থেকেই এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব ছিল বিভিন্ন বিরোধী দল। ওই বুথে ৮৫৯ ভোটার রয়েছে। কয়েরপুর, ফুলবাগান, খয়েরডাঙা, জামবুনি, নিলবুনি, খাঁইয়েরপাড়া মুর্গাবনি এলাকার ওই সকল বাসিন্দারা ভোট দিতে বুথে যান মুর্গাবনিতে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি কর্মী শুকলাল মুর্মু ও দলের ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, ‘‘লোকসভায় এলাকার বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে রিগিং করেছে তৃণমূল। তাই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।’’ গত লোকসভা ভোটে ওই বুথে সিপিএম ৫১৫, তৃণমূল ১৯৬, বিজেপি ৪১, জেএমভি ৫, এসইউসি ৪ ও কংগ্রেস ৩টি ভোট পেয়েছিল। নোটা ১৯টি। বিজেপি-র অভিযোগ, ওই এলাকায় তৃণমূলের কোনও ভোট পাওয়ারই কথা নয়। কিন্তু রিগিং করে তারা ভোট করেছে। শুধু বিরোধীরা নয়, তাঁদের ভোট গতবার অন্যেরা দিয়ে দিয়েছিল, এ দিন এমন অভিযোগ শোনা গেল বাসিন্দাদের মুখেও।

এ দিন সেই বুথেরই ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলে যান চৌহান। ভোটারদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী অবশ্য বাইরের কাউকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। ফেরার পথে মিনিটখানেক আমখই গ্রামের ফসিল পার্কটিও ঘুরে দেখেন কমিশনের ওই প্রতিনিধিদল। পরে চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে সন্ত্রাস কায়েম করে তৃণমূল এলাকায় কাউকে মনোনয়ন করতে দেয়নি। লোকসভা ভোটের সময়েও ওরা ওই বুথ থেকে যা পেয়েছে, সেটাও ভয় দেখিয়ে রিগিং করে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনের কাছে তার আর্জি জানিয়েছিলাম।’’

তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘আসলে বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই ভুল বকছেন। মানুষ উন্নয়নের জন্যই আমাদের ভোট দিয়েছেন।’’

assembly election 2016 Narendra Chauhan special observer Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy