Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Election 2021

কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি সমন্বয়ে গোষ্ঠী করছে রাজ্য

অতি সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সরকারকে দ্রুত এই সমন্বয়-গোষ্ঠী তৈরির ব্যাপারে জোর দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:২২
Share: Save:

ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি পুরোপুরি বাহিনী কমান্ডারদের হাতেই রাখতে চেয়েছিল কেন্দ্র। যদিও রাজ্য জোর দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সমন্বয়ের উপরেই। এ বার নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় রাজ্যভিত্তিক সমন্বয় গোষ্ঠী (স্টেট লেভেল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ) তৈরি করছে রাজ্য সরকার। রাজ্য পুলিশের এক অফিসার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিভিন্ন শাখার অফিসারদের নিয়ে এই সমন্বয়কারী গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে।

অতি সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে রাজ্য সরকারকে দ্রুত এই সমন্বয়-গোষ্ঠী তৈরির ব্যাপারে জোর দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই চিঠি পেয়ে সমন্বয়-গোষ্ঠী তৈরিতে কালক্ষেপ করেনি রাজ্য।
ভোট ঘোষণা হওয়ার আগেই রাজ্যে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাহিনীর সব জওয়ানেরা পৌঁছে যাবেন রাজ্যে। কমিশন সূত্রের খবর, ভোট ঘোষণার পরে দফায় দফায় আরও বাহিনী পাঠাবে কেন্দ্র। তাদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সমন্বয় কী ভাবে এবং কেমন হবে, প্রধানত তা-ই নির্ভর করবে এই গোষ্ঠীর উপরে। আপাতত সিআরপিএফ (৬০ কোম্পানি), বিএসএফ (২৫ কোম্পানি), সিআইএসএফ (৫ কোম্পানি), আইটিবিপি (৫ কোম্পানি) এবং এসএসবি (৩০ কোম্পানি) জওয়ানেরা রাজ্যে আসছেন। ফলে এই প্রতিটি বাহিনীর শাখা থেকে একজন করে অফিসারকে রাখা হচ্ছে সমন্বয় দলে। রাজ্যের তরফে থাকছেন আইপিএস অফিসার বিনীত গোয়েল। কমিশন সূত্রের খবর, পরেও যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে, সকলে এই সমন্বয় দলের পরামর্শ এবং নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে।

প্রশাসনের পর্যবেক্ষকদের ধারণা, কোথায় এবং কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে, তার মূল একটা রূপরেখা তৈরি করে দেবে নির্বাচন কমিশনই। তার বাইরে প্রয়োজন মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করার কৌশল তৈরিই এই সমন্বয়ের অন্যতম বিষয় হতে পারে। রাজ্য পুলিশ কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে, তা-ও স্থির হয়ে যাবে সব বাহিনী প্রধানদের আলোচনায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, অতীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি কার কথায় পরিচালিত হবে, তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ কোন পথে হবে, গোলমালের সময় বাহিনী কোন এলাকায় যাবে বা কোন পথে এগোবে, তার দিকনির্দেশ সাধারণত করে থাকেন রাজ্য পুলিশের অফিসারেরাই। রাজ্যকে কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, গতিবিধির সেই নিয়ন্ত্রণ থাকুক কেন্দ্রীয় বাহিনীর কমান্ডারদের হাতেই। কিন্তু রাজ্য সেই প্রস্তাব খারিজ করে জানিয়েছিল, সাংবিধানিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা রাজ্যেরই বিষয়। ফলে বাইরের বাহিনী নিজেদের সিদ্ধান্তে কাজ করতে পারে না। অন্য রাজ্য থেকে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পক্ষে স্বল্প সময়ে স্থানীয় এলাকার পরিস্থিতি, ভাষা জেনে কাজ করা মুশকিল। তাই শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু ভোট পরিচালনার স্বার্থে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ের ঘাটতি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

বস্তুত, আগের নির্বাচনগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। সঠিক ভাবে বাহিনী ব্যবহারের প্রশ্নে রাজ্য পুলিশের ‘সদিচ্ছা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। আসন্ন ভোটের প্রস্তুতিতে রাজ্যে যখন নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ এসেছিল, তখনও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে উপযুক্ত এবং ইতিবাচক নিরাপত্তা বন্দোবস্তের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা। এই দিক থেকে রাজ্য ভিত্তিক সমন্বয় গোষ্ঠী তৈরির সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE