Advertisement
E-Paper

‘শান্তি’র ভোটে নেই বিরোধী এজেন্ট

ভোট ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে এসইউভি চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীকে দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহা।

সুরবেক বিশ্বাস ও দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৭

ভোট ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে এসইউভি চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীকে দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহা। তাঁর সহাস্য সম্বোধন, ‘‘আরে দেবেশবাবু,কী খবর?’’

ক্রিস্টোফার রোডের জীব শিব মিশন স্কুল। সকাল ১০টা ২৫। দেবেশ দাসের চোখমুখ বলে দিচ্ছে, তিনি যথেষ্ট বিব্রত।

‘‘কী আর খবর? আমার এজেন্টদের বার করে দিচ্ছে। আমি নিজে দু’বার এজেন্টদের ঢুকিয়ে দিয়ে এলাম।

তা-ও ওরা থাকতে পারছে না। এত হুমকি দিচ্ছে।’’

‘‘ঠিক আছে, আপনি এজেন্টদের নিয়ে আসুন। আমরা দু’জনে মিলে ওঁদের বসাব।’’

‘‘এখন আপনি ওঁদের বসিয়ে দেবেন। রাতে নিরাপত্তা কে দেবে?’’

‘‘আরে বাবা, দিনে-রাতে সব সময়ে নিরাপদ থাকবে। আপনি এজেন্টদের নিয়ে আসুন।’’

‘‘আপনার কন্ট্রোলে কি আদৌ কিছু আছে? প্রিসাইডিং অফিসার নিজে জড়িত। বুথের মধ্যে হুমকি, শাসানি দেওয়া হচ্ছে।’’

‘‘এটা আপনি কী বলছেন? কী পিসফুল ভোট হচ্ছে দেখুন।’’

‘‘বিরোধী দলের এজেন্টই যদি

বুথে না থাকে, তা হলে ভোট তো পিসফুল হবেই।’’

‘‘আহা, আমি তো আবার বলছি, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আপনার এজেন্টদের বসানোর ব্যবস্থা করব। আমাকে জানাবেন কিন্তু।’’ এ কথা বলে বেরিয়ে গেলেন এন্টালির তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহা।

এর পরে দেবেশ দাসকে মোবাইলে কাউকে বললেন, ‘‘ওরা যদি বসতে চায়, আমি ওদের বসানোর ব্যবস্থা করছি। স্বর্ণকমল সাহা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।’’

দুপুর দেড়টা নাগাদ ফের জীব শিব মিশন স্কুলের ১২৩ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল, সিপিএমের এজেন্ট নেই। আশ্বাসের পরেও ফিরে আসেননি। প্রিসাইডিং অফিসার, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা নিজে থেকে বেরিয়ে গেলে আমি কী করতে পারি?’’ তবে ওই প্রিসাইডিং অফিসারের মন্তব্য, ‘‘বুথে কোনও গণ্ডগোল, হুমকি, শাসানি কিছু হয়নি। কিন্তু কেউ ভয় পেলে, কেউ অপর পক্ষকে ইশারায় ভয় দেখালে কী করার আছে?’’

জীব শিব মিশনের চারটি বুথের মতো গোবিন্দ খটিক রোডের পূর্বাঞ্চল প্রভাতী সঙ্ঘ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারটি বুথের একটিতেও সিপিএম-এজেন্ট ছিলেন না। তাঁরা অবশ্য বুথে যাওয়ার কষ্টটুকুও করেননি। ডি এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধিকাংশ বুথেও সিপিএমের এজেন্ট ছিলেন না। আনন্দ পালিত রোডে, হোলি চাইল্ড স্কুলের কয়েকটি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। আর যে সব বুথে সিপিএম এজেন্ট ছিলেন, সংখ্যার বিচারে প্রতিপক্ষের কাছে তাঁরা কার্যত নগণ্য হয়ে গিয়েছেন।

স্বর্ণকমলবাবুর কথায়, ‘‘প্রত্যেক বুথে আমাদের আসলে চার জন করে এজেন্ট। এক জন আমার আর বাকি তিন জন আমার তিন ডামি প্রার্থীর।’’ মানে, তিন নির্দলের। প্রায় সব বুথেই এক পক্ষের চার জনের বিরুদ্ধে একা সিপিএম এজেন্ট দুর্বল হয়ে পড়েন।

দুপুরের পরে মতিঝিল বস্তি কল্যাণ স্কুলে মিতালি পাল ও পটারি রোডে শরৎচন্দ্র শূর ইনস্টিটিউশনে ব্রততী বসু— এই দুই সিপিএম এজেন্টের উপরে বুথের মধ্যেই হঠাৎ চড়াও হয় কয়েক জন। তাঁদের কাগজপত্র, ব্যাগও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ।

প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশবাবু বলেন, ‘‘আমরা চারের বিরুদ্ধে তিন দেব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু আমার এজেন্টই ভয়ে বসতে পারছেন না। সেখানে ডামি প্রার্থীদের এজেন্ট কী করবেন? এতটাই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল।’’ স্বর্ণকমল সাহার দাবি, ‘‘এ সব নাটক। আসলে ওদের সংগঠনই নেই। লোক নেই।’’

তিন বারের বিধায়ক দেবেশ দাসও স্বীকার করে নিলেন, ‘‘সংগঠন ভেঙে গিয়েছে। নতুন ভাবে সংগঠন তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে সব জায়গায় ভেবেছিলাম প্রতিরোধ হবে, সেখানেও হচ্ছে না। এ সব হিসেবের বাইরে ছিল।’’

সকাল সাড়ে ১০টায় সিপিএমের হিসেব ছিল, অন্তত দশ শতাংশ বুথে এজেন্ট নেই। দুপুর ১টায় দেখা গেল, আরও অন্তত ১৫ শতাংশ বুথ থেকে সিপিএম এজেন্ট বেরিয়ে গিয়েছেন।

বিকেলে কনভেন্ট লেনের মতিঝিল প্রাইমারি স্কুলে, ১১৯ নম্বর বুথে দেবেশ দাস প্রিসাইডিং অফিসার নরোত্তম দাসের কাছে শুনলেন, সিপিএমের এজেন্ট সাড়ে ১১টায় বেরিয়ে গিয়েছেন, আর ফেরেননি। তাঁর বদলিও কেউ আসেননি। বুথে তিন জন এজেন্ট সমস্বরে বলে উঠলেন, ‘‘আমরা তো ওকে চা, ঠান্ডা, খাবার সব খাওয়ালাম। তার পরেও চলে গেল।’’

শুনে হাসিমুখে বেরিয়ে গেলেন সিপিএম প্রার্থী। পরে দেবেশ দাস বলেন, ‘‘বাঘ যদি ছাগলকে খেতে দেয়, ছাগল ভয় পাবে না?’’

assembly election 2016 Debesh Das Swarna Kamal Saha TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy