Advertisement
E-Paper

গুরু বাঁচাও, ভোটে দাঁড়াব না! ববির দরজায় গিয়েছিলেন দেব

গুরু, কিছু করো! স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে এলিয়ে বসে গল্প শোনাচ্ছেন তিনি। আগ্রহী শ্রোতাকে বলছেন, ‘‘এই যে চেয়ারটায় তুমি বসে আছো, সেখানে বসেই ও আমাকে (এই কথা) বলেছিল!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১০
প্রচারে ব্যস্ত নায়ক। শুক্রবার পুরুলিয়ায় সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

প্রচারে ব্যস্ত নায়ক। শুক্রবার পুরুলিয়ায় সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

গুরু, কিছু করো!

স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে এলিয়ে বসে গল্প শোনাচ্ছেন তিনি। আগ্রহী শ্রোতাকে বলছেন, ‘‘এই যে চেয়ারটায় তুমি বসে আছো, সেখানে বসেই ও আমাকে (এই কথা) বলেছিল!’’

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ ‘ববি’ হাকিমের চোখেমুখে তখন গর্ব আর তাচ্ছিল্য মিলেমিশে একটা ফুরফুরে ভাব। যিনি দাবি করছেন, বাংলার ‘হল’ থেকে মাঠ— যে নায়ককে দেখলে ‘গুরুগুরু’ ধ্বনি ওঠে, সেই তিনিই বাড়ি বয়ে এসে ‘গুরু’ ডেকেছেন তাঁকে!

কেন? শুক্রবার নারদ-নিউজের প্রকাশ করা ফুটেজে ফিরহাদের ওই দাবি অনুযায়ী, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে কিছুতেই রাজি ছিলেন না সুপারস্টার দেব। অথচ তৃণমূল নেত্রীর অভিমানী চাপ উপেক্ষা করতেও পারছিলেন না। তাই ববির কাছে নায়ক এসেছিলেন একটা শেষ চেষ্টা করতে। এখন অবশ্য ভোট লড়ে-টড়ে তিনি তৃণমূল সাংসদ।

আনন্দবাজারের পক্ষে ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। নারদ-প্রধান ম্যাথু স্যামুয়েলের দাবি, গত লোকসভা ভোটের ঠিক আগে ছদ্মবেশে ববির ডেরায় গিয়ে তাঁকে টাকা দেওয়া-সহ যা যা দৃশ্য তিনি গোপন ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন, সে সবই এ বার প্রকাশ করে দেওয়া হল। এ দিনের ফুটেজে অবশ্য নতুন করে টাকা নেওয়ার কোনও দৃশ্য নেই। যা রয়েছে, তা পূর্বপ্রকাশিত ফুটেজের আগে এবং পরের কিছু কথোপকথন।

স্যামুয়েলের দাবি, সে দিন ফিরহাদের নির্দিষ্ট লোকের হাতে টাকা দিয়ে ফের তিনি মন্ত্রীর ঘরে আসেন। দেখেন, তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের ভাই তথা খানাকুলের বিধায়ক ইকবাল আহমেদের সঙ্গে আড্ডা জুড়েছেন ফিরহাদ। রসিয়ে রসিয়ে শোনাচ্ছেন ‘পাগলু-কাহিনি’।

ফুটেজে কী বলছিলেন ফিরহাদ? শোনা যাক— ‘‘শিবাজী পাঁজার বাড়ি নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে দিদি দেবকে ধরে ফেলল। বলল, ভোটে লড়তে হবে। দেব বলল, ‘দিদি, আমায় ছেড়ে দিন। আমার হাতে ৩০টা ছবি।’ দিদি রেগে গেল। বলল, ‘তা হলে আমাকে দিদি বলে ডেকো না।’ দেব ছেলেটা খুব ভাল। ডাউন টু আর্থ। দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবে।’’

এর পরেই সেই গুরু-পর্ব। ফিরহাদ বলছেন, ‘‘ও (দেব) বলেছিল, ‘গুরু কিছু করো। আমার এখন ‘পিক আওয়ার’। ১০ বছর পরে হলেও না হয় দেখা যেত।’’ এ বার অকস্মাৎ পিছলে গেল মন্ত্রীর জিভের লাগাম। তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ওর পোঁ*-এ প্রোডিউসার ঘুরছে। কী করা যাবে? দিদিকে এ সব বলার সাহস কার আছে? তাই ওকে বলা হল, পার্লামেন্ট এমন কী ব্যাপার? এক দিন কার্ড নিয়ে যাবে, সই করে চলে আসবে!’’

এমন ইঁদুর-কলে সত্যিই কি পড়েছিলেন ঘাটালের সাংসদ? দেব এ দিন বলেন, ‘‘এ বিষয়ে একটাও শব্দ খরচ করব না।’’ আর ফিরহাদ তো আগেই নারদ-ভিডিওকে ‘জাল, রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে রেখেছেন। বলেছেন, ‘‘দল এর জবাব দেবে।’’

দল অবশ্য এ দিন কিছু বলেনি। তবে শিবাজীর পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে দেবকে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেই কাহিনি শোনা গিয়েছে কয়েকটি সূত্রে। তাঁদের দাবি, ওই অনুষ্ঠানের পরের দিনই লোকসভা ভোটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা ছিল তৃণমূলের। সে দিনের অনুষ্ঠানে চায়ের আসরে মুখ্যমন্ত্রী আসার কিছু পরেই টালিগঞ্জের এক প্রযোজককে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছন দেব। গল্পগুজব করতে করতে মুখ্যমন্ত্রী আচমকাই বলেন, ‘‘এই দেব, তুমি দাঁড়িয়ে যাও না!’’

হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে দেব মৃদু আপত্তি তোলেন। শ্যুটিং নিয়ে তাঁর ব্যস্ততার কথাও বলেন। নেত্রী অনড়। তিনি তখন ওই প্রযোজককে দায়িত্ব দেন দেবকে রাজি করানোর। সূত্রটির দাবি, এর পর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা ধরে দেবকে বুঝিয়ে চলেন ওই প্রযোজক। অবশেষে নির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠকে ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় দেবের নাম।

বাকি গল্পটা নারদ-ভিডিওর সাহায্য ছাড়াও স্পষ্ট। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ‘পাগলু ডান্স’ করা তারকা পৌঁছে যান লোকসভায়!

আরও পড়ুন:
সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখুন, বললেন দেব

assembly election 2016 Dev election candidate MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy