খুব বেশি দিনের কথা নয়। ভাঙা কাঠের সেতুটা দিয়ে সাইকেল, মোটরবাইক, এমনকি চার চাকার ছোট গাড়িও চলাচল করত। খালের উপর সেই কাঠের সেতুর বদলে পাকা সেতু তৈরি করতে গত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে ঘটা করে শিল্যানাসও হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালের ভোট মিটে যাওয়ার পরও চক পাটনা এলাকায় নন্দীগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগকারী পাকা সেতু পায়নি চণ্ডীপুরের মানুষ।
দিঘা–কলকাতা সড়কে চণ্ডীপুর বাজার থেকে নন্দীগ্রাম যাওয়ার প্রধান সড়ক রয়েছে। আর ওই পাকা সড়ক ত্থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে দিঘা-কলকাতা সড়কে মগরাজপুর থেকে চকপাটনা, বয়াল এলাকা হয়ে নন্দীগ্রামে যাওয়ার গ্রামীণ পাকা সড়ক তৈরি হয়েছিল প্রায় ১০ বছর আগে। ওই সড়ক দিয়ে চণ্ডীপুর ও নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা যাতায়াত করে।
খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তরফে শিলান্যাস করার পর প্রায় পাঁচ বছর কাটলেও পাকা সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়নি। আর ওই পাকা সেতু তৈরি না হওয়ায় বাসিন্দাদের অসুবিধা বেড়েছে। কারণ কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর সেখানে এখন বাঁশের সেতু তৈরি করা হয়েছে। ফলে ওই পাকা সড়ক দিয়ে আগে ট্রেকার চললেও এখন তা বন্ধ। এখন সাইকেল, মোটর সাইকেল ছাড়া বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাকা সেতু তৈরির জন্য শিলান্যাসের পরও কেন কাজ হল না, সেটাই বোঝা গেল না। আর ২০১৬ সালের বিধানসবা নির্বাচনে সেটাই হাতিয়ার বামেদের। আর দিনে দিনে তাতেই অস্বস্তি বাড়ছে শাসকদল তৃণমূলের।
চণ্ডীপুর বিধানসভার বাম-কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী মঙ্গলেন্দু প্রধান বলেন, ‘‘মগরাজপুর থেকে চকপাটনা হয়ে নন্দীগ্রামে যাতায়াতের বিকল্প সড়ক হিসেবে ওই গ্রামীণ সড়ক তৈরি করা হয়েছিল বাম সরকারের আমলে। পাকা সড়ক তৈরির পর চকপাটনার কাছে সেতু তৈরির জন্য পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সেই কাজ থমকে গিয়েছে। এলাকার মানুষ এবার জবাব দেবেন।’’
শিলান্যাসের পরও সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ থাকা যে তৃণমূলের কাছে অস্বস্তির কারণ সেটা এক বাক্যে মানছেন এলাকার বিদায়ী বিধায়ক তথা এবার তৃণমূল প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। অমিয়কান্তিবাবু বলেন, ‘‘চক পাটনায় সেতু তৈরির উদ্যোগ আমরাই করেছিলাম। সেতু তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সময়মত কাজ না করায় সমস্যা হয়েছে।’’
তবে এই খামতিকে ঢাকতে তুলে ধরা হচ্ছে নানা উন্নয়নের পরিসংখ্যান। চণ্ডীপুরে ডিগ্রি, পলিটেকনিক কলেজ স্থাপন, আধুনিক মানের হাসপাতাল ও পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প গড়ার দাবি।
নন্দীগ্রাম লাগোয়া এই বিধানসভায় ২০১১ বিধানসভা ভোট ও ২০১৪ লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও শাসক দলকে এবার কঠিন লড়াইয়ে ফেলেছে দলের গোষ্ঠী কোন্দল ও বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট। ২০১১ সালে ভোটে তৃণমূল–কংগ্রেস জোট প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য সিপিএম প্রার্থী বিদ্যুৎ গুছাইতকে প্রায় ১২ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। তৃণমূল–কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৫০.৮০ শতাংশ ভোট। আর বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৪৪.০৪ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৯.৯০ শতাংশ ভোট। আর জোটের হিসেবে ধরলে বাম-কংগ্রেস জোটের দখলে ছিল ৪১.০২ শতাংশ ভোট।
বিগত দু’টো ভোটের ফলে শাসকদল এককদম এগিয়ে থাকলেও এবার ভোটে উদ্বেগের কারণ হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক বনাম দলের ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাসের গোষ্ঠীকোন্দল। প্রার্থী হিসেবে এবারও অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণার প্রায় একমাস পরেও ওই দুই নেতার মুখ দেখাদেখি ছিল না। শেষ পর্যন্ত তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে দুই নেতার সম্পর্কের সেই বরফ গললেও ভোটের বাক্সে তাঁর প্রতিফলন ঘটে কিনা তাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy