Advertisement
E-Paper

অরুণাভর এজেন্টকে পিটিয়ে পাকড়াও দুই

আধাসেনা আর ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশের দৌলতে সোমবার, ভোটের দিনটা মোটামুটি শান্তিতে কেটেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বাদ দিয়ে বুধবার রাতে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস শুরু হয়ে গেল বিধাননগর কেন্দ্রে। ওই রাতে দত্তাবাদে সুশান্ত সিকদার নামে এক সিপিএম-কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২২৫ নম্বর বুথে জোট প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন সুশান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৮
বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে জখম সুশান্ত সিকদার। বৃহস্পতিবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে জখম সুশান্ত সিকদার। বৃহস্পতিবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

আধাসেনা আর ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশের দৌলতে সোমবার, ভোটের দিনটা মোটামুটি শান্তিতে কেটেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বাদ দিয়ে বুধবার রাতে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস শুরু হয়ে গেল বিধাননগর কেন্দ্রে। ওই রাতে দত্তাবাদে সুশান্ত সিকদার নামে এক সিপিএম-কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২২৫ নম্বর বুথে জোট প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন সুশান্ত।

কংগ্রেস-সিপিএম জোট প্রার্থীর এজেন্ট হলে বিপদ হবে বলে শাসানি দেওয়া হয়েছিল ভোটের আগেই। তা সত্ত্বেও রিলিভার পোলিং এজেন্ট হয়ে বুথে বসেন সুশান্ত। সেই ‘অপরাধ’-এ ভোট মিটে যাওয়ার পরেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তার জেরে উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। দুই তৃণমূলকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম তারক বাগ ও রাজু দে। সুকান্তের বিরুদ্ধে তারকের স্ত্রীকে কটূক্তি করার পাল্টা অভিযোগও দায়ের হয়েছে থানায়।

ঠিক কী ঘটেছিল?

ভোটের দিন বিধাননগর কেন্দ্রে বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী অরুণাভ ঘোষের পোলিং এজেন্ট হয়ে ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলে ২২৫ নম্বর বুথে বসেছিলেন সুকান্ত। পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে ই এম বাইপাস মোড়ে দলীয় অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বালির মাঠের কাছে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই তৃণমূলকর্মী তারক ও রাজু তাঁর উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। তাঁকে টানতে টানতে বালির মাঠে নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়। লোকজন ছুটে এলে অভিযুক্তেরা সুকান্তকে ফেলে পালিয়ে যান। পুলিশ আসে। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সুকান্তকে। রাতেই অভিযোগ দায়ের করা হয় বিধাননগর দক্ষিণ থানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তারক এবং তার দলবল দীর্ঘদিন ধরে বালির মাঠ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিধাননগর পুলিশের কাছে আগেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। বিধাননগর পুর নিগমের ভোটের সময়ে ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলেই সিপিএম প্রার্থী রাধানাথ চাঁদকে বেধড়ক মারধর ও সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। এবং তাতেও উঠে এসেছিল তারকের নাম।

তাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। শাসক দলের পাল্টা অভিযোগ, একেবারেই ব্যক্তিগত একটি বিবাদে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে সিপিএম। তারকের স্ত্রীকে কটূক্তি করেছিলেন সুকান্ত। তারই প্রতিবাদে চড়থাপ্পড় মেরেছেন তারক। এর বেশি কিছু হয়নি। রাজু তখন তারকের সঙ্গে ছিলেন। ধৃত তারকের স্ত্রী ওই সিপিএম-কর্মীর বিরুদ্ধে কটূক্তি ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শাসক শিবিরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। ওই দলের নেতাদের দাবি, ‘‘মিথ্যার একটা সীমা থাকে। ভোটের আগে থেকেই লাগাতার অত্যাচার চালাচ্ছে তৃণমূল। তারক এবং তাঁর দলবল এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। সুকান্তকেও এজেন্ট হয়ে বুথে বসা চলবে না বলে ফরমান জারি করেছিলেন তারকেরা।’’ বিরোধী শিবিরের আরও অভিযোগ, মারধরের পরে বৃহস্পতিবারেও তারক এবং তাঁর সঙ্গীরা সুকান্তের পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন, সুকান্তেরা ভাড়াটে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে পাড়াছাড়া করে দেওয়া হবে। এর পাল্টা হিসেবে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মল দত্ত বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ তুলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম।’’

পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের তরফেই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুকান্তের বুকে ব্যথা রয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধাননগর হাসপাতালে আক্রান্ত ওই কর্মীকে দেখতে যান সিপিএমের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বিধাননগর পুর নিগমের ভোটে আক্রান্ত এ-বি ব্লকের বাসিন্দা প্রীতিকুমার সেনকেও।

এ দিনই দুপুরে প্রচার চলাকালীন সিপিএম প্রার্থীর ট্যাবলো আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে পাটুলির কেন্দুয়া মোড়ে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বেলা ১২টা নাগাদ যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর সমর্থনে পাটুলির গাঙ্গুলিবাগান থেকে একটি ট্যাবলো বেরিয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন বেশ কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ, পাটুলির উপনগরী স্পোর্টিং ক্লাবের কাছাকাছি আসতেই সেখানে বসে থাকা কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ওই ট্যাবলোর পিছু নেয়। ১টা নাগাদ পাটুলির কেন্দুয়া মোড়ের কাছে পৌঁছতেই তৃণমূল ট্যাবলোর উপরে হামলা চালায়। হেনস্থা করে ওই মিছিলে থাকা কর্মী-সমর্থকদেরও। স্থানীয় কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত, নান্টু পাল, শম্ভু সরকার-সহ কয়েক জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিএম। যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

Assembly Election 2016 Arunava Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy