Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শহর কার, ঠিক করবে গেরুয়া ভোট

মাঝ চৈত্রের কাঠফাটা রোদে তেতেপুড়েই প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল, সিপিএম। নির্দল প্রার্থীও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন ভোট চাইতে। কিন্তু গেরুয়ার দেখা নেই। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে এই বর্ধমান (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৬ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে তৃণমূলের পরেই ছিল তারা। যদিও শাসক-বিরোধী দু’পক্ষেরই দাবি, ২০১৪ সালে দেশজোড়া মোদী ম্যাজিকের ছায়া পড়েছিল বর্ধমানে।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

মাঝ চৈত্রের কাঠফাটা রোদে তেতেপুড়েই প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল, সিপিএম। নির্দল প্রার্থীও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন ভোট চাইতে। কিন্তু গেরুয়ার দেখা নেই।

অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে এই বর্ধমান (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৬ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে তৃণমূলের পরেই ছিল তারা। যদিও শাসক-বিরোধী দু’পক্ষেরই দাবি, ২০১৪ সালে দেশজোড়া মোদী ম্যাজিকের ছায়া পড়েছিল বর্ধমানে। এ বার তা হবে না। তাহলে? গড় দখলে বিজেপির ঘরের ওই বাড়তি ভোটেই নজর এ বার শাসক-জোটের।

বর্ধমান শহরের ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে এই বিধানসভা কেন্দ্র। তার মধ্য বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডেই লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল। তৃণমূল মোট ভোট পেয়েছিল ৮৫ হাজার ২৩৪টি। সেখানে বিজেপি পেয়েছিল ৪৭ হাজার ৭০৬। আর সিপিএমের ঘরে ঢুকেছিল ৪১ হাজার ৮৪৬টি ভোট। কিন্তু লোকসভা ভোটের ওই ২৫ শতাংশ কি এ বারেও ধরে রাখা যাবে? বিভিন্ন দলের দাবি, ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই উত্তর মিলবে।

তাঁদের দাবি, গত বিধানসভা ভোটে পাঁচ হাজারের একটু বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। গত কয়েকটি ভোটেও তিন শতাংশের বেশি ভোট তাদের ঝুলিতে যায়নি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা কতটা। বাম-তৃণমূল নেতাদের দাবি, লোকসভা ভোটে জাতীয় স্তরের অনেক অঙ্ক কষে মানুষ ভোট দেন। কিন্তু বিধানসভা আলাদা। সংগঠন থাকলে মোদী ম্যাজিকের পরে নিদেনপক্ষে বিজেপি প্রার্থীকে রাস্তাঘাটে প্রচার করতে দেখা যেত বলে তাঁদের দাবি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৫৭ শতাংশ। সিপিএমের ঘরে এসেছিল ৩৮ শতাংশ। সিপিএম প্রার্থী নিরুপম সেনকে ৩৬,৯১৬ ভোটে হারিয়ে জিতেছিলেন তৃণমূল রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির বাক্সে ভোট পড়েছিল ৩ শতাংশ। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে দেখা যায়, তৃণমূলের ভোট ১১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে, আবার সিপিএমেরও ভোট কমে ১৬ শতাংশ। আর বিজেপির ভোট ২২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশ। কংগ্রেস অবশ্য ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

তবে বিজেপির ঘরে ভোট যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যাঁরা গত লোকসভায় ভোট পরিচালনা করেছিলেন তাঁদের একাংশের দাবি, বাড়তি ভোটটা মূলত সিপিএমের উপর আস্থা না রেখে বিজেপির ঘরে গিয়েছিল। আবার বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ভোটও কিছুটা ছিল। এখন বিজেপি-ফেরতা সেই ভোট নিজেদের দিকে ফেরাতে দু’পক্ষই আশাবাদী। তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “বিজেপি-বিমুখ ভোটটা আমরাই পাব। লোকসভায় যাঁরা আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁরা ফের আমাদের ভোট দেবেন।” সিপিএমের প্রার্থী আইনুল হকের পাল্টা, “গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটের দিন তৃণমূল ভোট লুঠ করেছিল। আমাদের নির্বাচনী এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দিয়েছিল। তারপরেও বিজেপির দিকে যে ভোট গিয়েছিল, তা আসলে তৃণমূল-বিরোধী ভোট। সেই ভোট আমরাই পাব।”

বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর জেলার সভাপতি সন্দীপ নন্দী অবশ্য প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, “গত ৩৯ বছর ধরে রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সে জন্য ওই দুই দলের প্রতি মানুষ বিরক্ত। আর তার সঙ্গে মোদী সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ আমাদেরকে ভোট পেতে সাহায্য করবে।” নাম ঘোষণায় দেরি হলেও দলের প্রার্থী প্রবাল রায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার বহু আগে থেকে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন নির্দলে দাঁড়ানো তৃণমূলের ন’বারের কাউন্সিলর সমীর রায়ও। তাঁর দাবি, দল প্রবীণদের দেয়নি। দলের দুর্নীতি দেখাতেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তৃণমূলের একাংশ নেতার ধারণা, জিততে না পারলেও ভোট কিছুটা কাটবেন সমীরবাবু।

বিজেপি ‘ফ্যাক্টরে’র সঙ্গে এই কেন্দ্রে যোগ হয়েছে উন্নয়ন-অনুন্নয়নের প্রশ্ন। বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে শহর যেন থমকে গিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য আটকে রয়েছে। পরিকল্পনার অভাবে শহরের ভিতর বাস ঢুকতে পারছে না। এমনকী প্রোমোটার-রাজ মাথা চাড়া দেওয়ায় শহরের উন্নয়ন নিয়েও তৃণমূলের মাথা ব্যথা নেই বলে তাঁদের দাবি। ফলে ৬০ একর জমির উপর বাম আমলে পরিকল্পনা নেওয়া স্বাস্থ্য-নগরীর কাজ এগোয়নি, নবাবহাটের কাছে একটি উপনগরিতে প্রশাসনিক ভবনের পরিকল্পনাও বিশ বাঁও জলে। বাঁকা নদের সংস্কার তিমিরেই পড়ে রয়েছে, এমনকী রেলওয়ে উড়ালপুলের কাজও চলছে ধীর গতিতে। আইনুলবাবুর অভিযোগ, “আমাদের পরিকল্পনা মতো কাজ করা তো দূর, শহরটাকে তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে। বাইরের লোকের আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” তৃণমূলের কাউন্সিলর, বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী সমীর রায়ের অভিযোগ, “বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকে সামনে রেখে দুর্নীতি করা হচ্ছে। এ সব মানুষ বেশি দিন সহ্য করবেন না।” তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জনবাবুর পাল্টা, “সিপিএম আমলে শহরে কোনও উন্নয়নই হয়নি। এখন আলো, প্রবীণ ও মহিলাদের পার্ক তৈরি হয়েছে। তেমনি বাঁকা সংস্কার হচ্ছে, শহরের ভিতর থাকা সেতুর সংস্কার করা হচ্ছে। ট্রমা সেন্টার গড়ে উঠেছে। জমি সমস্যা মিটিয়ে উপনগরী গুলিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।” আর দুর্নীতির প্রশ্নে রবিরঞ্জনবাবু বলে, “সমীরবাবু ছাড়া আর কেউ দুর্নীতি দেখতে পাচ্ছেন না! আসলে উনি কারওর ভাল দেখতে পারেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE