Advertisement
০৮ মে ২০২৪

Bengal Polls: ১ থেকে লাফিয়ে ১২, ৩ বছরে বিজেপি-র ভোট বেড়েছে ৭ গুণ, দ্বিতীয় দফাতেও কঠিন যুদ্ধে তৃণমূল

২০১৬-য় ওই ৩০টি কেন্দ্রে মোট ভোটের ৪৭. ৮৮ শতাংশই পেয়েছিল তৃণমূল। তুলনায় বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৭.৩৮ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ০৯:৫৭
Share: Save:

বিধানসভায় বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা হয়নি যদিও। তবে সে সবে না গিয়ে সরাসরি শাসক দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াই লক্ষ্য বিজেপি-র। আর সেই লক্ষ্যে তাঁদের পাখির চোখ জমি আন্দোলনের ভূমি নন্দীগ্রাম। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা—এই চার জেলার মোট ৩০টি আসনে ভোট। তবে শুধুমাত্র এই ৩০টি আসনই নয়, বরং নীলবাড়ির লড়াইয়ে ২৯৪ আসনের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামই ভোটের ভরকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে এ বার সেখান থেকেই ভোটে নাম লিখিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন, তাঁরই ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা শুভেন্দু অধিকারী, ফুল বদলের পর যিনি এখন পদ্মশিবিরে। দু’পক্ষেই নিজেদের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে মমতা , শুভেন্দু, নাকি ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করে সংযুক্ত মোর্চার মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ভোটবাক্স ভরে উঠবে, তার উত্তর মিলবে ২ মে।

২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মূলত সিপিএম এবং কংগ্রেসই বিরোধী পক্ষের ভূমিকা পালন করে আসছে রাজ্যে। ২০১৪-য় কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গড়ার পর অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও গেরুয়া হাওয়া বইতে শুরু করে। তবে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে সে ভাবে দাপট দেখাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন তো দূর, কোনও রকমে খাতা খুলতে সক্ষম হয় তারা। সে বার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১১টি-তে জয়লাভ করে তৃণমূল। কংগ্রেস জয়লাভ করে ৪৪টি আসনে। সিপিএম-এর হাতে ওঠে ৩২টি আসন। সাকুল্যে মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যার নিরিখে কার্যত প্রধান বিরোধীর ভূমিকায় উঠে আসে বিজেপি। সে বার ১৬৪টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২১টি আসনে। ৯টি আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস।

সমস্ত জেলাতেও স্পষ্ট ছাপ রেখে যায় গেরুয়া দাপট। বৃহস্পতিবার যে ৩০ আসনে নির্বাচন, ২০১৬ সালে তার মধ্যে মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। দিলীপ ঘোষের হাত ধরে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রটি হাতে আসে তাদের। সেই তুলনায়, তৃণমূলের হাতে ছিল ২১টি আসন—দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, সাগর, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া পশ্চিম, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়, পিংলা, ডেবরা, দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, কেশপুর, বাঁকুড়ার তালড্যাংরা, ওন্দা, কোতুলপুর, ইন্দাস। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক,পাঁশকুড়া পূর্ব, হলদিয়া, বাঁকুড়ার বরজোড়া এবং সোনামুখী আসন ৫টি ওঠে সিপিএম-এর হাতে। কংগ্রেস জয়লাভ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এবং বাঁকুড়া—এই ৩টি আসনে।

২০১৬-য় ওই ৩০টি কেন্দ্রে মোট ভোটের ৪৭. ৮৮ শতাংশই পেয়েছিল তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ২৫.৬০ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ১১.৪১ শতাংশ। সেই তুলনায় বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৭.৩৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফল বেরোলে দেখা যায়, শুধুমাত্র বাম-কংগ্রেসের ভোট ছিনিয়ে নেওয়াই নয় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক বসিয়েছে বিজেপি। ২০১৬-য় তৃণমূলের হাতে থাকা পাঁশকুড়া পশ্চিম, নারায়ণগড়, ডেবরা, তালড্যাংরা, ওন্দা, কোতুলপুর এবং ইন্দাসে এগিয়ে যায় তারা। এর পাশাপাশি সিপিএম-এর হাতে থাকা হলদিয়া, বরজোড়া এবং সোনামুখীতেও এগিয়ে যায় বিজেপি। তারা কংগ্রেসের বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরেও এগিয়ে যায়। অর্থাৎ গেরুয়া দাপটে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে ১৮টি আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২টি আসনে। সে বার বাম-কংগ্রেস একটি আসনেও এগিয়ে থাকতে পারেনি। ভোটের হারেও তার প্রভাব পড়ে। ২০১৬-র তুলনায় ২০১৯-এ তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৫.৮৯ শতাংশ। আর ২০১৬-র ৭.৩৮ শতাংশ থেকে সটান ৪২. ৪০ শতাংশ ভোট বাগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এসে পৌঁছয় বিজেপি। ২০১৯-এ বাম ও কংগ্রেস যথাক্রমে ৭.২৪ এবং ১.৫০ শতাংশ করে ভোট পায়।

বাম-কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়েই বিজেপি নিজেদের পাল্লা ভারি করেছে বলে সেইসময় যদিও দাবি করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু ২০১৬-য় তাদের জেতা ৭টি আসনেই ২০১৯-এ বিজেপি এগিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের ভোটবাক্সেও ক্ষয় ধরে। ৪৭.৮৮ থেকে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার কমে দাঁড়ায় ৪৫.৮৯ শতাংশ। সেখান থেকেই তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপি-র উত্থান শুরু বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ নন্দীগ্রামের প্রার্থী হলেও, তাতে তৃণমূলের কতটা সুবিধা হবে তা নিয়েও সন্দিহান তাঁরা। কারণ যে অধিকারী পরিবারের হাতে পূর্ব মেদিনীপুর ছেডে় দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন তিনি, এ বার গোটা পরিবারই প্রায় পদ্মশিবিরে। নন্দীগ্রামে মমতাকে টক্কর দিচ্ছেন খোদ শুভেন্দু। খড়্গপুর সদরেও তৃণমূল ছেড়ে আসা অভিনেতা হিরণকে এবং ডেবরায় ভারতী ঘোষকে জেতাতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। খোদ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ দফায় দফায় এসে তাঁদের জন্য সভা করে যাচ্ছেন। তবে তৃণমূলে থাকাকালীনই যাঁদের নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ গড়ে উঠেছিল, তাঁদের দলে টেনে বিজেপি কতটা সুবিধা করতে পারবে, সে নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE