Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
JP Nadda

WB Election: ‘হাতে রক্ত লেগে আছে’, তরজায় নড্ডা ও তৃণমূল

ভোট-পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে দু’দিনের সফরে রাজ্যে এসেছিলেন নড্ডা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ নেওয়ার দিনেই তাঁর ‘হাতে রক্ত লেগে আছে’ বলে আক্রমণ শানালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ভয়ানক হিংসা’ চলছে, এই অভিযোগ করার পাশাপাশিই নড্ডার মন্তব্য, ‘‘প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। প্রাণে বাঁচতে মানুষ অসমে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। মহিলারাও আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ সব ঘটনা দেশভাগের সময়ের ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’র কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে!’’ বিজেপি সভাপতির এমন আক্রমণের জবাবে তৃণমূল নেতা সুখেন্দু শেখর রায় পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যাঁদের হাতে গুজরাত ও দিল্লির দাঙ্গার রক্ত লেগে আছে, তাঁদের মুখে এ সব কথা কেউ শুনবে?’’

ভোট-পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে দু’দিনের সফরে রাজ্যে এসেছিলেন নড্ডা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতায় মঙ্গলবার আক্রান্ত এলাকায় যাওয়ার পরে বুধবার তিনি গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে বিজেপির বুথ সভাপতির বাড়িতে। হামলায় বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ওই বুথ সভাপতির মা শোভারানি মণ্ডল। বাংলায় ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে এ দিনই দেশ জুড়ে ধর্নার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। কলকাতায় সেই ধর্না কোথায় হবে, তার পুলিশি অনুমতি, এ সব নিয়ে দফায় দফায় টানাপড়েন চলে। শেষ পর্যন্ত মুরলীধর সেন লেনে বিজেপি দফতরের বাইরে ধর্নার কর্মসূচি হয়। তার আগে হেস্টিংসের দফতরে দলের নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় লড়াইয়ের শপথ নেওয়া হয় নড্ডা ও রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে।

নড্ডা এ দিন বলেছেন, ‘‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী ৩৬ ঘণ্টা চুপ করে ছিলেন। তার পরে ফের শপথ নিয়েই মমতা অন্যান্য দলকে দোষ দিচ্ছেন। বলছেন বিজেপি যেখানে জিতেছে, সেখানে সন্ত্রাস হচ্ছে। অথচ গোটা রাজ্যে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত, কোনও ব্যবস্থা নেই! মমতার হাতে রক্ত লেগে আছে!’’ দলের সাংসদ ও বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকেও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি পরামর্শ দিয়েছেন, এখন প্রথম কাজ আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো। আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ভরসা দিতে হবে সাংসদ-বিধায়কদের, সেই সঙ্গেই রিপোর্ট দিতে হবে দলের নেতৃত্বের কাছে। তবে বিজেপি বাংলায় ৩৫৬ ধারা চায় কি না, সেই প্রশ্ন ফের খারিজ করে দিয়েছেন নড্ডা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘৩৫৬ ধারা একটা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, গণতান্ত্রিক ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাই। এখন আমাদের হাতে ৭৭ জন বিধায়ক আছেন লড়াই করার জন্য। গণতান্ত্রিক ভাবেই লড়ব, এর শেষ দেখে ছাড়ব!’’

বিজেপি সভাপতির আক্রমণের জবাবে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ওদের কাজ ইতিহাস বিকৃত করা। ইতিহাস পড়ার অভ্যাস ওদের নেই! তাই দেশভাগের কথা তুলেছেন। আর যাঁদের হাতে গুজরাত ও দিল্লির দাঙ্গার রক্ত লেগে আছে তাঁদের মুখে এ সব কথা কেউ শুনবে?’’ সুখেন্দুবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘গত দু’বছর ধরে ওঁরা হিংসা ও সন্ত্রাসের যে বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন, তা প্রত্যাখ্যান করে বাংলার মানুষ রায় দিয়েছেন। এখন তাকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। ওঁদের রাজনীতি হিংসা ও বিভাজনের। এ সব কথা বলে এখনও সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।’’

হেস্টিংস ও নিউটাউনের কর্মসূচির ফাঁকে নড্ডা গিয়েছিলেন জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রের মণ্ডলপাড়ায়। ভোটের ফল ঘোষণার রাতেই ভাটপাড়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কমল মণ্ডল নামে বিজেপির এক বুথ সভাপতির বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। কমলকে বাঁচাতে এসে দুষ্কৃতীদের সামনে পড়ে যান কমলের মা, বৃদ্ধা শোভারানি। তাঁকে বাঁশ দিয়ে মারা হয়, পরে তাঁর মৃত্যু হয়। বিজেপি অভিযোগের আঙুল তোলে তৃণমূলের দিকে। ওই বাড়িতে নড্ডা এ দিন গেলে শোভারানির দুই ছেলে কমল ও তারক আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিজেপি সভাপতি ফিরে যাওয়ার পরে তাঁদের উপরে ফের আক্রমণ হতে পারে। নড্ডা তাঁদের বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না। কে কী করবে? আপনারা আমার ফোন নম্বর রাখুন। যে কোনও দরকারে ফোন করবেন। দলীয় কর্মীরা সবাই আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।’’ তবে তারকদের আতঙ্ক তাতে কাটেনি। পরে তারক বলেন, ‘‘উনি এসেছিলেন, এটা অনেক বড় ব্যাপার। নিজের নম্বরও আমাদের দিয়েছেন। তবে উনি আমাদের কতটা সুরক্ষা দিতে পারবেন, সেটা উনি বলতে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE