পরখ: ভোটের ‘পিচ’ ঠিক আছে কি না দেখতে আসল পিচে ব্যাট হাতে মদন মিত্র। শুক্রবার, বেলঘরিয়ার একটি মাঠে। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ বছর আগে ময়দানে টিম, জার্সি, বল— সব ছিল। শুধু ছিলেন না ক্যাপ্টেন। ২০১৬-য় কামারহাটির ‘ওয়ান ডে ম্যাচে’ হারের সেটাই বড় কারণ ছিল বলে আজও মনে
করেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে নিজের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে, এলাকার সব ‘পিচ’ ঠিক আছে কি না দেখতে যাচ্ছিলেন জোড়া ফুলের প্রার্থী মদন মিত্র। বললেন, ‘‘এ বার কিন্তু মাঠে ক্যাপ্টেন আছে। চার পাশে খেলোয়াড় সাজিয়ে রেখেছি। তাই সকলকে বলব, একটু সতর্ক হয়ে খেলুন।’’ ভোটের আগের দিন ঘরে বসে থাকতে নারাজ মদন। বৃহস্পতিবার আচমকাই শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল। তড়িঘড়ি কয়েক জন চিকিৎসককে ডাকা হয় ফ্ল্যাটে। সেখানেই কোভিড-সহ সব রকম পরীক্ষা করে দেখা যায়, মদনের শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এ দিন গাড়িতে ওঠার আগে এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘দাদা, শরীর ঠিক রাখতে হবে।’’
মদনের পাল্টা উত্তর, ‘‘বিজেপি বিভিন্ন এলাকায় লোক ঢোকাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। কিন্তু আমাকেও তো দেখতে হবে, কারা কামারহাটিকে অশান্ত করতে চাইছে।’’ কথা শেষ হতেই উঠে গেল গাড়ির কালো কাচ। বেলঘরিয়ার নন্দননগর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেন তিনি। মাঝেমধ্যে কাচ নামিয়ে রাস্তার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘বাইরের কাউকে ঘুরতে দেখেছেন? দেখলেই আমাকে বা প্রশাসনকে জানাবেন।’’ সব শুনে হাসছেন পদ্ম শিবিরের রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘উনি নিজে বহিরাগত ঢোকাচ্ছেন। আর এ ভাবে এলাকায় ঘুরে ভোটারদের ভয় দেখাতে পারেন না উনি।’’
সকাল থেকে কর্মীদের কাছে যাওয়া ছাড়াও বিশিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজু। তাঁর দাবি, ‘‘জনতা আসল পরিবর্তন চাইছে। তাই প্রতিপক্ষ গোলমাল বাধালে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠবে।’’ অভিযোগ উঠেছে, ভোটার স্লিপের সঙ্গে ছোট পঞ্জিকা, লক্ষ্মীর পাঁচালি, হনুমান চল্লিশা বিলি করেছে বিজেপি। রাজুর দাবি, ‘‘অভিযোগকারীর জানা উচিত, এ দিয়ে ভোট কেনা যায় না। এগুলি সমাজের বিশ্বাস ও আবেগ। তবে ভোটার স্লিপের সঙ্গে দিইনি।’’ ভোটে ঝামেলা চান না মদনও। বললেন, ‘‘মানুষ যেন ভোটটা দিতে পারেন।’’ নন্দননগর বটতলায় বুথের সামনে সমস্ত পতাকা খুলে নিচ্ছিলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। সিপিএমের পতাকা খুলে মাটিতে ছুড়ে ফেলতে দেখেই দাঁড়ালেন মদন। প্রতিবাদের সুরে বললেন, ‘‘কোনও পতাকাকে এ ভাবে অসম্মান করতে পারেন না।’’
যা শুনে হাসছেন সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র। বললেন, ‘‘কামারহাটির রত্নাকর দস্যু বাল্মীকি হওয়ার চেষ্টা করছেন। উনি দস্যুই থাকবেন।’’ ২০১৪-য় তাঁর উপরে মদন-বাহিনীর আক্রমণ আজও তিনি ভোলেননি, জানালেন সায়নদীপ। তাই আজ মদন ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে চাইলেও লাভ নেই বলেই দাবি তরুণ প্রার্থীর।
যদিও প্রতিপক্ষ সিপিএম প্রার্থীকে নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাননি জোড়া ফুলের ‘ক্যাপ্টেন’। শুধু বললেন, ‘‘ও বাচ্চা ছেলে। এখনও অনেক রাজনীতি শিখতে হবে।’’ তবে মদনের দাবি, পুরনো বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়কে টিকিট না দিয়ে ভুল করেছে সিপিএম। কিন্তু বিরোধী নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা কেন? ‘‘মানসবাবুকে দিলে খেলাটা আরও ভাল জমত।’’— বলছেন মদন। সব শুনে সায়নদীপ বলছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে তো ব্যক্তিগত লড়াই নয়। রাজনৈতিক লড়াই ছিল, থাকবে।’’
কে কী বললেন, তাতে অবশ্য কিছু যায়-আসে না মদনের। সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট আর রোদচশমা পরে তাই ভোট-যুদ্ধের আগের বিকেলে মাঠে নেমে পড়লেন ব্যাট হাতে। আর গুগলি বলে ছক্কা না হলেও বললেন, ‘ও লাভলি!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy