Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Muslim

Bengal Polls: মুসলিম নেতৃত্ব বলতে দল এখনও বোঝে পুরুষ

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ‘মুসলিম তোষণ’-এর কথা উঠছে বারবার। “বলতে পারেন, বাংলার মুসলিম মেয়েদের জন্য কোন দল কী করেছে?” বললেন এক মুসলিম নেত্রী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

স্বাতী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

লকডাউনে স্বামী যখন ঘরে ফিরল, তখনই নাদিরার কেমন সন্দেহ জেগেছিল। ক’দিন পরেই বুঝল, আর একটা বিয়ে করেছে ওসমান। সবার সামনে ওসমান বলে দিয়েছে, এখন মুখের কথায় তালাক নিষিদ্ধ, তাই তালাক দেবে না। দ্বিতীয় বউয়ের সঙ্গে থাকতে হবে নাদিরাকে। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির বধূ নাদিরা ছেলেমেয়ে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছে।

জঙ্গিপুরের আসিফ মণ্ডল আইনের পরোয়া করে না, মুখে তিন তালাক বলে বার করে দিয়েছে স্ত্রী রাজিয়াকে। পুলিশ বলছে, অভিযোগ করলে আসিফকে গ্রেফতার করবে, কিন্তু রাজিয়াকে শ্বশুরঘরে ফেরাতে পারবে না। “তেমন নির্দেশ নেই।”

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে ‘মুসলিম তোষণ’-এর কথা উঠছে বারবার। “বলতে পারেন, বাংলার মুসলিম মেয়েদের জন্য কোন দল কী করেছে?” বললেন এক মুসলিম নেত্রী। রাজনৈতিক হিংসার আশঙ্কায় তিনি পরিচয় দিতে চান না।
তাঁর আক্ষেপ, ‘মুসলিম নেতৃত্ব’ বলতে সব দল বোঝে কিছু পুরুষকে, যাঁরা ধর্মীয় নেতা বলে পরিচিত। ক’জন মহিলাকে মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি বলে ভাবা হয়? কেন মুসলিম মেয়েদের দাবিগুলো স্থান পায় না ইস্তাহারে, প্রচারে?

কী দাবি করছেন মুসলিম মেয়েরা? অধ্যাপক আফরোজা খাতুন বলেন, আদালতে বিধিবদ্ধ তালাকের ব্যবস্থা চাই। মৌখিক তালাক রদ করেই থেমে গিয়েছে নতুন আইন। তাতে বিপদ কমেনি। বেআইনি তালাকের নালিশ করলে পুলিশ গ্রেফতার করছে স্বামীকে, কিন্তু তাতে নিরাশ্রয় মেয়েদের সুবিধে কতটুকু? “আমরা চাই, কেবল আদালতেই যেন বিবাহ-বিচ্ছেদ হতে পারে মুসলিম দম্পতিদের। যাতে মেয়েদের প্রাপ্য দিতে বাধ্য হয় পরিবার।” বহুবিবাহ প্রথার প্রতিবাদও দীর্ঘ দিন করে আসছেন মুসলিম মেয়েরা। বাংলাদেশ-সহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে দ্বিতীয় বিবাহ করতে গেলে আদালতের অনুমোদন লাগে। ভারতে তা হবে না কেন?

“একবিংশের ভারতেও নিকাহ্‌ হালালার মতো যন্ত্রণাময়, কুরুচিপূর্ণ একটা প্রথা মানতে বাধ্য করা হচ্ছে মেয়েদের। কোনও
রাজনৈতিক দল কি তা দেখছে না?” প্রশ্ন করলেন খাদিজা বানু। রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির তরফে তাঁরা কয়েক দশক কাজ করছেন তালাকপ্রাপ্ত, পরিত্যক্ত মুসলিম মেয়েদের সঙ্গে। স্বামী তালাক দেওয়ার পর অনুতপ্ত হলে (যা প্রায়ই ঘটে) সেই স্ত্রী আর কারওকে নিকাহ্ করে, তালাক নিয়ে তবে ফের বিয়ে করতে পারে স্বামীকে। “এই তো ১০ মার্চ রানীনগরের মরিচাগ্রামে এমন বিধান দিয়েছিল মোড়লরা। এ তো ধর্ষিত হওয়ার সমান। বহু মুসলিম দেশে এ প্রথা আর নেই, কিন্তু ভারতীয় মুসলিম মেয়েদের সহ্য করতে হচ্ছে।”

মেয়েদের উত্তরাধিকারের আইনি সুরক্ষাও উপেক্ষিত। এখন পারিবারিক আইন অনুসারে, শ্বশুর বর্তমানে স্বামী মারা গেলে
শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির কিছুই প্রাপ্য হয় না পুত্রবধূ ও তার সন্তানদের। আবার, স্বামীর সম্পত্তিতেও স্ত্রী-কন্যাদের ভাগ থাকে সামান্য। আইনি সুরক্ষা দাবি করে দীর্ঘ দিন আন্দোলন করলেও, নির্বাচনের আগে মুসলিম মেয়েরা সহজে এ সব কথা তুলতে চান না। তাঁদের ভয়, এতে বিজেপি-র অভিন্ন দেওয়ানি বিধি তৈরির কার্যক্রম মদত পাবে। ‘মুসলিম-বিরোধী’ কথা বলার জন্য ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হবে মেয়েরা। অন্য দিকে, বিরোধী দলগুলো মুসলিম সমর্থন দেখাতে বেছে নিচ্ছে তাঁদের, যাঁদের চোখে বিজেপি-বিরোধিতা আর নারী অধিকার-বিরোধিতা একই কথা। আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ ভিন্ন ধর্মের প্রার্থী দিয়েছে, কিন্তু এক জন মেয়েকেও প্রার্থী করেনি।

“আমরা নির্বাচনের আগে মহিলা ও কিশোরীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। উঠে আসছে যে চাহিদাগুলো — সন্ধের পর রাস্তায় আলো, বাজারে শৌচাগার, কারিগরি শিক্ষার সুযোগ — সেগুলো সব মেয়েরই কথা,” বললেন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী রহিমা খাতুন। সংখ্যালঘু ঋণ চাইলে দরকার হয় ‘গ্যারান্টার,’ তার সন্ধান মেয়েরা পায় না।

‘মুসলিম ভোট’ যারা পেতে চায়, তারা মুসলিম মেয়েদের কী দেবে? নেতাদের নীরবতায় কান ঝালাপালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Leadership West Bengal Polls 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE