Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: দল বড় না ব্যক্তি, পরীক্ষা ডোমজুড়ে

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৯
Share: Save:

প্রশ্ন অনেক!

‘দল বড় না ব্যক্তি?’, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা বড় না ক্ষমতার রাজনীতি?’

কারণ, ডোমজুড়ে এ বার ‘তাঁর’ পরীক্ষা। তিনি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০১ ভোটে জিতে রাজ্যের ‘ফার্স্ট বয়’ হওয়া বিধায়ক রাজীব এখন পদ্ম শিবিরে। জোড়া ফুল ছেড়ে যাওয়ার সময় তাঁর দাবি ছিল, ব্যক্তি রাজীব হিসেবেই তিনি ডোমজুড়ে যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। সেখানে দলের ছাপ প্রভাব ফেলে না। সেই মতো আগামী ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার নির্বাচনে ডোমজুড়ে পদ্ম চিহ্নে লড়বেন রাজীব। ২০১১ থেকে যে দলের সঙ্গে সম্পর্ক, সেই তৃণমূল এ বারে তাঁর প্রতিপক্ষ। সেই শিবিরে এ বারের প্রার্থী কল্যাণ ঘোষ। পঞ্চায়েত ভোটে যাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে হারানোর অভিযোগও রয়েছে তৎকালীন বিধায়কের বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতে, রাজীবের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন কি সহজে মুছে যাওয়ার?

কল্যাণ বলছেন, ‘‘একেবারেই নয়। বেইমানি না করলে আজ হয়তো এই অবস্থা হত না। তার ফলও পেয়েছিলেন।’’ যদিও রাজীবের দাবি, ‘‘অভিযোগের সারবত্তা নেই। আজ যাঁরা ওঁর সঙ্গে আছেন, তাঁরা কী করছিলেন। কেউ বলুক আমি ভোটের দিন কোথায় গিয়ে কিছু করেছি বা কাউকে কিছু বলেছি।’’ একদা স্থানীয় বিধায়কের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য হিসেবে পরিচিত তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, ডোমজুড়ে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছিলেন রাজীব। সেই জন্য কল্যাণের বিরুদ্ধাচরণের বিষয়েও সে দিন কেউ আপত্তি তোলেননি। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘উনি কাছের লোকজনদের আবেদন উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থে শিবির পরিবর্তন করেছেন।’’ তাই জগদীশপুর থেকে দুর্গাপুর-অভয়নগর, বালি, শলপের জোড়া ফুলের কর্মীরা বলছেন, ‘‘ব্যক্তি রাজীবকে বাদ দিলে তাঁর পাশে যাঁরা ঘুরছেন, তাঁদের দেখে সাধারণ মানুষ ভোট দেবেন না।’’

অবশ্য নিজের ব্যক্তি ইমেজকে হাতিয়ার করেই লড়তে চান রাজীবও। বলছেন, ‘‘দল, পতাকা পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি পাল্টায় না। ১০ বছর কারও ভাই, কারও সন্তান বা বন্ধু হিসেবে ছিলাম, আগামী দিনেও তাই থাকব। মানুষও চাইছেন ঘরের ছেলে ঘরেই থাক।’’

‘তাই যদি হবে, তা হলে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ কেন রাজীবকে কালো পতাকা দেখাচ্ছেন?’—প্রশ্ন তুলছেন কল্যাণ। বলছেন, ‘‘যাঁরা রাজীবের সঙ্গে থেকে আমাকে পঞ্চায়েতে হারিয়েছিলেন, তাঁরা আজ কেউ ওঁর সঙ্গে নেই।’’ ২০১১তে ২৪ হাজার ৯৮৬ ভোটে জিতেছিলেন রাজীব। সেই সময় থেকে তৃণমূলের হাত ধরেই তাঁর উত্থান, মন্ত্রিত্ব লাভ, খ্যাতি-প্রচারের আলোয় আসা। সেই তৃণমূলকেই তিনি রাতারাতি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেন? রাজীবের অভিযোগ ছিল, শাসকদলে তিনি উপযুক্ত মর্যাদা বা ক্ষমতা পাচ্ছেন না।

তবে বিজেপিতে গিয়ে দ্রুত সামনের সারিতে উঠে আসতেও দেখা গিয়েছে রাজীবকে। কিন্তু পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী হলেও, ব্যক্তি পরিচয়কেই এগিয়ে রাখছেন রাজীব। সেখানে এলাকার পুরনো বিজেপির একাংশ বলছেন, ‘‘দলের থেকে নিজের পরিচয় যদি বড় হয়, তা হলে তো নির্দলে দাঁড়াতে পারতেন।’’ রাজীবের দাবি, ‘‘মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে দলের প্রয়োজন।’’ এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে ডোমজুড়ের ভোট নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

২০১৯-র লোকসভা ভোটে ডোমজুড়ে ৫৫ হাজার ৩৩ ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। প্রাক্তন বিধায়কের প্রশ্ন, ‘‘মানুষের পাশে না থাকলে কি এই ফলাফল হত?’’ এলাকায় উন্নয়ন যে একেবারে হয়নি, তা হয়তো নিন্দুকেও বলবে না। স্বাধীনতার পর থেকে যে সব এলাকায় পানীয় জল ঢোকেনি, সেখানকার জন্য তৈরি হয়েছে জলপ্রকল্প। মেঠো রাস্তা বদলে হয়েছে পাকা। এসেছে আলো। যদিও কল্যাণের দাবি, ‘‘উন্নয়ন যা হয়েছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য।’’

ডোমজুড়ের মানুষের মন বুঝতে দিনরাত চরকি পাক খাচ্ছেন কল্যাণ-রাজীব। পাল্লা দিচ্ছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী উত্তম বেরাও। চৈত্রের খর দুপুরে নারনা অঞ্চলের মেঠো রাস্তায় ঘুরে প্রচার সারছিলেন রাজীব। তাঁকে দেখে এক বৃদ্ধা বললেন, ‘‘দল বুঝি না। তবে মানুষটা ভাল।’’ একই সুর আনন্দনগরে সংস্কারের কাজ চলা শ্যাঁওড়াপোতা খালের পাশে দাঁড়ানো মহিলাদের গলাতেও। কিন্তু বাঁকড়া, শলপ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন খানা অঞ্চল, যেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেখানকার মানুষজন এবং অন্য জায়গার লোকজনের গলায় অভিমান, ‘‘বিজেপির রাজীবকে মানতে পারছি না। উনি নির্দল প্রার্থী হতে পারতেন।’’ রাজীব অবশ্য সংখ্যালঘুদের উপর বিশ্বাস হারাতে নারাজ। কল্যাণের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘উনি তো দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে ওখানে ভোট করানোর পরিকল্পনা করছেন। মানুষ ভোট দিলে আমাকে হারাতে পারবেন না।’’ যদিও উত্তম বলছেন, ‘‘রাজীবের দলবদল যেমন মানুষ মানছেন না, তেমনি কল্যাণের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁরা তলেতলে রাজীবের সঙ্গে রয়েছেন। আশা করছি সাধারণ মানুষ বিকল্প হিসেবে আমাদের বাছবেন।’’ ২০১৬-তে একপ্রকার বিরোধী না থাকা এবং ভোট লুঠের ফলেই রাজীব জিতেছিলেন বলেও দাবি উত্তমের। স্বীকার করছেন, সেই বছর নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করাটা তাঁদের ভুল হয়েছিল।

তৃণমূল অবশ্য কোনও ভুল করতে নারাজ। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে তারা প্রার্থী করেছে কল্যাণকেই।

এই আবহেই এ বার রাজীবের মর্যাদার লড়াই। তৃণমূলেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE