ফাঁকা: ভোটের ফল প্রকাশের দিন শুনশান ভাটপাড়ার মেঘনা মোড়। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ভোট গণনা শুরু হয়েছিল রবিবার সকাল থেকে। বেলা গড়াতেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল ৭০-এর দশকের হিন্দি ছবির একটি সংলাপ। ‘শোলে’ ছবির অন্ধ মৌলবীর মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল— ‘‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?’’ বেলা সাড়ে ১১টায় ভাটপাড়ার মেঘনা মোড় মনে পড়িয়ে দিল সেই সংলাপই।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ভাটপাড়ার এই মেঘনা মোড়ই তাঁর ঠিকানা, গড়। ২০১৯ সালে শিল্পাঞ্চলে গেরুয়া ঝড় ওঠার পরে ধূমকেতুর মতোই রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর উত্থান। শেষ দু’বছর তিনি সেখানেই বিরাজ করেছেন। কিন্তু ২০২১-এর ২ মে, রবিবার বেলা বাড়তেই সবুজ ঝড়ের সামনে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অর্জুন সিংহ যেন ‘নিভৃতবাস’-এ গেলেন।
মেঘনা মোড়ের শুনশান রাস্তার অদূরেই ‘শ্রমিক ভবন’। সেখানে বসেই অর্জুন ২০২১-এ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে নতুন ইন্দ্রপ্রস্থ রচনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ দিন সেই শ্রমিক ভবন যেন বলল, ‘মুকুট আছে, রাজা নেই’। শ্রমিক ভবনের নীচে বসা অবাঙালি নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, ‘‘সাহেব এখানে নেই।’’ তাঁর ফোন নম্বর তো বটেই, তাঁর ঘনিষ্ঠের থেকে পাওয়া একাধিক নম্বরে ফোন করেও ধরা গেল না তাঁকে। কখনও শোনা গেল তিনি ব্যারাকপুরে তাঁর ঘনিষ্ঠ মানুষের অফিসে বসে, কখনও শোনা গেল তিনি ব্যারাকপুরের কোনও একটি মন্দিরে রয়েছেন। কিন্তু অর্জুন সারা দিনই রইলেন সংবাদমাধ্যমের নাগালের বাইরে।
জাম্প কাট: দুপুর ২টো, ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। ভিতরে চলছে ভোট গণনা। কলেজের মাঠে হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্ল। চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে তৃণমূল প্রার্থী করার পরে তাঁর সামনে অর্জুন দাঁড় করিয়েছিলেন চিকিৎসক চন্দ্রমণিকে। তুরুপের তাস হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল চন্দ্রমণির ছেলে তথা বিজেপির যুবনেতা তথা অর্জুন ঘনিষ্ঠ মণীশ শুক্লর খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনা। কিন্তু ব্যারাকপুর কেন্দ্র আপন করে নিল এলাকার ছেলে, রুপোলি জগতের রাজকেই।
এলাকার সাংসদ কোথায়? চন্দ্রমণির জবাব, ‘‘ফোনে কথা হল। উনি খোঁজ নিচ্ছিলেন, এ দিকে কেমন চলছে।’’
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মতো এ দিন প্রকৃতিও যেন আচমকাই পট পরিবর্তন করল। দুপুরের ভ্যাপসা গরম আচমকা কেটে গেল মুহূর্তের ঝড় ও ঠান্ডা বাতাসে। গণনা কেন্দ্রের চত্বরে তখন পার্থ ভৌমিক, সুবোধ অধিকারী, রাজ চক্রবর্তীরা হাল্কা মেজাজে গল্প জুড়েছেন। সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন নোয়াপাড়া কেন্দ্রে অর্জুন সিংহের জামাইবাবু সুনীল সিংহকে পর্যুদস্ত করা তৃণমূল প্রার্থী মঞ্জু বসুও। তাঁকে খাওয়ানোর তদারকি করতে দেখা গেল পার্থবাবুকে।
বিকেল ৫টা। শেষ মুহূর্তের লড়াই জমে উঠেছে ভাটপাড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুনের ছেলে পবন সিংহের সঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থী জিতেন্দ্র সাউয়ের। এই এক জনকে নিয়েই হতাশ হলেন তৃণমূলের কর্মীরা। জিতু হারছেন, পবন জিতছেন— বলাবলি করছিলেন তৃণমূলের লোকজনই।
অদূরে ভাটপাড়া হয়তো তখন বলছে, ‘‘মুখরক্ষা হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy