ফাইল চিত্র।
কেউ বলেছেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন চালু হল বলে। কেউ বলেছেন, নাগরিকত্ব নতুন করে দেওয়ার কী আছে! মতুয়ারা ভোট দেন, তাই তাঁরা ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিক।
কেউ বাংলাদেশে মতুয়াদের পীঠস্থান ওড়াকান্দিতে ঘুরে এসেছেন। কেউ আবার মতুয়াদের ধর্মগুরু হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন।
মতুয়া ভোটারদের মন পেতে বিজেপি-তৃণমূল কেউই চেষ্টায় কসুর করেনি। এই টানাটানিতে মতুয়ারা শেষমেশ কার উপরে ভরসা রাখেন, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক মহলের। ভোটের ফলে দেখা গেল, গত লোকসভায় যে মতুয়া ভোটের সিংহভাগই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির থেকে, তার অনেকটা ফেরাতে পেরেছে তৃণমূল। তবে মতুয়া ভোটের বড় অংশ ধরে রেখে বহু আসনে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি।
মতুয়া ভোটের ভরসায় নদিয়ায় বাম-তৃণমূলের একাধিক আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। তবে দু’বছর আগে লোকসভা ভোটের তুলনায় ব্যবধান কমেছে কিছুটা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার দক্ষিণ প্রান্তের কয়েকটি আসনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মতুয়া ভোটারদের। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর পূর্ব, রানাঘাট দক্ষিণের পাশাপাশি কল্যাণী, চাকদহ, হরিণঘাটার মতো বিধানসভা এলাকায় প্রচুর মতুয়া ভক্ত বাস করেন। ২০১৬ পর্যন্ত মতুয়াদের মধ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তাই ছিল বেশি। কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের পরে সেই স্রোতে ভাটা পড়ে। শূন্যস্থানে ভাগ বসাতে থাকে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার রানাঘাটে সভা করেছেন গত কয়েক মাসে। মতুয়া আবেগ উস্কে দিয়েছেন। মতুয়াদের জন্য একাধিক প্রকল্পের ঘোষণাও হয়েছে। কিন্তু মতুয়া-মনে তা যে বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি, ২০২১ সালের ভোটের ফল সে কথাই বলছে।
রানাঘাট দক্ষিণ, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর পূর্ব, হরিণঘাটায় জয়ী হয়েছে বিজেপি। জেলায় বামেদের একমাত্র আসন ছিল রানাঘাট দক্ষিণ। সেটিও এসেছে বিজেপির হাতে। দলের মতুয়া-মুখ, চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মতুয়ারা আমাদের উপরে ভরসা রেখেছেন। আগেও তাঁরা আমাদের দিকেই ছিলেন।’’ তবে তৃণমূলের সমীর পোদ্দার এর পিছনে ধর্মীয় মেরুকরণের ভোটের প্রভাব দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উন্নয়নের নিরিখে ভোট হলে আমরাই জিততাম। কিন্তু এখানে বিজেপি মেরুকরণের ভোট করিয়েছে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার মতুয়া অধ্যুষিত স্বরূপনগর হাবড়া, অশোকনগর, বারাসত, মধ্যমগ্রাম, রাজারহাট-নিউটাউন, জগদ্দল-সহ আরও কিছু আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের নিরিখে এই আসনের অনেকগুলিতেই পিছিয়ে পড়েছিল তারা। মতুয়া পাগল, দলপতি, গোসাঁইদের নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বিধানসভাভিত্তিক আলাদা বৈঠক করেছিল তবে বনগাঁ মহকুমার চারটি আসনে জয়ী বিজেপি। ভোট অবশ্য কমেছে লোকসভার তুলনায়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা, তা মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ বুঝে ফেলেছেন। তাই তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।’’ বিজেপি সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের আবার বক্তব্য, ‘‘মতুয়াদের সমর্থন বিজেপির দিকেই ছিল। বাম-কংগ্রেসের ভোট এ বার তৃণমূলের দিকে যাওয়ায় বিজেপির ফল খারাপ হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত ১২টি আসনে আমরা জয়ী হয়েছি। এর থেকে প্রমাণ হয়, মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy