তারার সঙ্গে নিজস্বী। সোমবার বারাসতের একটি বুথের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের সঙ্গে ছবি তুললেন চিরঞ্জিত। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
তত ক্ষণে ভোট পর্ব গড়িয়ে গিয়েছে অনেকটাই। তারই মধ্যে বেলা ২টো নাগাদ বারাসতে কেএনসি রোডের একটি বুথের বাইরে এক জনকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের জটলা। পাশেই ভোটারদের লাইন থেকে বেরিয়ে এলেন এক যুবক ভোটার। যাঁকে ঘিরে জটলা, তাঁর উদ্দেশে যুবকটি প্রশ্ন করলেন, ‘‘আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি)-র চাকরি পেতে রাজ্যের বাইরে যেতে হবে কেন? আপনারা কি কিছু করবেন না?’’
যুবকের আচমকা প্রশ্নে কিছুটা ধাক্কা খেয়েও মুহূর্তে টাল সামলে নিলেন বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। যুবককে বললেন, ‘‘ব্যাপারটা আমার মাথায় রয়েছে। তবে আইটি অনেক বড় বিষয়!’’
এর আগে কেএনসি রোডে দলীয় অফিসের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই চিরঞ্জিতকে ঘিরে ধরেছিলেন স্থানীয় মানুষ। টলিউডের নায়ককে কাছে পেয়ে অনেকেই মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে শুরু করে দেন। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত বারাসতের বিভিন্ন এলাকায় নানা জনের নানান আবদার মেটালেন চিরঞ্জিত।
সোমবার যখন ভোটদান পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে, তখনও কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে চিরঞ্জিতের ঘুম ভাঙেনি। অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও ঘুম থেকে উঠেছেন অনেক দেরিতে। স্ত্রী রত্নাবলীকে নিয়ে বেলা ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে রওনা দেন বারাসতের দিকে। ২০১১-য় তো সাতসকালেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। এ বার দিনের সফর শুরু করতে এত দেরি কেন?
চিরঞ্জিত বুঝিয়ে দেন, এ বার তিনি অনেক ‘কনফিডেন্ট’, আত্মবিশ্বাসী। কেএনসি রোডের দলীয় অফিসে বেলা ২টো নাগাদ পৌঁছে ভোট পরিচালনায় থাকা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা। বড়জোর দশ মিনিট। তার পরেই বেরিয়ে পড়লেন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের আনাচকানাচ ঘুরে দেখতে।
তাঁকে দেখতে বুথের সামনে নানা বয়সের মানুষের ভিড় সামলাতে তাই মাঝে মাঝেই হিমশিম খেতে হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। বুথের কাছে প্রার্থীকে ঘিরে এ ভাবে জটলা হতে থাকায় বিরোধীরাও বারবার অভিযোগ করেছেন। অনেক সময় বুথের পাহারাদার জওয়ানেরাই নায়ককে বুথের ১০০ মিটার চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। বারাসত গার্লস স্কুলের মডেল বুথে ঢোকার সময় তো এক জওয়ান তাঁকে আটকেই দিলেন। পরে অবশ্য ভিতরে ঢুকতে পারলেন নায়ক। সেখানে এক ভোটকর্মীর অনুরোধে তাঁর সঙ্গে সেলফি বা নিজস্বীও তুললেন। বেরোনোর সময় নায়ক খোঁজ করলেন সেই আধাসেনার, বুথে ঢোকার
মুখে যিনি তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন। অনেক খুঁজেও তাঁকে না-পেয়ে চিরঞ্জিত নিজস্বী তুললেন অন্য এক জওয়ানের সঙ্গে।
বুথের ভিতরে ভোটকর্মীর সঙ্গে নায়ক-প্রার্থীর নিজস্বী তোলার বিষয়টি অবশ্য মেনে নিতে পারেনি বিরোধী শিবির। বারাসতের জোট-প্রার্থী, ফব-র সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
নায়কের আশেপাশে ভিড় অবশ্য ঠেকানো যায়নি। কখনও ভিড়টা নিছক তারকা-দর্শনের জন্য। আবার কখনও নায়ককে তাঁর জনপ্রতিনিধি-সত্তা সম্পর্কে সচেতন করিয়ে দেওয়ার জন্যও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে ভিড়। যেমন পঞ্চপল্লি প্রাথমিক শিক্ষায়তনের দু’টি বুথ ঘুরে চিরঞ্জিত বাইরে বেরোতেই ভিড় থেকে ফের প্রশ্ন উড়ে এল, ‘‘দাদা, আবার দেখা মিলবে তো?’’
এর মধ্যে প্রশ্ন যতটা আছে, তার থেকে অনুযোগ কম নেই। বারাসতে তাঁর দেখাই পাওয়া যায় না, চিরঞ্জিতের বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রচারের মূল কথা ছিল এটাই। ভোটের দিনে ভিড়ের ভিতর থেকে একই প্রশ্ন কানে যেতেই চিরঞ্জিত দলের এক নেতাকে বললেন, ‘‘আমি কিন্তু বছরের ২৫৫ দিন নিজের কেন্দ্রের জন্য সময় দিয়ে থাকি। বাকি দিন অভিনয়ের কাজ করি। এ বার আরও বেশি সময় দেব কেন্দ্রে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy