Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নেতাদের আশায় না থেকে জোটে কংগ্রেস কর্মীরা

নেতারা কী করবেন, সেই আশায় বসে না থেকে বামেদের মনোনয়নে হাজির হয়ে হাতে হাত মেলালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কংগ্রেসের অনেকেই। সোমবার সিদ্ধান্ত মতো এই জেলার ৬টি বিধানসভা আসনে বামেরা প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ঠিক করেছিল।

মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন বালুরঘাটের আরএসপি প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী। মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস কর্মীরাও।  ছবি :অমিত মোহান্ত।

মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন বালুরঘাটের আরএসপি প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী। মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস কর্মীরাও। ছবি :অমিত মোহান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

নেতারা কী করবেন, সেই আশায় বসে না থেকে বামেদের মনোনয়নে হাজির হয়ে হাতে হাত মেলালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কংগ্রেসের অনেকেই।

সোমবার সিদ্ধান্ত মতো এই জেলার ৬টি বিধানসভা আসনে বামেরা প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ঠিক করেছিল। বালুরঘাট সদর মহকুমার অধীন বালুরঘাট, তপন এবং কুমারগঞ্জ আসনে তিন বাম প্রার্থীকে নিয়ে এ দিন দুপুরে শহরের সাধনা মোড় থেকে বিরাট মিছিল বের হয়। সদর রাস্তা ধরে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে জেলা প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছয় ওই মিছিল। পাশাপাশি গঙ্গারামপুর মহকুমার তিনটি আসন—গঙ্গারামপুর আসনে জোটের সিপিএম প্রার্থী নন্দলাল হাজরা, হরিরামপুরে সিপিএম প্রার্থী রফিকুল ইসলাম এবং কুশমন্ডি আসনের আরএসপির প্রার্থী নর্মদা রায়কে নিয়ে বিরাট মিছিল বের হয় বুনিয়াদপুরে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস। দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলে হেঁটে জোট প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া পর্যন্ত ছিলেন এলাকার কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা।

বালুরঘাটের বিরোধী জোটের আরএসপি প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী ও তপনের রঘু ওঁরাও এবং কুমারগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মাফুজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান মানবেশ চৌধুরী সঙ্গে প্রাক্তন জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি গোপাল দেব সামনের সারিতে পায়ে পা মেলান। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে ওই মিছিলে সামিল হন তাঁর অনুগামী কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীরা। প্রার্থী বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে হাত ধরে মিছিলে হাঁটেন কংগ্রেস নেতা গোপালবাবু। পরে তিনি বলেন, তৃণমূলকে হটাতে বামেদের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত রাজ্য স্তরে হয়েছে। এ জেলার হরিরামপুর ও তপন আসন নিয়ে আলোচনা জারি থাকলেও বালুরঘাট সহ অন্য আসন নিয়ে বামেদের সঙ্গে সমঝোতায় কোনও সমস্যাও নেই। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বনাথবাবু আমাকে ডাকতেই সব দূরত্ব নিমেষে কেটে গিয়েছে।’’ বিশ্বনাথবাবুও গোপালবাবুকে স্নেহ ভরে কাছে টেনে নিয়ে হাতে হাত রাখতেই জোট কর্মীদের হাসি চওড়া হয়েছে। তাদের কয়েক জনের মুখে শোনা যায়, ‘‘নেতারা কবে কী করবেন, বুঝতে পারছি না। আমরা জোট চাই।’’

তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, ‘‘গোপালবাবু দলের কোনও পদে নেই। উনি ওই মিছিলে ব্যক্তিগতভাবে একাই ছিলেন। তাছাড়া কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে যে কেউ মিছিলে যেতে পারেন। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা জোটের পক্ষে আছি।’’

গত ১৫ দিন ধরে দক্ষিণ দিনাজপুরে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের মন কষাকষি চলছে। হরিরামপুর আসনে নীলাঞ্জনের নাম কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে প্রদেশ থেকে ঘোষণা হয়েছে। তার আগেই বামেদের পক্ষ থেকে হরিরামপুরে সিপিএম প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

এ জেলায় সিপিএম তাদের ভাগের তিনটি আসন থেকে গঙ্গারামপুর আসনটি কংগ্রেসকে দিতে চেয়ে দীর্ঘ দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। পাশাপাশি আরএসপির ভাগের তিনটি আসনের মধ্যে তপন আসনটি কংগ্রেস দাবি করলেও আরএসপি রাজি হয়নি। কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জনের অনড় মনোভাব টের পেয়ে বামেরা এ দিন সবগুলি আসনেই প্রার্থী মনোনয়ন পেশ করেছে। তাতে কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মী সমর্থকের অনেকেই নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে বামেদের জোটে সামিল হওয়ায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ জেলাতেও বিরোধী জোটের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য তৃণমূলকে হারাতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন আসনে জোটের কোন দলের প্রার্থীর জেতার সম্ভবনা বেশি, সেখানে তাঁকে রেখে অন্যদের সরে যেতে হবে।’’ আজ, মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন কোন পথে হাঁটেন, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE