দেশে বেসরকারি ক্ষেত্রের রমরমা সত্ত্বেও, সরকারি চাকরির প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ এখনও অটুট। সরকারি চাকরির সুরক্ষিত জীবন যে এখনও স্বস্তির কারণ, তা নিয়ে তেমন দ্বিমত নেই। দেশে প্রতি বছর সরকারি চাকরির যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ইউপিএসসি (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন), এসএসসি (স্টাফ সিলেকশন কমিশন) ও আইবিপিএস (ইনস্টিটিউট অফ ব্যাঙ্কিং পার্সোনেল সিলেকশন)। প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এই পরীক্ষাগুলি দেন। কিন্তু মাত্র হাতেগোনা কিছু প্রার্থীই সফল হন।
অনেকেরই ধারণা, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি পড়াশোনা করতে হবে বা প্রচণ্ড মেধাবী হতে হবে অথবা সব কাজ ছেড়ে শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতিই নিতে হবে। কিংবা নিজের ৯টা-৫টার চাকরি ছেড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিলে পরীক্ষায় পাশ করা যাবে না। কিন্তু, এই সব চিন্তাভাবনা সব সময় ঠিক হয় না। কারণ, প্রতিনিয়ত এই পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষায় সফল হতে দরকার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল।
১) গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ: পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরুর আগে প্রথমেই যে পরীক্ষাটি দিতে চান, সেটির ব্যাপারে সমস্ত তথ্য জেনে নেওয়া জরুরি। সবার আগে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য নথি ভাল করে খতিয়ে দেখা উচিত। এর পরে যোগ্যতার মাপকাঠিগুলি যাচাই করে পরীক্ষা কাঠামো ও সিলেবাসটি ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে। এ ছাড়াও, পরীক্ষার নিয়োগ বা পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপারে কোনও নতুন তথ্য এসেছে কি না, দেখার জন্য সংবাদপত্র ও সরকারি ওয়েবসাইটেও চোখ রাখতে হবে।
২) বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান: পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রের সমাধান করাও শক্তিশালী কৌশল। ওই প্রশ্নপত্রগুলির সমাধান করলে পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসে, কোন কোন বিষয়ে বেশি প্রশ্ন আসে, কী রকম নম্বর থাকে প্রতিটি প্রশ্নে— এ সব ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। প্রতিদিনের রুটিন মেনে এই প্রশ্নপত্র সমাধানের অভ্যাস করলে পরীক্ষায় খুব সুবিধা হয়।
৩) সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে সব খবরাখবর রাখতে হবে: প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেই বেশ খানিকটা অংশ থাকে, যেখানে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকে। তাই যে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে মানুষের জীবনকে নানা ভাবে প্রভাবিত করছে, সে সম্পর্কিত সমস্ত খবর পরীক্ষার্থীদের রাখতে হবে। এ জন্য সমস্ত খবরের চ্যানেল ও সংবাদপত্রে নজর রাখতে হবে।
৪) দৈনিক রুটিন প্রস্তুত করা: পরীক্ষা সংক্রান্ত নানা তথ্য জানার পরে একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। সিলেবাসের সমস্ত বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে এই রুটিন বানাতে হবে। কোন বিষয়ের জন্য কত সময় পরীক্ষার্থী বরাদ্দ করবেন, তাও ভাল ভাবে এই রুটিনে রাখতে হবে। এতে প্রস্তুতি জোরালো হবে।
৫) রিজ়নিং ও অ্যাপটিচিউডের অভ্যাস: প্রতিটি সরকারি পরীক্ষায় রিজ়নিং ও অ্যাপটিচিউডের উপর একটি অংশ থাকে। তাই প্রতিনিয়ত এই বিষয়গুলি ভাল মতো অভ্যাস করলে পরীক্ষার সময় সুফল পাবেন পরীক্ষার্থীরা।
৬) নোটস লেখা: প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় যদি বিভিন্ন বিষয়ে মূল ব্যাপারগুলি নোট নিয়ে রাখা যায়, তা হলে সেই পয়েন্টগুলি সাধারণত পরীক্ষার্থীদের খুব ভাল ভাবে মনে থেকে যায়। এ ছাড়াও, পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তে সমস্ত সিলেবাস দেখে নেওয়ার সময়ও এই নোটগুলি খুব উপকারে লাগে।
৭) সুস্থ থাকা: সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ না থাকলে এই সমস্ত প্রচেষ্টাই বৃথা যাবে। তাই পরীক্ষার জোরদার প্রস্তুতি নিলেও শরীরকে কখনওই অবহেলা করা যাবে না।
আরও পড়ুন:
শীঘ্রই ইউপিএসসি-র https://upsc.gov.in/–এই ওয়েবসাইটে ২৪১টি শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা রিজিওনাল ডিরেক্টর, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার, জুনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, ম্যানেজার, সেকশন অফিসার-সহ বিভিন্ন পদমর্যাদায় কাজের সুযোগ মিলবে। প্রতি পদে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতার পৃথক মাপকাঠি রয়েছে, যা মূল বিজ্ঞপ্তিতে বিশদে জানানো হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা যাচাই করা হবে পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে। আগ্রহীদের এর জন্য ইউপিএসসি-র ওয়েবসাইটে গিয়ে সমস্ত নথি-সহ আবেদন জানাতে হবে। আগামী ১৭ জুলাই আবেদনের শেষ দিন। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এবং শর্তাবলি বিজ্ঞপ্তি থেকেই জানা যাবে।