বহু পড়ুয়ার জীবনেই উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার। ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালক্ষ্মী যোজনা’ বা ব্যাঙ্কের শিক্ষাঋণ লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হয়ে উঠছে। কিন্তু এ বিষয়ে সকলের সম্মক ধারণা নেই।
রাজ্য সরকারের ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’—
রাজ্যের মেধাবীদের সাহায্যার্থে রাজ্য সরকারের তরফে ২০২১ সাল থেকে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য করে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় পড়ুয়ারা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন উচ্চশিক্ষার জন্য। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক থেকে সেমেস্টার ভিত্তিতে অথবা শিক্ষাবর্ষের ভিত্তিতে টাকা পাওয়া যায়।
দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পরই ঋণ-এর জন্য আবেদন করা যায়। তবে পড়ুয়াকে অন্তত ১০ বছর পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত নথি জমা দিলেই আবেদন করতে পারবেন পড়ুয়া। https://banglaruchachashiksha.wb.gov.in— এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’-এর আবেদন করতে পারবেন পড়ুয়ারা।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালক্ষ্মী যোজনা’—
২০২৪-এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে পিএম বিদ্যালক্ষ্মী প্রকল্প। এই প্রকল্পে মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষায় আর্থিক ঋণ দিয়ে থাকে কেন্দ্র সরকার। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়া যায় শিক্ষাঋণ। ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক পারিবারিক আয়ের কোনও পড়ুয়া ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষাঋণ পান। সুদের হার ৩ শতাংশ। কোনও জামানত বা গ্যারান্টার ছাড়াই ৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য এই ঋণ মেলে। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই ঋণ মঞ্জুর করা হয়। পাশাপাশি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কের নিরিখে কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন তা যাচাই করে নেওয়া হয়। pmvidyalaxmi.co.in এই ওয়েবসাইট থেকে প্রথমে নাম নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হয়। তথ্য পূরণের পর তা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলে, এবং সব ঠিক থাকলে ব্যাঙ্ক ঋণ মঞ্জুর করে।
আরও পড়ুন:
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ—
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-সহ কেন্দ্র সরকার অধীনস্থ ব্যাঙ্কগুলি থেকে শিক্ষাঋণ পাওয়া সম্ভব। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়ার সিভিল স্কোর যাচাই করা হয়। যদি কেউ দ্বাদশ উত্তীর্ণ হয়েই শিক্ষাঋণের আবেদন করেন সে ক্ষেত্রে পড়ুয়ার ফল ভাল হতে হয়। ক্রেডিট স্কোর ভাল থাকলে এবং পড়ুয়ার ফলাফল ভাল হলে শিক্ষাঋণ পাওয়া সহজ হয়। তবে এক একটি ব্যাঙ্কে এক এক হারে সুদ বরাদ্দ করা হয় ঋণের উপর। এ ক্ষেত্রেও ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
শিক্ষার মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি পাওয়া পর্যন্ত ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে ঋণ পূরণের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে ব্যাঙ্কের থেকে সরাসরি ঋণ নিলে গ্যারান্টার রাখতে হয়।
বিদেশে পড়ার জন্য ঋণ—
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে দেশের বাইরে কেউ পড়তে চাইলে প্রথমে বেমোমেট্রিক্স অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান যাচাই করা হয়। শুধুমাত্র স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই ঋণ মেলে। তবে সেখানেও মেধাতালিকা যাচাই করা হয়। কিন্তু বিদেশে পড়ার খরচ অনেকটাই বেশি। সেই খরচ অনেক সময় পর্যাপ্ত ঋণ নিয়েও মেটানো সম্ভব হয় না। তখন ব্যাঙ্কের তরফে কোনও সিকিউরিটি মর্টগেজ করলে আরও টাকা ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকে। এই ব্যবস্থায় শুধু বিদেশের জন্য নয়, দেশের মধ্যেও ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকে।
তবে মনে রাখতে হবে, ঋণ শোধের বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষাঋণ নেওয়ার আগে অবশ্যই কোথা থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, এবং তার সব দিক খুঁটিনাটি দেখে নিয়েই আবেদন করা ভাল।