Advertisement
E-Paper

নারীর মধ্যেই দেবীর বাস, তাই সব মেয়ের মধ্যেই সরস্বতীকে খুঁজে বেড়াই: অম্বরীশ ভট্টাচাৰ্য

‘“দুষ্টু সরস্বতী’ আমার মাথায় সব সময় বিরাজ করেন। সেই জোরেই পুজোর আগে কুল খেয়েছি। দেবীর দাক্ষিণ্যেই আমার জীবনে প্রেমের আনাগোনা।”

অম্বরীশ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২৯
দেবী সরস্বতী অম্বরীশ ভট্টাচার্যের কাছে প্রেমের প্রতীক।

দেবী সরস্বতী অম্বরীশ ভট্টাচার্যের কাছে প্রেমের প্রতীক। ছবি: সংগৃহীত।

এই একটা দিন মন খুলে শ্বাস নেওয়ার দিন। বাকি দিনগুলো বড়দের শাসনে বাঁধা। দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলি— ছোটবেলায় সব পুজো কাটত মা-বাবার হাত ধরে। কেবল সরস্বতী পুজোয় অবাধ স্বাধীনতা। ছেলেবেলায় আমার কাছে এটা যদিও একটা পুজোই। কিন্তু বড়দের কথায়, এই পুজো বাচ্চাদের পুজো। মানে, ছোটরা আয়োজনে যোগ দিতে পারবে। চাঁদা চাইতে যেতে পারবে। পাড়ার দাদাদের সঙ্গে বেরিয়ে পুজোর বাজার করতে পারবে... আরও অনেক কিছু। এই পুজোতেই প্রথম জানলাম, দায়িত্ব নিয়ে আমিও ঠাকুর আনতে যেতে পারি।

বাবা কড়া বামপন্থী। বাড়িতে পুজোপাঠ নেই। আমারও মন্ত্রতন্ত্রে একটুও আস্থা নেই। কিন্তু পুজোর দিন সকালে ধোপদুরস্ত হয়ে পাড়ার প্যান্ডেলে থাকতে কোনও আপত্তি নেই। অঞ্জলি দিইনি কোনও দিন। পুজোর আগেই কুল খেয়ে নিতাম। মাথায় সারা ক্ষণ ‘দুষ্টু সরস্বতী’র বাস। ফলে, পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা। কিন্তু সকাল সকালে স্নান সেরে হলুদ শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে মেয়েরা যখন বসে ফল কাটত, মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। সরস্বতী পুজোর দিন সমস্ত নারী আমার চোখে মারকাটারি সুন্দরী!

বাঙালির পুজো-পার্বণে আর সেই বাঙালিয়ানা নেই। যেমন, এখন বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো উঠে গিয়েছে। ব্যতিক্রম সরস্বতী পুজো। এখনও এই দিনে মেয়েরা বাসন্তী শাড়িতে সাজে।

আরও একটু বড় হতে বাগ্‌দেবীর আরাধনায় আরও বাসন্তী রং লাগল। চিরকাল ছেলেদের স্কুলে পড়ে আসা ছেলেটি এই এক দিন মেয়েদের স্কুলে পা রাখতে পারবে। পরের দিন যারা ‘হলদে প্রজাপতি’, আগের দিন তারাই আমাদের স্কুলে এসে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করে যেত। এর আকর্ষণ যে অমোঘ, কেবল পুরুষ বোঝে! কলেজে পা দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পড়ে ফেলেছি। লেখক দেবীকে প্রেয়সী রূপে দেখেছিলেন। সাহিত্যিকের ‘অর্ধেক জীবন’ পড়ে জেনেছিলাম, সুনীলের প্রথম চুম্বন বাগ্‌দেবীকে। ওঁর সেই রোম্যান্টিক ভাবনা আমার বেশ লেগেছিল। কিন্তু আমি অত সাহসী নই। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটি ততটাও সাহস দেখাতে পারেনি। তবে দেবীপ্রতিমাকেও যে আপন করে নেওয়া যায়— এই শিক্ষার হাতেখড়ি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমায় দিয়েছিলেন।

বলতে পারেন, এর পর থেকেই আমি প্রত্যেক মেয়ের মধ্যে দেবী সরস্বতীকেই খুঁজি। কোনও বিদ্যাবতীকে দেখে মনে ধরেছে। মনে হয়েছে, ওঁর সান্নিধ্য পেতে আমি পড়াশোনায় আরও একটু বেশি মনোযোগী হতেই পারি। কিংবা কেউ ভীষণ ভাল গাইতে পারেন। আমি হয়তো গুনগুনিয়ে গলা সেধেছি। আমার হৃদয়ে দেবী সদা বিরাজমানা। ওঁর দাক্ষিণ্যেই জীবনে প্রেমের অনায়াস আনাগোনা। প্রেম আমার কাছে বহতা নদীই। ওই জন্যই নদীর আর এক নাম সরস্বতী!

Ambarish Bhattacharya Saraswati Puja Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy