‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়, রইল না রইল না, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি...’
রবীন্দ্রনাথ সারা ক্ষণ প্রাসঙ্গিক। আনন্দবাজার ডট কমে তোমায় নিয়ে লিখতে বসার সময়েও। আজ তোমার জন্মদিন। তোমার মনে পড়ে বিকেলের সেই আড্ডাগুলোর কথা? আর্টিস্ট ফোরামের অফিসে তুমি, আমি, সব্যসাচী চক্রবর্তী, কখনও কখনও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এমনকি,আমাদের সাহেব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও হাজির হতেন! চা, চানাচুর, বাদাম, শিঙাড়া, মুড়ি সহযোগে আড্ডা। নতুন কাজের ভাবনা ভাগ করে নেওয়ার সন্ধ্যাগুলো হাজার মাথা খুঁড়লেও আর ফিরবে না।
সেই দিনগুলো,সেই মানসিকতাই আর নেই! সেই যে, তুমি আমাদের অফিস ঘরের জন্য ঘর ঠান্ডার মেশিন (পড়ুন এয়ার কন্ডিশনার) কিনে দিয়েছিলে। তুমি তখন ছোট পর্দার উত্তমকুমার। যেমন দেখতে, তেমনই কণ্ঠস্বর। তোমায় দেখতে স্টুডিয়ো চত্বরে লোক জমত। সেই তুমি গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলে, “দেবদূত, এসির পুরো দাম ১৯ হাজার টাকা দিচ্ছি। তোরা সাড়ে আঠেরো হাজার টাকা ফেরত দিস। বাকি ৫০০ টাকা আমার তরফের।” এ ভাবেই আমরা মাথাপিছু ৫০০ টাকা দিয়ে তোমার ঋণশোধের চেষ্টা করেছিলাম।
পেরেছিলাম কি? তুমি প্রথম বুঝেছিলে, গরমের দিনে আর্টিস্ট ফোরামের এক কামরার অফিস ঘরে একটা এসি দরকার। সেখানে তৎকালীন তারকাদের নিত্য আনাগোনা। সংগঠনের মাথায় সৌমিত্রবাবু। তদারকিতে বুম্বাদা, রূপাদি (গঙ্গোপাধ্যায়)।
তুমি কী ভীষণ নির্লিপ্ত ছিলে! না নামের মোহ, না টাকাপয়সার। কোনও দিন আখের গোছাওনি। এই প্রজন্মকে দেখলে তোমার উপরে রাগ হয়। কষ্টও হয়। তোমাকে টলিউড ব্যবহার করতে পারল না। তুমি, পীযূষদা (গঙ্গোপাধ্যায়)— তোমাদের অভিনয় দেখতে লোকে ছোট পর্দায় চোখ রেখে বসে থাকত। হবে না কেন! তোমরা মঞ্চের ছেলে। তোমাদের কত নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, পরিশ্রম! আজও যদি তোমরা থাকতে, আমি অভিনয়ের ডাক পেতাম না।
আরও পড়ুন:
ইদানীং, কারণে-অকারণে তোমায় মনে পড়ে। তুমি যদি আর একটু থাকতে, ছোট পর্দার প্রতি দর্শকদের আরও বেশি আগ্রহ থাকত। তুমিও কি হতাশ হয়ে পড়েছিলে? বেহিসেবি, পেশাজীবন সম্পর্কে অনাসক্ত কুণাল মিত্র শেষ দিকে প্রায়ই বলত,“দেহপটের যত্ন নিয়ে নট আর কী করবে? কেউ ডাকবে? আদৌ কি কেউ ডাকবে আর?” তার পরেই ছ’কিলো মাংস আর দুটো মদের বোতল কিনে ফেলতে। তোমার মোচ্ছব শুরু। নিজের প্রতি আরও বেশি করে অত্যাচার। দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার জন্যই এত আয়োজন তোমার।
তোমার শেষের দিনটা খুব মনে পড়ে। রূপাদি আমাদের ফোন করে জানাচ্ছে। বুম্বাদা ফোন পেয়ে প্রথমে স্তব্ধ। তার পর হাইহাউ কান্না। প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিল। লোকে বলে, বুম্বাদা নাকি প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক। তাই যদি হবে, তা হলে সে দিন ও ভাবে ভেঙে প়ড়ত না। কুণালদা, বুম্বাদা সে দিন কিন্তু অভিনয় করেনি।