যখন সব ভাল ছিল: শুটের ফাঁকে তিয়াসা, নীল, বিভান
বাড়তি উপসর্গ মনকে দুর্বল করছে? তুলনায় সপ্রতিভ গলা, নিজেকে নিয়ে ততটা চিন্তা নেই নীলের যতটা মা-বাবাকে নিয়ে, ‘‘ওঁদের তো বয়স হয়েছে!’’আর যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় তাই সবার আগে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেছেন নীল। মা তাঁকে ঘরের বাইরে থেকে খাবার দিচ্ছেন। খাওয়ার পর সেই থালাবাসন এক বালতি ডেটল জলে চুবিয়ে দিচ্ছেন নীল। তারপর বাড়ির লোক সেটি নিয়ে গিয়ে ভাল করে মেজে, স্যানিটাইজড করে আলাদা রেখে দিচ্ছেন।
এর সঙ্গেই নীলের সংযোজন, ভেবেছিলেন কমপ্লেক্সের প্রতিবেশীরা হয়তো ভয় পাবেন, এড়িয়ে যাবেন তাঁদের। চারপাশে যেমন হচ্ছে। তাঁর ক্ষেত্রে কিন্তু উল্টো ছবি দেখলেন। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁর। মনের জোর বাড়ানোর পাশাপাশি সব রকমের সাহায্য করতে পড়শিরা প্রস্তুত।
যাঁর দিন শুরু হত শুটিং দিয়ে, দিনের শেষে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সোশ্যালে, সেই ‘নিখিল’-এর দিন এখন কাটছে কী ভাবে? বিশেষ করে অন্যতম প্রধান চরিত্র হওয়ায় এনওসি দেওয়ারও যখন উপায় নেই! তখন কৌতূহলী নীল অনুরাগীরা। ‘‘বিশ্রামে তো আছিই। দেরি করে ঘুম থেকে উঠছি এখন। ক্লান্তি কাটাতে ঘুমের থেকে ভাল ওষুধ আর কিচ্ছু নেই। আর এর মধ্যেও যেটা বন্ধ রাখিনি সেটা অভিনয়। বাড়ি থেকে মোবাইলে নিজের অংশ অভিনয় করে পাঠিয়ে দিচ্ছি, যাতে আমার জন্য ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকে কোনও সমস্যা না তৈরি হয়। সিরিয়ালের প্রতি আমারও তো দায়িত্ব আছে।’’
নীলের মতে, এনওসি দেওয়ার প্রশ্নও নেই। সেটা ভীষণ স্বার্থপরতা হয়ে যাবে। তাঁর জন্য একটি গোটা সিরিয়াল আটকে যাবে, টিআরপি রেটিং পড়বে, কাজ বন্ধ হয়ে যাবে ৫০ থেকে ১০০ জনের—এটা তিনি কিছুতেই করতে পারেন না শুধুমাত্র নিজের শারীরিক সুস্থতার কথা ভাবতে গিয়ে!
এই উত্তর বুঝিয়ে দিল, কোথাও যেন নীল আর ‘নিখিল’ অন্যের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সমমনস্ক। তাই অসুস্থ শরীরে বাড়িতেই মোবাইলে শুট করছেন নিয়মিত। নিজের অংশ পাঠাচ্ছেন। সেটা টেলিকাস্টও হচ্ছে। কিন্তু সেট নেই, সহ-অভিনেতা, পরিচালক নেই। কী ভাবে সামলাচ্ছেন সবটা?
কাজের কথা উঠতেই অভিনেতার গলায় উৎসাহের ছোঁয়া, ‘‘প্রযোজক কস্টিউম পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমার শুট করতে যাতে সমস্যা না হয় সেভাবেই সিন বলছেন। বলতে পারেন, সমস্যার বদলে ভীষণ মজা হচ্ছে। আমার ঘরেই যেন শুট হচ্ছে, এ ভাবে সিন চলছে। যার একদিকে আম্রপালি। আর একদিকে আমি স্ট্যান্ডে মোবাইল সেট করে, ড্রেস পরে অভিনয় করছি। সেগুলোই পর্দায় দর্শক দেখছেন এখন।’’
গলা ভাল রাখতে গার্গলিং, ভেপার নেওয়া, গরম জল খাচ্ছেন নিয়মিত। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম ছাড়া আর কী করছেন? উত্তর এল, ইমিউনিটি বাড়ায় যে সব খাবার সেগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশি করে খাচ্ছেন। জল, স্টু জাতীয় সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন।
সুস্থ হয়ে ওঠার পরে মেকআপ রুম শেয়ার করতে ভয় করবে? আপনাকে দেখেও তো ভয় পেতে পারেন অন্যরা? পরের উত্তর আগে দিলেন নীল, ‘‘ভয় পাওয়া ভাল। একটু ভয় পাক সবাই। তাহলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে সচেতন হবেন।’’
নিজের মতো করে বুঝিয়ে দিলেন তিনি, ‘‘ধরুন আমার বাড়াবাড়ি হল। সংগঠনের দেওয়া মেডিক্লেম নিয়ে আমি কোনও নার্সিংহোমে গেলাম। কিন্তু ডাক্তারবাবু ভয়ে ঘেঁষতেই চাইছেন না আমি করোনা রোগী বলে। তা হলে আমার চিকিৎসা হবে কী করে! জরুরি পরিষেবার মানুষেরা যেমন ভয় দূরে সরিয়ে সব কাজ করে যান আমিও সুস্থ হয়ে সেটাই করব। স্টুডিয়ো যাব। মেকআপ রুম শেয়ার করব। সামাজিক দূরত্ব মেনে অভিনয় করব। কারণ, স্টুডিয়োয় যথেষ্ট সতর্কতা মানা হচ্ছে। এমনও তো হতে পারে, বাজার বা অন্য জায়গা থেকে সংক্রমিত হয়েছি!’’
কথা শেষ লাখ টাকার প্রশ্নে, ‘শ্যামা’ খবর নিচ্ছে ‘নিখিল’-এর? হালকা হাসির সঙ্গে উত্তর, ‘‘নিয়মিত নিচ্ছে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে কাজে ফেরার শুভ কামনাও জানিয়েছে।