বয়স কত শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের? ওই প্রশ্ন করবেন না। পরিচালক-অভিনেতা ইদানিং খোলা রাস্তায় ব্রেক ডান্স করছেন! এমন পুরুষের কেউ বয়স জানতে চায়? কিন্তু ক্যালেন্ডার বলছে, মঙ্গলবার ২০ মে তিনি জীবনের আরও একটি বসন্ত কাটিয়ে ফেললেন! আজ জন্মদিন তাঁর। এ ভাবেই একটি করে বছর পেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাংলা বিনোদন দুনিয়ার দাবি, শিবপ্রসাদ আরও নিজেকে খুলছেন। পর্দায় তাঁর রোমান্সের আঁচে পুড়ছেন অনুরাগিনীরা! যদিও প্রযোজক-অভিনেতার দাবি, ক্যামেরার সামনে নাকি তাঁর প্রেম পায় না! তিনি আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরিচালক নন্দিতা রায় বেত হাতে তাঁকে দিয়ে করিয়ে নেন। বাকিটা নায়িকাদের হাতযশ।
তাঁকে নিয়ে গুগলে পড়াশোনা করলে জানা যাবে, নায়ক হিসাবে শিবপ্রসাদের ছবির সংখ্যা হাতেগোনা। তাঁর বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় জয়া আহসান, গার্গী রায়চৌধুরী, পাওলি দাম, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। সত্যিই কি তিনি এতটাই ‘শুষ্কং কাষ্ঠং টাইপ’? না কি রোমান্টিসিজ়মের চোরাস্রোত হদয়ে নিঃশব্দে বইছে? কী বলছেন পরিচালক-অভিনেতার নায়িকারা?
বাড়িতে শিবপ্রসাদের স্ত্রী জ়িনিয়া সেন, পর্দায় মিতালি...
“শিবপ্রসাদ এখনও পর্যন্ত যতগুলো ছবিতে নায়কের ভূমিকায়, সবচেয়ে বেশি বার আমি ওঁর স্ত্রী। বাড়িতে শিবপ্রসাদের স্ত্রী জ়িনিয়া সেন। পর্দায় আমি, মিতালি”, অভিনেতা-পরিচালককে নিয়ে বলতে গিয়ে গর্বে, আনন্দে উচ্ছ্বসিত গার্গী রায়চৌধুরী। শিবপ্রসাদ তাঁর আদরের ‘লাল্টুবাবু’। “পদবী দত্ত হোক, বিশ্বাস কিংবা মণ্ডল। মিতালির লাল্টু, লাল্টুর মিতালি”, প্রচ্ছন্ন আত্মবিশ্বাস অভিনেত্রীর কণ্ঠে।
অন্য নায়িকার খোলা পিঠে যখন কবিতা লেখেন নিশ্চয়ই হিংসা হয়? নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন?
“কখনও না। ভাল লাগে। উপভোগ করি। বুঝতে পারি, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কতটা ভার্সেটাইল। আর বিশ্বাস আরও জোরালো হয়, যতই অন্যের সঙ্গে পর্দায় প্রেম করুক, মিতালির কাছেই আত্মসমর্পণ করবে লাল্টু।” একটু শ্বাস নিলেন। যোগ করলেন, “এই বিশ্বাসটাই আমাদের জুটির মুলধন। ওই জন্যই তো আদরের ওই ডাকটা বিখ্যাত, ‘লাল্টু বাবু’!” কিন্তু ‘লাল্টু’ তো মোটেই গোছানো নয়। বরং বড্ড এলোমেলো... কথা কেড়ে গার্গী বলে উঠলেন, “ভীষণ ভাল মানুষ। ছেলেমানুষ। সরল, সাধাসিধে। ওতেই তো মেয়েরা মজে। স্ত্রীরা এই ধরনের স্বামীকেই পছন্দ করে। শাসনও করবে। আবার দু’হাত দিয়ে আগলাবেও।”
বাস্তবে এটাই কি শিবপ্রসাদের সেক্স অ্যাপিল? বাস্তবে শিবপ্রসাদ নিপাট পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক। জ়িনিয়ার বাইরে ওঁর দুনিয়া নেই। একই ভাবে মা এবং দিদির খেয়াল রাখেন। যখন কোনও পুরুষ নারীকে এ ভাবে সম্মান করেন সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় যৌন আকর্ষণ হয়ে ওঠে। প্রিয় নায়কের জন্মদিনে ফাঁস করলেন গার্গী।
যিনি রোমান্টিক তিনি কি আর প্রকাশ করেন?
এ কথা তাঁর ‘কণ্ঠ’ ছবির নায়িকা পাওলি দামের। পর্দায় তিনি পৃথার স্বামী অর্জুন। “শিবুদার মধ্যে রোমান্টিসিজ়ম পুরো মাত্রায় রয়েছে। উনি প্রকাশ করেন না। যিনি যত রোমান্টিক তিনি ততটাই চাপা”, কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছেন পাওলি। তাঁর মতে, বড় মাপের অভিনেতাদের এটাই বড় গুণ। তাঁরা নিজেদের সংযত রাখতে জানেন। কী পর্দায়, কী বাস্তবে! তা হলে যে পরিচালক-অভিনেতা বলেন, তিনি নাকি এই ধরনের দৃশ্যে ভীষণ আড়ষ্ট? “মজা করেছেন হয়তো। ভীষণ মজার মানুষ তো!” নায়িকার পাল্টা যুক্তি, ক্যামেরায় তখনই কোনও জুটিকে সুন্দর দেখায় যখন রসায়ন সঠিক ভাবে প্রকাশ পায়। শিবপ্রসাদ সেই পথের পথিক। তাই আবারও জুটি বাঁধার জন্য মুখিয়ে পাওলি।
আবারও পৃথা-অর্জুন হয়ে ফিরতে চান? “সেটা নন্দিতাদি ঠিক করবেন। আমি শুধু শিবুদার সঙ্গে আবার অভিনয় করতে চাই। সেটা পৃথা-অর্জুন হিসাবেই হোক কিংবা অন্য কোনও ভূমিকায়।” যাঁর মধ্যে এত রসায়ন তাঁর ‘এক্স ফ্যাক্টর’ কী? প্রশ্ন শুনে ফোনের ও পারে হা-হা হাসি। পাওলির লাজুক গলায় দাবি, “শিবুদা দুর্দান্ত ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন। উনি অভিনেতা না হলে খেলোয়াড় হলেও খ্যাতি অর্জন করতেন। ওঁর ওই রূপ আমার বেশ লাগে।”
দেখেছেন, কত মিল আমাদের...
তিন দিন আগে তাঁর জন্মদিন গিয়েছে। তিন দিন পরে তাঁর ‘ময়দামুখো’র জন্মদিন। কথা তুলতেই আবেগে ভাসলেন শিবপ্রসাদের সাম্প্রতিক নায়িকা কৌশানী মুখোপাধ্যায়। ‘বহুরূপী’ ছবিতে তাঁর আর নায়কের প্রেম দর্শকদের খুব পছন্দ। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে নায়িকা বললেন, “দেখেছেন, কত মিল আমাদের!” এত যাঁর সঙ্গে মিল তিনি যখন পর্দায় অন্য নায়িকার বক্ষলগ্ন, খোলা পিঠে কবিতা লেখেন... কৌশানীর কি বুকের কাছটা চিনচিন করে ওঠে? প্রশ্ন শুনে দরাজ হাসি এ বার। নায়িকার আত্মবিশ্বাসী জবাব, “হিংসে করার কিছু নেই। কারণ, জানি সব থেকে বেশি আমার সঙ্গেই হিট জুটি। দর্শকেরাও সিলমোহর দিয়েছে সেটাতে।”
রাজ চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হয়ে, সৃজিত মুখোপাধ্যায়। একটানা দৌড়ের পর একটু অবসর প্রয়োজন। কৌশানী তাই তাঁর জীবনের নায়ক বনি সেনগুপ্তের সঙ্গে ছুটিতে থাইল্যান্ড। গন্তব্যে যেতে যেতেই হোয়াটসঅ্যাপে মনের কথা উপুড়।
শিবপ্রসাদ আজীবন তাঁর ‘ময়দামুখো’ হয়ে থাকুন, এমনটাই কি চান কৌশানী?
আরও পড়ুন:
এ ব্যাপারে নায়িকা পুরোপুরি নির্ভরশীল তাঁর নায়কের উপরে। বললেন, “আমার ময়দামুখোর উপরে বিশ্বাস আছে। জানি, সব থেকে ভাল চরিত্রের জন্যই আমায় বাছবে।” এত ভরসা! কথা ফুরনোর আগেই পাল্টা যুক্তি হাজির, শিবপ্রসাদের হৃদয় যে সোনার টুকরো! সেখানে সকলের জন্য মঙ্গলকামনা, সকলের জন্য শুভ চিন্তা। “এটাই তো শিবুদার ‘এক্স ফ্যাক্টর’!”, দাবি নায়িকার। পর্দার মতো বাস্তবেও তিনি স্ত্রীকে চোখে হারান, এ কথাও জানাতে ভোলেননি কৌশানী।