শনিবার তোর জন্মদিন গেল। রবিবার তোকে খোলা চিঠি লিখছি। এমনিতেই আমার মতো মা তাঁর সন্তানকে চিঠি লিখলে সেটা নিজ গুণে ‘খোলা’-ই হয়। আনন্দবাজার অনলাইন জানতে চেয়েছিল, তোর জন্মদিনে কী করলাম, তুই কতটা বড় হলি? ঘাত-প্রতিঘাতে বয়সের তুলনায় আগেই কি বড় হয়ে গেলি? এ সব শুনে মনে হল, এই সুযোগে আমার আর তোর গল্প তুলে ধরি।
তুই এখন ষষ্ঠ শ্রেণি, বড় হয়েছিস তো বটেই! হয়তো একটু বেশিই। আমার তাই নিয়ে কোনও দুঃখ নেই। একটা চারাগাছ তরতরিয়ে বেড়ে উঠছে। দেখতে বেশ লাগছে। তুই যেমন আর পাঁচটা ছেলের মতো না, আমিও তো আর পাঁচজন মায়ের মতো নই! তোর জন্য কোনও দিন প্রার্থনা করিনি, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। কারণ, এই প্রজন্মের দুধ সহ্য হয় না— এটা জানি। বদলে মন থেকে চাই, তুই মানুষ হ’, এমন ভালমানুষ যে প্রকৃতিকে বুঝবে। পৃথিবীকে বাকিদের বাসযোগ্য করার চেষ্টা করবে। অনেক গ্রহের মধ্যে কেবল এই গ্রহেই জল আছে, আছে প্রাণের স্পন্দন। আমরা খুব ভাগ্যবান রে।
আরও পড়ুন:
তুই-ও তো আমার লক্ষ্মী ছেলে। কোনও বায়না নেই, অভাব নেই, অভিযোগ নেই। এমনকি, জন্মদিনে বাবা কোনও খোঁজ না নিলেও নেই! কেনই বা দুঃখ পাবি? তুই তো আমার পরিবারের আগামী প্রজন্ম। আমার ছায়ায় বেড়ে উঠছিস। ছোট থেকে তোকে এ ভাবেই বেড়ে ওঠার শিক্ষা দিয়েছি। তুই খাতায়-কলমে এখনও ‘মল্লিক’, মনেপ্রাণে ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। সেই জন্যই জন্মদিনে মায়ের কাছে ‘ডালগোনা ক্যান্ডি’ খেতে চাস। বিরিয়ানি বা তিন থাকের কেক নয়। যাকে বাংলায় ‘বাতাসা’ বলে। বাতাসের গায়ে ছুঁচ দিয়ে সূক্ষ্ম আঁচড় কেটে নকশা বানালে যেমন দেখতে হয়, তেমনই। গত কাল তুই আর আমি মিলে এই মজার খাবার তৈরি করলাম।
তুই ‘একা মা’-এর বড় অদ্ভুত ছেলে। হাজার মনখারাপেও চোখ ভেজে না তোর। মুখও ভারী হয় না! সারা ক্ষণ হাসছিস। তোর এই মুখটাই আমায় লড়াইয়ের সাহস জোগায়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, আজীবন যেন তুই আর আমি মিলে এ ভাবেই এগিয়ে যেতে পারি। যাতে আগামীতে আরও ‘খোলা চিঠি’ লিখতে পারি।
সেই চিঠি যেন আমার মতো আরও ‘একা’দের বেঁচে থাকার রসদ হয়ে ওঠে....
তোর মা।