বিয়ের পরে এই দ্বিতীয় নববর্ষ আমার। গত বছর নববর্ষে গর্ভে কৃষভিকে নিয়ে শুটিং করেছিলাম। তার পরে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া হয়েছিল। এ বারও যাবতীয় উদ্যাপন বাড়িতেই হবে। কারণ পরিবারে যে কনিষ্ঠ সদস্যের সংযোজন হয়েছে, তাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। আমরা অবশ্য বাড়িতেই যে কোনও উদ্যাপন করতে ভালবাসি। নববর্ষে আমাদের বাড়িতে বাঙালি খাবার বাধ্যতামূলক। পোলাও আর পাঁঠার মাংস রান্না না হলে কাঞ্চনের মনখারাপ হয়ে যায়। তার সঙ্গে ফিশফ্রাই, পাতুরি, চাটনি, মিষ্টি তো থাকেই। তবে আমি নববর্ষে পুজো দিই। এ বারও সেই পরিকল্পনা রয়েছে।
নববর্ষে সাজের প্রসঙ্গ আসেই। আর আমি সাজগোজ, পোশাক, গয়না খুব ভালবাসি। সারা বছরই প্রায় পোশাক কেনা থেকে আমি বিরত থাকি না। তবে সবার আগে কৃষভির পোশাক কিনেছি। খুব সুন্দর একটা ধোতি প্যান্টের সঙ্গে শেরোয়ানির মতো একটা হালফ্যাশনের পোশাক কিনে এনেছি আমি আর কাঞ্চন। আর নিজের জন্য শাড়ি। বরাবরই শাড়ি আমার প্রিয় পোশাক। আত্মীয়স্বজনের জন্যও আমি নববর্ষের পোশাক কিনি। তা ছাড়া গৃহকর্ম সহায়িকা, গাড়ির চালক সকলকেই উপহার দিই। কাঞ্চনও বাঙালি সাজে সেজে উঠবে। সে-ও ধুতি-পাঞ্জাবি কিনেছে। যদিও ওর কেনাকাটায় খুব একটা আগ্রহ নেই। জোর করেই ওকে কিনিয়েছি।
তবে গয়না কেনা নিয়ে তেমন আগ্রহ আমার নেই। ছিমছাম থাকতেই ভালবাসি। বিয়ের পরে নতুন বছরে সোনার গয়না তো পরতেই হয়। বিয়েতে খুব সুন্দর সুন্দর গয়না পেয়েছি। যেমন কাঞ্চনের মায়ের একটা সীতাহার আছে। এর কোনও অনুকরণ হতে পারে না। আমার মায়েরও বেশ কিছু গয়না রয়েছে। এই পুরনো কায়দায় তৈরি গয়নাগুলো ভাঙিয়ে আমি নতুন কিছু গড়ব না। এই ডিজ়াইনগুলো খুব দামি। মেয়ের জন্য সব রেখে দিয়েছি। এই বছর নিজের জন্য না কিনলেও কৃষভির জন্য কিছু কিনব।
কৃষভির পাঁচ মাস বয়স হয়ে গেল দেখতে দেখতে। আমারও মা হিসেবে বয়স পাঁচ মাস। রোজ কিছু শিখছি। বাচ্চার কোন কান্নার কী অর্থ, এখন বুঝেছি। এখন যাঁরা নতুন মা হচ্ছেন, তাঁদেরও পরামর্শ দিই। আমার মা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। মা না থাকলে আমি কাজে যোগ দিতে পারতাম না। কাজটাই তো আমাদের ভাল রাখে। কাঞ্চনও কাজে যোগ দিতে উৎসাহ দেয়। আর এখন কৃষভি অনেকটাই ছোট। বায়না করতে শেখেনি। এখন কাজ করতে পারব। আর একটু বড় হলে আরও দায়িত্ব বাড়বে। তখন ওকে বেশি সময় দিতে হবে। আর একটা কথাও জানিয়ে রাখি। আমরা কন্যাসন্তানই চেয়েছিলাম। সে-ই এসেছে আমাদের সংসারে। তবে কন্যাসন্তানকে মানুষ করার দায়িত্বও অনেক বেশি। ছেলেরা সহজেই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারে। যতই আমরা বলি আধুনিক হয়েছি, আজও মেয়েদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়। আমার মা কিন্তু কখনও পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেননি। কিন্তু আমি কখনও প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হইনি। তার কারণ একটা সুস্থ পরিবেশ পেয়েছিলাম। সেই সুস্থ পরিবেশ মেয়েকেও দিতে চাই।
বাচ্চাকে বড় করার ক্ষেত্রে আমার একটা বড় উপলব্ধি হয়েছে। বাচ্চাকে সুস্থ ভাবে বড় করতে অর্থ এখন বড় বিষয়। তাই কাজ করা জরুরি। আমি অনেক ছোট থেকেই স্বনির্ভর। লিঙ্গসাম্যের কথাও আমরা বলি। তাই বাবা-মা দু’জনেরই আর্থিক দিক নিয়ে ভাবা দরকার। বাবা শুধু রোজগার করবে আর মা বাড়িতে শ্রম দেবে— এমন পন্থায় আমি বিশ্বাসী নই। আমি বাড়িতে না থাকলে মেয়েকে যথেষ্ট সময় দেয় কাঞ্চন। ন্যাপি বদলানো থেকে দুধ খাওয়ানো, সবটাই কাঞ্চন সামাল দেয়। কাঞ্চনকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ও নিজের মায়ের জন্য যা করেছে, আজকালকার ছেলেরা করবে না। তার পরে প্রেমিক ও স্বামী কাঞ্চনকেও দেখেছি। এখন দেখছি ও বাবা হিসেবে কেমন। ওর সহযোগিতা ছাড়া আমি এতটা পথ চলতেই পারতাম না।
তবে একটা কথা না লিখে পারলাম না। আমি একটু বেশিই কেনাকাটা করি। এখন অবশ্য নিজের চেয়ে মেয়ের জন্য বেশি কিনি। সেটা নিয়ে সামান্য আপত্তি আছে ওর। তখন একটু অভিমানী হয়ে বলে দিই, “এটুকুই তো কিনেছি!” ওতেই সব মিটে যায়। আমি রাত করে ঘুমোই, দেরিতে উঠি, তা নিয়ে কোনও আপত্তি করে না ও। কাঞ্চন তথাকথিত স্বামীদের মতো নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা পরস্পরের খুব ভাল বন্ধু। আমাদের নিজেদের তেমন কোনও বন্ধু নেই। শেষ কয়েক বছরে বুঝেছি, বন্ধুত্বের নাম করে পিঠে ছুরি বসানোর মানুষই বেশি। সময় মানুষ চিনিয়ে দেয়। আজ ১৪ বছর হয়ে গেল কাঞ্চনের সঙ্গে, ওকেই আমি নিজের প্রিয় বন্ধু মনে করি। ওরও প্রিয় বন্ধু আমিই। সব রকমের পরিস্থিতিতে আমরা পরস্পরের পাশে থাকি।