বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্প ‘তালনবমী’ তাঁকে ছুঁয়েছিল। তাঁকে ছুঁয়েছিল গ্রাম্য সমাজে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্তদের যন্ত্রণা। ফলাফল, ‘সহজপাঠের গপ্পো’। শহর থেকে মফস্সল— আবেগে ভেসেছেন সব শ্রেণির দর্শক। একই সঙ্গে প্রত্যাশা, কবে ‘সহজপাঠের গপ্পো’র মতো ছবি নিয়ে ফিরবেন পরিচালক মানসমুকুল পাল। প্রথম ছবির ন’বছর পরে অবশেষে ফিরছেন তিনি। এ বার আনছেন ‘চণ্ডী কথা’। আনন্দবাজার ডট কমকে মানসমুকুল জানিয়েছেন, আর একটা ‘সহজপাঠের গপ্পো’ নয়, সমাজের জাতপাতের কথা তাঁর দ্বিতীয় ছবিতে তুলে ধরতে চলেছেন।
পরিচালকের উপলব্ধি, “আপনি-আমি শহরে অনেক নিরাপদ। সেখানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি শিশু হয়তো এখনও জাতপাতের বেড়াজালে আটকে। জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তার!” এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় ছবি। ‘চণ্ডী কথা’য় উঠে আসবে সমাজের বর্বরতা। যেখানে দুই কিশোর কিছু ভয়ঙ্কর কুসংস্কার, উচ্চশ্রেণির নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হবে। তার পরেও তাদের পারস্পরিক নিঃস্বার্থ ভালবাসা অটুট। তাদের সেই বন্ধুত্ব সমাজের তৈরি করে দেওয়া কুসংস্কার এবং বিভাজনকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
‘সহজপাঠের গপ্পো’র সেটে পরিচালকের কোলে দুই শিশু শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত।
দ্বিতীয় ছবিতেও পরিচালক আস্থা রাখছেন তাঁর প্রথম ছবির দুই ‘তুরুপের তাস’ সামিউল আলম, নূর ইসলামের উপরে। তিনি বলেন, “এ ছাড়াও, থাকবেন একদল নতুন মানুষ। যাঁরা আমার ছবির হাত ধরে অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন।” মানসমুকুল আরও জানান, পঞ্চাশের দশকে মুর্শিদাবাদ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের দুই কিশোর। মুচি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সামিউল আলম। তার একমাত্র বন্ধু নূর ইসলাম ডোম সম্প্রদায়ের।
তা হলে কি আরও একটি ‘দোস্তোজী’? আরও এক নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের গল্প উঠে আসবে পর্দায়?
“কোনও ভাবেই না। আমার এই গল্প বাঁকুড়া বা বীরভূমেরও হতে পারত। মুর্শিদাবাদের ভাষা আমার ভাল লাগে। ছবিতে ওই বিশেষ ভাষাকে ধরে রাখব বলেই ছবির পটভূমিকায় এই অঞ্চল”, বলেন পরিচালক। ছবির সিংহভাগ শুটিং হবে সেখানেই। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষে, ডিসেম্বরে শুটিং শুরু করবেন মানসমুকুল।
ন’বছরে টলিউড অনেক বদলেছে। বদলেছে শুটিংয়ের ধারাও। মানসমুকুলও কি বদলে গিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক বলেন, “জানি, ৯ বছরে ইন্ডাস্ট্রি অনেক বদলেছে। বদলেছে দুনিয়া, পরিস্থিতি। এই ক’বছরে আমি কিন্তু বদলাইনি। আগের মতোই সংবেদনশীল। সেই জন্যই আমি আরও একটি স্পর্শকাতর বিষয় পর্দায় তুলে ধরতে চলেছি।”