Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেব-দেবী... আবার

শেষ ছবি চার বছর আগে। তার পর মান, অভিমান, বিচ্ছেদ। সব ভুলে আবার পর্দায় ফিরছেন দেব-শুভশ্রী। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছবি ‘ধূমকেতু’তে। চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তনের কাহিনি লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়শেষ ছবি চার বছর আগে। তার পর মান, অভিমান, বিচ্ছেদ। সব ভুলে আবার পর্দায় ফিরছেন দেব-শুভশ্রী। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছবি ‘ধূমকেতু’তে। চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তনের কাহিনি আনন্দplus-এ

ছবি: ইন্দ্রনীল রায়।

ছবি: ইন্দ্রনীল রায়।

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

খবরটা শুনে অনেকের ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’ হতে বাধ্য।

কোনও কোনও নায়ক তো এটাকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবেও নেবেন।

আর দু’জনের লক্ষ লক্ষ ফ্যানের কাছে এটা পুজোর আগে ‘শুভ’র সঙ্গে তাদের ‘খোকাবাবু’র প্রত্যাবর্তন।

হ্যাঁ, প্রায় চার বছর পর ফিরে আসছেন দেব এবং শুভশ্রী। একসঙ্গে কাজ করার কথা চলছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু গতকাল দুপুরে যখন আনন্দplus-এর জন্য স্পেশাল ফোটোশ্যুট করতে দেবের সাউথ সিটি-র পুরনো ফ্ল্যাটে এলেন তিনি, তখনই যেন খবরটা কনফার্মড হল। একসঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। ছবি তুলবেন বলে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে তাঁকে চার নম্বর টাওয়ারের ছাদেও নিয়ে গেলেন দেব। এক্সক্লুসিভ প্রচ্ছদ কাহিনির জন্য পোজ দিলেন। এমনকী সেলফিও তুললেন দু’জনে।

আর একটা কাকতালীয় ঘটনাও ঘটল। ছবি তুলেই গাড়ি নিয়ে বিউটি পার্লার ওপেন করতে গেলেন শুভশ্রী। বিউটি পার্লারটা কোথায়? দেবের লোকসভা কেন্দ্র ঘাটালে।

ঘাটাল যাওয়াটা কাকতালীয় হলেও, একসঙ্গে কাস্টিংটা তো আর অ্যাক্সিডেন্ট নয়। কে করলেন এমন অসাধ্যসাধন? করলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পরের ছবি ‘ধূমকেতু’‌তেই হতে চলেছে দেব-দেবীর কামব্যাক। শ্যুটিং শুরু পুজোর আগে। ছবির প্রযোজনা করছেন দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার রানা সরকার।

কাস্টিং যদি হয় এই ছবির অন্যতম চমক, তা হলে দ্বিতীয় চমক অবশ্যই প্রযোজক হিসেবে দেব-এর ডেব্যু। এই প্রথম কোনও ছবির প্রযোজনা করছেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ। ‘ধূমকেতু’র ওপেনিং ক্রেডিটে প্রথমবার দর্শক দেখতে পাবেন ‘দেব এন্টারটেনমেন্ট প্রোডাকশনস’‌য়ের টাইটেল কার্ড।

কিন্তু সেটা পরের কথা। কী এমন হল এর মধ্যে যে, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার কামব্যাকের মতোই দ্বিতীয় এত বড় ‘কাস্টিং ক্যু’ করে ফেলল ‘টিম ধূমকেতু’?

‘‘সে রকম কিছু ভেবে কিন্তু আমরা এগোইনি। ছবির পরিচালক কৌশিকদা এবং রানা সরকার— দু’জনেরই মনে হয়েছে এই রোলটার জন্য শুভশ্রী সবচেয়ে উপযুক্ত। ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার কোনও অসুবিধা আছে কি না। আমি সঙ্গে সঙ্গেই জানাই, আই হ্যাভ নো প্রবলেমস,’’ গতকাল সকালে বলছিলেন দেব। দেবের বাড়িতে বসে প্রায় একই কথা বললেন শুভশ্রীও।

‘‘আমি এই ছবিটা করছি কারণ গল্পটা দুর্দান্ত। এত ভাল স্ক্রিপ্ট আমি খুব কম পড়েছি। কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করাটা স্বপ্নের। আর দেবের সঙ্গে কোনও ঝামেলা নেই আমার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তো মানুষ পাল্টায়। দু’জনে মন দিয়ে শুধু ছবিটা করতে চাই,’’ বলছিলেন শুভশ্রী।

‘ধূমকেতু’ তো তাঁর কাছেও একটা কামব্যাক। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন শুভশ্রী? ‘‘এখানে যে ছবির অফার পাচ্ছিলাম সেগুলোর স্ক্রিপ্ট পছন্দ হচ্ছিল না। ‘জামাই ৪২০’ অফার করা হয়েছিল। রানা সরকারের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’‌ও অফার করা হয়েছিল। আর যদি কামব্যাক করতেই হত, তা হলে এমন একটা ছবির দরকার ছিল যা নিয়ে ধামাকা হবে চারিদিকে। কৌশিকদার ‘ধূমকেতু’ সেই ছবিটা,’’ বলছেন ‘দেবী’।

এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন শনিবার মিটিংয়ের পরই চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ‘টিম ধূমকেতু’। এমনকী ফোটোশ্যুটের লোকেশন ঠিক হয় গতকাল সকাল দশটায় যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়।

শুভশ্রীর সঙ্গে দেবের শেষ ছবি ‘খোকা ৪২০'। এর মধ্যে প্রচুর নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে তাঁদের সম্পর্ক ভাঙা নিয়ে। এই ছবির কাস্টিংয়ে সেই ‘অতীত’টা কি চিন্তায় ফেলেনি দেবকে?

‘‘শুভ আর আমার শেয ছবি অনেক দিন আগের ঘটনা। মাঝখানে অনেক কিছু ঘটে যায়। কিন্তু লক্ষ করে দেখবেন, না আনন্দplus-এ, না অন্য কোনও কাগজে আমি শুভ সম্পর্কে কোনও দিন খারাপ কথা বলিনি,’’ রবিবার দুপুরে বলছিলেন দেব।

তার পর নিজেই যোগ করেন, ‘‘যা হয়েছিল, সে দিকে আর আমরা দু’জন কেউই ফিরে তাকাতে চাই না। আমার বিশ্বাস সেটে কোনও অস্বস্তি হবে না। শুভ আর আমি দু’জনেই পেশাদার, নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে সিনেমা থেকে আলাদা করতে আমরা জানি,’’ সাফ জানাচ্ছেন ‘খোকাবাবু’।

এই ছবিতে তো দেব প্রযোজকও। এটা তো তাঁর কাছেও নতুন ইনিংস।

‘‘‘ধূমকেতু’তে আমি কোনও রেমুনারেশন নিচ্ছি না। তার কারণ, গল্পটা এত অসাধারণ যে আমি চাই লোকে ছবিটা দেখুক। আমি রেমুনারেশন নিলে ছবির বাজেট বেড়ে যেত। এই সময় নিজের রেমুনারেশন নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে হবে, শুধু নিজেরটা ভাবলে চলবে না। আর অনেক কিছু তো পেয়েছি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। এ বার কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে,’’ অকপটে বলেন দেব।

দেব-শুভশ্রী—এই জুটির এত জনপ্রিয়তা যে ছবিগুলো থেকে, সেই বৃত্ত থেকে অনেকটাই দূরে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মৌলিক ছবির পৃথিবীটা। তা ছাড়া এই প্রথম কৌশিক তাঁর নিজের চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে বাণিজ্যিক ছবির ‘হিরো-হিরোইন’‌য়ের সঙ্গে কাজ করছেন। হঠাৎ দেব-শুভশ্রীকে কাস্ট করাটা কি নতুন স্ট্র্যাটেজি? ‘‘নতুন তো বটেই। আমার কাছে এটা দ্বিতীয় যৌবনের মতো। আমার মনে হয়েছে, এ বার নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানানো উচিত,’’ বলেন কৌশিক।

কিন্তু তাঁর শহুরে দর্শক তো একটু হলেও তাঁর এই স্ট্র্যাটেজি বদল দেখে আশ্চর্য হবেন। তাঁদেরকে কী বলবেন?

‘‘দর্শকদের আশ্বস্ত করতে চাই এটা বলে যে, দেব-শুভশ্রী থাকলেও এই ছবিতে তাঁরা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবির মননটাই দেখতে পাবেন। পাশাপাশি দেব-শুভশ্রীর দর্শকও নতুন করে চিনবেন ওদের,’’ বলছিলেন পরিচালক।

কথায় কথায় তিনি এটাও জানান, ‘‘দেবের সঙ্গে শুভশ্রীর কাস্টিংটা অনেক দিন পর একটা আলাদা এক্সাইটমেন্ট আনবে ইন্ডাস্ট্রিতে এবং ওদের ফ্যানদের কাছেও। আমার বিশ্বাস সবাই মিলে যদি আমাদের ষাট শতাংশও দিই, তা হলেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি হয়ে উঠবে ‘ধূমকেতু’।’’

কিন্তু মাঝখানে দেবের সঙ্গে শুভশ্রীর যে একটা তিক্ততা ছিল সেটা তো ইন্ডাস্ট্রির ‘ওপেন সিক্রেট’। কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এই তিক্ততা কখনও আপনাকে...

কথা শেষ হওয়ার আগেই কৌশিক বলে ওঠেন, ‘‘একদম চিন্তায় ফেলেনি। তবে এ ক্ষেত্রে আমি আমার প্রযোজক রানা সরকারের কথা বলব। রানা ছাড়া এই কাস্টিং সম্ভব হত না। এই ছবিতে আমি হিরো-হিরোইন চাই না, চাই অভিনেতা-অভিনেত্রী। পরিচালক হিসেবে ওদের কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’’

কিন্তু শুভশ্রীর সঙ্গে তাঁর এই কামব্যাক। সঙ্গে নৈনিতাল আর সিকিমের লম্বা আউটডোর। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে কী রিঅ্যাকশন দেবের গার্লফ্রেন্ড রুক্মিণী মৈত্রর?

প্রশ্নটা শুনে হেসেই ফেলেন দেব। হাসতে হাসতেই বলেন, ‘‘গার্লফ্রেন্ড তো মিডিয়া বলছে। আনন্দplus বলছে। আমি তো কোনও দিন বলিনি। শুধু এটুকু বলব কেউ যদি আমাকে প্রথম শুভশ্রীর সঙ্গে কাজ করতে বলে সেটা রুক্মিণী। ও আমাকে এটাও বলেছে আমরা যেন বাচ্চাদের মতো ঝগড়া না করে, মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং মিটিয়ে আবার একসঙ্গে ছবি করি। ও এটাও মনে করে, উই লুক ব্রিলিয়ান্ট অন স্ক্রিন। সুতরাং কাস্টিং নিয়ে রুক্মিণীর সঙ্গে কোনও টেনশন নেই।’’

এই রকম একটা ‘কাস্টিং ক্যু’য়ের পর কী বলছেন প্রযোজক রানা সরকার?

“আমি সব সময়ই কাস্টিংয়ে নতুনত্ব আনার পক্ষপাতী। দেব-শুভশ্রী দু’জনেই পেশাদার। আর কৌশিকদার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। এটুকু বলতে পারি, ‘ধূমকেতু’ যে পরের বছরের খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটি ছবি হয়ে উঠবে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত,” বলছেন রানা।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, দেব-শুভশ্রীর এই কাস্টিং যে টালিগঞ্জের অনেক সমীকরণ বদলে দিতে বাধ্য সেটা এখনই জলের মতো পরিষ্কার। এ যেন পুজোর আগে নতুন ‘দেব-দেবী’।

কৌশিকের ‘দেব-দেবী’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE