তিনি কি এখন বাংলা ছবির ‘হিট মেকার’! টলিপাড়ার তাবড় পরিচালকরা ধরাশায়ী হয়েছেন বলেই এই গুঞ্জন। যদিও তিনি পরিচালক নাকি অভিনেতা— তা নিয়ে এখনও দ্বন্দ্ব রয়েছে দর্শক মনে। বাংলা বাণিজ্যিক ছবির বাজারে সফল ফ্রাঞ্চাইজ়ি ‘দ্য একেন’-এর তিন নম্বর ছবি ‘বেনারসে বিভীষিকা’, মুক্তি পেয়েছিল গরমের ছুটিতে। এই একটি ছবিই বক্স অফিসে তারকাখচিত পরিচালকদের ছবিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তৃতীয় সপ্তাহেও প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল। তিনি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, দীর্ঘ কেরিয়ার। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ বাধ্য ছাত্রের মতো কথা শুনতেন তাঁর। আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি পরিচালক।
প্রশ্ন: একেন বাবু কি একাই এই মুহূর্তে বক্স অফিস টানছে?
জয়দীপ: সেটা বলাই যায়, নিজের মধ্যে ভাললাগার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরাই বলছিলাম, দর্শকেরা নাকি প্রেক্ষাগৃহে আসেন না আজকাল! একেন আসার পর কিন্তু সেই ভুলটা ভেঙে গিয়েছে। দর্শকদের মনের মতো কোনও গল্প দিতে পারলে তাঁরা হল ভরিয়ে দেন, এটা সত্যি। তার মানে এই নয় যে আমি বলছি একেন-ই সর্বশ্রেষ্ঠ। আসলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসার জন্য প্রস্তুত। আমাদের ঠিকঠাক পণ্যটি হাতে তুলে দিতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলা ছবির বাজারে একটা সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি দাঁড় করাতে পেরে খানিক নিশ্চিন্ত লাগছে?
জয়দীপ: না, নিশ্চিন্ত বোধ করার কোনও জায়গায় নেই। যখন কোনও জিনিস দর্শকের ভাল লেগে যায়, তখন দায়িত্বও বেড়ে যায়। মানুষের মনে একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে— একেন কখনও নিরাশ করে না। সেটা অবশ্যই একটা দায়িত্ব।
প্রশ্ন: এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অনেকগুলি সিরিজ় রয়েছে, আবার সিনেমা হয়েছে, দর্শকেরা কি এতে খানিক বিভ্রান্ত হন না?
জয়দীপ: না বিভ্রান্তি নয়, তবে একেন-এর ছবির ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই জানতে চান এটা হইচই-তে কবে দেখতে পাবেন! অনেকেই ফোনের সিরিজ় দেখতে অভ্যস্ত তাই মনে করেন ওটিটি-তেই মনে হয় আগে আসবে। কিন্ত সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর এটা প্রমাণ হয়ে গেল যে, দু’টি মাধ্যমেই এটা দেখতে ভালবাসেন দর্শক।
প্রশ্ন: একেনবাবুর সঙ্গে জটায়ুর অবয়বের এত মিল, সেটা কি ভেবেচিন্তেই করা?
জয়দীপ: একেন যখন শুরু হয়, তখন কিন্তু আমি ছিলাম না। অন্য পরিচালকের হাতে একেন-এর সূচনা। সেখানে যাঁরা কাজ করেছিলেন, অনেকেই এখন আর এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু একেনের কথা বলার ধরন, ভুল প্রবাদ বলা, কখনও বিশ্রী মজা করা— সে সব পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ও সুজন দাশগুপ্ত মিলে ঠিক করেছিলেন। আমি চতুর্থ সিজ়ন থেকে ঢুকেছি। একটা সময়ের পর থেকে একেনকে যেন যাপনে পেয়েছি। তার পর অনির্বাণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ওঁরও একেনকে নিয়ে নিজস্ব ভাবনা চিন্তা ছিল। এটা বলাই যায় একেনের বর্তমান আকার আসলে আমার, অনির্বাণ আর পদ্মনাভর মস্তিষ্ক থেকেই রূপ পেয়েছে।
প্রশ্ন: গত তিন মাসে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছবিকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে একেন, পরিসংখ্যান তেমনই বলছে। এ বার প্রতিযোগিতা জোরদার হবে?
জয়দীপ: (খানিক হেসে) এই প্রতিযোগিতাটা থাকা ভাল। আমার ছবি ভাল, না কি অন্যের ছবি বেশি ভাল, এই সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা দরকার।
প্রশ্ন: বক্স অফিসে রেষারেষির তো উত্তাপ আছে সেট টের পাচ্ছেন?
জয়দীপ: রেষারেষি নিয়ে ভাবি না। কী করলে ছবিটা আরও ভাল হত, সেটাই ভাবি। আর ভাবি, কী দিতে পারলাম না। আমাদের খুব সীমিত সময়ের মধ্যে কাজ সারতে হয়। তাই ছবি মুক্তির পর অনেক সময়ই মনে হয় আর একটু রিসোর্স পেলে ছবিটা হয়তো আর একটু ভাল হত।
প্রশ্ন: একেন চরিত্রে কি অনির্বাণ চক্রবর্তীর বিকল্পহীন?
জয়দীপ: অনির্বাণ ছাড়া অন্য কাউকে একেন ভাবা সম্ভব নয়। আমি যখন এই ছবি করতে শুরু করি, তখন একেনের দুই বন্ধু বাপি আর প্রমথ বদল হয়েছে। কিন্তু একেনকে বদলানোর কথা ভাবতেই পারি না।
প্রশ্ন: আপনার করা সিরিজ় ওটিটিতে সফল, সিনেমা বক্স অফিসে সফল। তবু পরিচালক হিসেবে সেই মাতামাতি দেখা যায় না?
জয়দীপ: একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি হিট করা মানেই যে নিজেকে বিরাট কিছু ভাবতে হবে, এমনটা নয়। কে কোন তকমা দেবে, সেটা নিয়েও ভাবি না। আমি নিজের কাজটা করি। কখনও সেই কাজের ফল পাওয়া যায়। আবার কখনও ফল মেলে না।
আমি কোনও প্রতিযোগিতায় যেমন নেই, তেমনই কেউ আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামুন, সেটাও চাই না। আমার মনে হয়, বাংলা ছবি দর্শক দেখুক। ছবির মেধা অনুযায়ী তার ভাল বা খারাপ বিচার হোক।
প্রশ্ন: ছবির প্রচার বেশি হলে সুবিধা হয়, নাকি কম প্রচারেরও হিট করানো যায়?
জয়দীপ: অবশ্যই ছবির যত প্রচার হবে ততই ভাল। আমি খুব বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না, জনসংযোগ ভাল নয়। তাই ছবির প্রচার কী ভাবে করতে হয় সেটা খুব একটা শিখে উঠতে পারিনি। এটা আমারই ব্যর্থতা।
প্রশ্ন: যাঁরা প্রচারে সিদ্ধহস্ত সেই সব পরিচালকদের থেকে কখনও কোনও টিপস্ নিয়েছেন?
জয়দীপ: না, তেমন কোনও টিপস্ নিইনি কখনও। নিলে আগেই নিতে পারতাম, এখন আর টিপ্স নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
প্রশ্ন: একেন-কে সকলেই চেনেন, কিন্তু পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে অনেকেই চেনেন না। বরং দর্শক আপনাকে অভিনেতা হিসেবেই বেশি চেনেন?
জয়দীপ: আসলে দর্শক আমাকে অভিনেতা হিসেবে বেশি দেখেন। ২০১৭ সাল থেকে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি করেছি, শাকিব খানকে নিয়ে তৈরি অনেক ছবিই বাংলাদেশে হিট্। কলকাতায় ততটা প্রচার পেলে আজকে অন্য রকম হতো চিত্রটা। ‘এফআইআর’ ছবিটা যখন করলাম তখন অতিমারি চলছে। পরে অনেকেই বলেছেন ছবিটা ভাল। কিন্তু যখন সময় ছিল তখন ছবিটা চলেনি। কিন্তু আমি আমার কাজ করে গিয়েছে। তবে হ্যাঁ যতটা পরিচিতি পাওয়ার কথা ছিল ততটা পাওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: আক্ষেপ হয় না?
জয়দীপ: নাহ্, আক্ষেপ করে লাভ নেই। যখন যেটা হওয়ার সেটা হবে। জীবনে আমি কোনও বিষয় নিয়ে বিরক্ত নই। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবতে পারি। আমি মনে করি, সাফল্য কারও তাড়াতাড়ি আসে, কারও দেরি হয়। আমি সেই দলের মধ্যে পড়ি, যাঁরা কাজ করে কিন্তু প্রচার নিয়ে মাথাব্যথা নেই। একেন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু পরিচালককে নিয়ে কথা হয়নি।
প্রশ্ন: দীর্ঘ কেরিয়ারে বিজ্ঞাপন থেকে থিয়েটার, টেলিভিশনে থেকে সিনেমা সবই রয়েছে, এত বছরে কী বদল দেখলেন?
জয়দীপ: ২০০০ সাল থেকে টেলিভিশনে কাজ করছি। ফাল্গুনী স্যান্যাল, দেবাংশু সেনগুপ্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করেছি। পরবর্তী কালে প্রভাত রায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। সেই সময় পরিচালকেরা আমাদের ভরসা করতেন। এখন যাঁরা ধারাবাহিক কিংবা সিনেমায় কাজ করছেন তাঁদের সেই ইচ্ছেটা নেই পরিচালক হওয়ার। আমি সহকারী পরিচালক থেকে চিফ এডি হয়েছি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। কৌশিকদা ফ্লোরে রয়েছেন, তবু আমি সবটা সামলেছি, এমনও হয়েছে। কৌশিকদার ‘ব্রেক ফেল’ ছবিটার পুরো সিন কোরিওগ্রাফি আমার করা। দাদা শুধু মনিটারে বসে থাকতেন। তত দিনে কৌশিকদা সেই ভরসাটা আমাকে করতে শুরু করেছেন, ‘জয়দীপ ভুল করবে না’।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের বদল কি করোনা পরবর্তী সময় লক্ষ্য করছেন?
জয়দীপ: হ্যাঁ, অতিমারির পর তো সকলেই একটা ধোঁয়াশায় ছিলাম। সিনেমা কিংবা ধারাবাহিক কত দিন চলবে তা নিয়ে ধন্দ ছিল। মানুষ ওটিটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ কি না জানি না। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা বলে শিল্প চেতনা তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে না।
প্রশ্ন: এমনিতেই বলা বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নায়ক নেই, তবে কি পরিচালকদের ভাঁড়ারেও টান পড়বে?
জয়দীপ: হ্যাঁ নায়কের তো অভাব রয়েছে। তবে পরিচালকদের ভাঁড়ারে টান সেটা বলার জায়গা আসেনি কারণ আমি নতুন প্রজন্মের পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়, সৌরভ পালোধিদের নিয়ে আশাবাদী।
প্রশ্ন: আপনারা এক সময় ধারাবাহিক পরিচালনা করেছেন। সেই সময়ের সঙ্গে এই সময়ের নাকি বিস্তর ফারাক! শহরে নাকি কেউ ধারাবাহিক দেখেন না এখন?
জয়দীপ: টিভি হোক কিংবা সিনেমা— পরিচালকই ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’। ধারাবাহিকেও কিন্তু গল্পের খুব বড়
ভূমিকা রয়েছে। আর সেটারই অভাব দেখা দিচ্ছে। একের পর এক ধারাবাহিক গতানুগতিক
গল্প দেখিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বড় অস্বস্তির জায়গা হল, এখন টেলিভিশনের কর্তাব্যক্তিরা
পরিচালকের ঘাড়ের উপর উঠে নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: পরিচালকের স্বাধীনতা কি সর্বত্র খর্ব করা হচ্ছে?
জয়দীপ: কিয়দাংশে এটা সত্যি। পরিচালককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের সময় চ্যানেলে বড় বড় সব কার্যনির্বাহী প্রযোজকেরা ছিলেন। কিন্তু পরিচালকের স্বাধীনতায় হাত দিতেন না তাঁরা। পরিচালকের উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হত না। চারজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। কিন্তু সেই মতান্তরকে তো কোনও না কোনও ভাবে এক ছাতার তলায় আনতে হবে! না হলে সবই জগাখিচুড়ি হয়ে যাবে। বাস্তবে সেটাই হচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলায় কি নায়ক-নায়িকার অভাব দেখা যাচ্ছে?
জয়দীপ: যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে বাণিজ্যিক ছবি তৈরি না হওয়া বিস্তর চিন্তার বিষয়। আজ একেন বড় ব্যবসা দিচ্ছে। কিন্তু এটা তো সে অর্থে বাণিজ্যিক ছবি নয়। এ রকম দু’একটা ছবি সাফল্য পেয়ে যায়। কিন্তু এই একই ধরনের ছবি বানিয়ে গেলে তো চলবে না। যে সব ছবি দেড়-দু’কোটি টাকা খরচ করে বানানো হচ্ছে, সেগুলি চলছে না।
আসলে বড় বাজেটের ছবি দরকার ইন্ডাস্ট্রিতে। যে ভাবে দক্ষিণ ভারত কাজ করে। তার জন্য প্রয়োজন নায়ক। দেব, জিৎ, অঙ্কুশ— আরও কয়েক বছর টানতে পারবেন বাংলা ছবিকে। আমি মনে করি আবীর চট্টোপাধ্যায়ের অন্য ধরনের ছবি করা উচিত। বিক্রমের উচিত বড় ক্যানভাসের ছবি করা। এদের নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। আসলে একটা সাড়ে তিন কোটি টাকা বাজেটের ছবি যখন ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য দেয়, তখন সেখান থেকে আর একটা ছোট ছবি হয়ে যায়।
প্রশ্ন: দক্ষিণী চলচ্চিত্র জগতে ১০০ কোটি বাজেটের ছবি আকছার দেখা যায়, বাংলায় কবে এমন হবে?
জয়দীপ: দক্ষিণের দর্শক যে ভাবে তাঁদের ছবিকে যাপন করেন, আমরা বাঙালিরা সেটা করি না। বাঙালিদের নিজের ভাষার প্রতি দরদটা দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো নয়। এখানে ‘কেজিএফ’-এর হিন্দি ডাবিং দারুণ চলেছে। ওখানকার দর্শক প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবি মোটেও দেখবে না। ওদের ছবি দেখার ধরনটা আমাদের থেকে একেবারে আলাদা। তাই বলিউডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে দক্ষিণ। এমনিতেই বাঙালিরা বাংলা ভাষা ভুলতে শুরু করেছে। তাঁরা ইংরাজী, হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ্য। নিজের ভাষার প্রতি আবেগ না থাকলে সেই ভাষার ছবি চালানোও বেশ কষ্টকর।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের একটা অংশ জুড়ে রয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, কী শিখেছেন ওঁর থেকে?
জয়দীপ: কী করে একটি সেট-কে জীবন্ত করে তুলতে হয়, মনে হয় সেটাই সব থেকে বেশি শিখেছি। একটি সেট-কে চোখের নিমেষে বাড়ি তৈরি করে দিতে পারত। আর শিখেছি রূপটান। কতটা কাজল দিলে একজন মহিলার চোখ সুন্দর লাগতে পারে, সেটা ঋতুদার থেকে শেখা।
প্রশ্ন: কী ভাবে আপনাদের পরিচয়?
জয়দীপ: ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকের সময় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন ঋতুদা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। তত দিনে ঋতুদার ধারাবাহিকের ২৪-২৫টা পর্ব লেখা শেষ। ঋতুদার মাথায় পাগড়ি, পরনে কালো পোশাক— আমাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন চিত্রনাট্য কেমন লাগল? আমি শুনেছিলাম সবাইকে নাকি বকাবকি করেন ঠিক ঠিক উত্তর না পেলে। কিন্তু আমার যে হেতু হারানোর ভয় ছিল না তাই বলেছিলাম, এটা কেমন ‘শুভ মহরত’ ও ‘উৎসব’ মেশানো একটা জিনিস। একবাক্য বলেন, ‘‘একদম ঠিক বলেছিস।’’ আমরা পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেছিলাম, তোমার লেখা দৃশ্যগুলো বড়। আর একটু ছোট হলে ভাল হয়। কারণ টেলিভিশনের দর্শকের ধরনটা আলদা। যদিও ঋতুদা বলে দিলেন, দৃশ্য ছোট করতে পারবেন না। কিন্তু ধারাবাহিক শুরু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে টিআরপি এল ১.৯। এতটাই কম যে আবার মিটিংয়ে বসা হল। তার পর থেকে ঋতুদা ভোর ৫টায় আমাকে ফোন করতেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘‘রোজ এই সময় ফোন করে তোকে সিন নম্বর বলব। আমি ক’পাতা লিখব তুই আমাকে বলে দিবি।’’ প্রথম ২৫টা ছাড়া বাকি সব ক’টা চিত্রনাট্য আমি যে ক’টা পাতা বলতাম ততটাই লিখতেন। পুরো ছাত্রের মতো কথা শুনতেন।
প্রশ্ন: মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন?
জয়দীপ: ভীষণ রকম সংবেদনশীল। উনি আসলে চাইতেন সকলে ওর ভিতরের মানুষটাকে বুঝুক। একদম ছেলেমানুষ ছিলেন। সেটার জন্যই নানা কিছু ভাবতে পারতেন। বাংলা ভাষাকে ভালবাসতেন। ঋতুদার পর কৌশিকদা পর্যন্ত বাংলা ভাষাটা নিয়ে পরিচালকরা ভাবতেন। তার পর থেকে সব যেন ঘেঁটে গেল।
প্রশ্ন: ফেডারশনের সঙ্গে পরিচালকদের সংঘাত— এমনটা আগে দেখা যায়নি। ফেডারশন কি বাংলা সিনেমার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন?
জয়দীপ: ফেডারেশন এমন একটা জায়গা যেখানে টেকিনিশিয়নরা তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন। একটা ছাতার মতো। টেকনিশিয়নদের স্বাস্থ্য থেকে তাঁদের সম্মানের দায়িত্ব নিয়েছে ফেডারশন। তাই ফেডারেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে একজন পরিচালকের ছবি নিয়ে। আমাদের একটাই দাবি ছিল, কাজ বন্ধ হওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: ফেডারেশনকে সমঝে চলাটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ?
জয়দীপ: অনেকেরই মনে হতে পারে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে— তবে আমরা বিষয়টা দেখছি একটা সংসারে থাকলে মনোমালিন্য হয়েই থাকে। এই বিষয়টি সে ভাবে দেখাই ভাল। কাজ করতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে নিজেদের মধ্যে কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি হিট করতে গেলে সব থেকে সহজ পথ গোয়েন্দা গল্প?
জয়দীপ: হ্যাঁ এই সময় দাঁড়িয়ে সেটা বলাই যায়। ঠিক ভাবে যদি গল্পটা বানানো যায় তা হলে গোয়েন্দা গল্পের মার নেই। কারণ বাঙালি ভালবাসে গোয়েন্দা গল্প দেখতে। লোকে গালমন্দ করতে পারে। কিন্তু বার বার কি গোয়েন্দা গল্প করে হল ভরবে?
প্রশ্ন: রাজস্থান, বেনারস তো ঘোরা হল এ বার একেনের গন্তব্য কোথায়?
জয়দীপ: আমরা পরিচালকরা তো গল্প নিয়ে যেতে পারি প্রযোজকদের কাছে। তার পর থাকে বাজেটের ব্যাপার। তবে ইচ্ছে আছে সব ঠিক থাকলে একেন রাশিয়া যেতে পারে।