Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘আমার জন্মদিনেই চলে গিয়েছিল ঋতুকাকু’

ঋতুপর্ণ ঘোষ। নামটা বললেই এক একজন এক একটা স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসবেন। তিন বছর আগে আজকের দিনেই তাঁকে শেষ বিদায় জানিয়েছিল শহর কলকাতা। কারও কাছে তিনি বন্ধু, কারও অভিভাবক, কারও বা গাইড। কিন্তু, সেই ক্লাস থ্রি-র ছেলেটা? ঋতুপর্ণের ‘খেলা’র নালক? ওরফে অভিরূপ। ওরফে আকাশনীল দত্ত মুখোপাধ্যায়। আজ তিনি সেন্টজেভিয়ার্সের স্ট্যাটিস্টিক্স অনার্সের ছাত্র। ‘খেলা’তে খেলতে খেলতেই এক অচেনা ঋতুকাকুকে খুঁজে পাওয়ার গল্প শেয়ার করলেন আকাশনীল। জানালেন, কেন জন্মদিনে তাঁর মনখারাপের সঙ্গী সেই ঋতুকাকু। সে দিন সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। জন্মদিন বলে কথা। তার ওপরে ক’দিন আগেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বেশ সেলিব্রেশনের মুডেই ছিলাম। প্রথম ফোনটা এল মা’র কাছে। আমি তখনও বিছানা ছাড়িনি। মায়ের গলার আওয়াজেই লাফিয়ে উঠলাম। টিভিতে তখন ব্রেকিং ‘পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রয়াত।’

আকাশনীল দত্ত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ১৩:১২
Share: Save:

সে দিন সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। জন্মদিন বলে কথা। তার ওপরে ক’দিন আগেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বেশ সেলিব্রেশনের মুডেই ছিলাম। প্রথম ফোনটা এল মা’র কাছে। আমি তখনও বিছানা ছাড়িনি। মায়ের গলার আওয়াজেই লাফিয়ে উঠলাম। টিভিতে তখন ব্রেকিং ‘পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রয়াত।’

২০১৩-র ৩০ মে আমার জন্মদিনটা এক লহমায় বদলে গিয়েছিল। সে দিন থেকে প্রতি বছর আমার জন্মদিনটায় জড়িয়ে থাকে একরাশ মনখারাপ।

ঋতুকাকুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ক্লাস থ্রি-তে। ‘খেলা’-র শুটিংয়ে প্রায় একমাস চালসায় আউটডোরে ছিলাম। সে সময়েই অত কাছ থেকে পাওয়া। তবে তখন তো এত কিছু বুঝতাম না। কে ঋতুপর্ণ ঘোষ, কার সঙ্গে কাজ করছি— সে সব বোঝার বয়সও ছিল না। তখন আট বছরের ছেলে আমি। মনে আছে, চালসায় নেমেই ক্রিকেট ব্যাট কিনে নিয়েছিলাম। তার পর ওখানে বুম্বাকাকুর সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলাটাই ছিল আমার একমাত্র ইন্টারেস্ট।

একটা মজার কথা মনে পড়ছে। শুটিংয়ের মধ্যেই আমরা তো ক্রিকেটে মশগুল। এ দিকে শট রেডি। কারও খেয়াল নেই। হঠাত্ ঋতুকাকু এসে বল নিয়ে চলে গেল। আর আমরাও পেছন পেছন ‘বল দাও বল দাও’ বলতে বলতে ছুটলাম। তখন ঋতুকাকু বলল, ‘তাড়াতাড়ি শুটিং করে নিলে খেলতে দেব।’ ব্যস। ওই খেলার লোভেই শুটিং শেষ! এ রকমটা প্রায়ই হত। আমি তো যেতামই, বুম্বাকাকুও বল চাইতে যেত আমার সঙ্গে।


‘খেলা’-র সেটে রাইমা সেনের সঙ্গে আকাশনীল।

ওই বয়সে ঋতুকাকু প্রথমে ছিল আমার বন্ধু, তার পর আমার ডিরেক্টর। আমাকে খুব সহজ করে শট বুঝিয়ে দিত। ছোট ছোট ডায়লগ ছিল আমার। ও রকম ডিসিপ্লিন খুব কম মানুষের মধ্যেই আমি দেখেছি। মানে ধরুন, ওই বেডশিটটা লাগবে তো ওটাই লাগবে। ওই পর্দাটা এতটাই টানা থাকতে হবে। ওই কম্বলটা উল্টোনো থাকলে চলবে না। মানে ডিটেলিংটা এতটাই পারফেক্ট ছিল।

আসলে ঋতুকাকু আমার মতো করে আমার কথাটা বুঝত। একটা স্পেশাল মোমেন্ট যেমন আমি মিস করি খুব। সিনেমায় তো আমাকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। দৃশ্যটা এমন ছিল, যে ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে আমি রেগে গিয়েছি। বাস্তবে আমি রেগে না গেলেও আমার বেশ খারাপ লেগেছিল। শুটিংয়ের প্রায় তিন বছর পর সিনেমাটা রিলিজ করেছিল। তার মধ্যে ঋতুকাকুও ন্যাড়া হয়েছিল। সে সময় মিউজিক ভিডিও লঞ্চে ঋতুকাকু বলেছিল, ‘‘আমি যদি শুটিংয়ের সময় ন্যাড়া হয়ে যেতাম, তা হলে আকাশ হয়তো একটু কম কষ্ট পেত।’’ আমি তখন ক্লাস সিক্স। সকলের সামনে একটু লজ্জা পেয়েছিলাম। তবে ভালও লেগেছিল খুব। মনে হয়েছিল, আমার কথা এ ভাবে ভেবেছে ঋতুকাকু!

আজ আমার আরও একটা জন্মদিন। ফেসবুক, হোয়াট্অ্যাপে প্রচুর উইশ পাচ্ছি। পরীক্ষার পর এখন তো ছুটি চলছে। দিনরাত ফুটবল খেলছি। মানে সেই সেলিব্রেশনের মেজাজ। না! মেজাজটা আর আগের মতো কখনই আসে না আমার। মন খারাপ হয়। আসলে ছবি রিলিজের পর ঋতুকাকুর সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ ছিল এমনটা নয়। তবে জন্মদিনের এই মন খারাপটা আমার আজীবনের সঙ্গী হয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE